সফিকুল ইসলাম সবুজ : হাতের নাগালে ডিজিটাল সেবার দোহাই দিয়ে ই-কমার্সের নামে প্রতারণার ফাঁদ পেতে বসেছে খ্যাত-অখ্যাত হাজারো ফেসবুক পেজ ও ওয়েবসাইটগুলো। এদের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে নামে বেনামে গজিয়ে ওঠা বিভিন্ন কুরিয়ার সার্ভিস। শুধু এগুলোই নয়, দেশের নামি কুরিয়ার সার্ভিসগুলোও এর অংশীদার। এরা শর্ত সাপেক্ষে পণ্য সরবরাহের নামে প্রতারণা করে গ্রাহকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
এই পেজ বা ওয়েবসাইটগুলো বিভিন্ন পণ্যের চটকদার ও কালারফুল বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রথমে ক্রেতাকে আকৃষ্ট করে তারপর প্রদান করে লোভনীয় অফার। তারা সাধারণত বাজার মূল্যের চেয়ে কম দামে পণ্য বিক্রির অফার দিয়ে থাকে।
রাশিদ শাহরিয়ার নামের একজন ভুক্তোভোগী জানান, তিনি ‘লেদার জোন’ নামে এক পেজে একটি লেদারের জ্যাকেটের বিজ্ঞাপন দেখে আকৃষ্ট হন এবং জ্যাকেটটি কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। পেজটির অ্যাডমিনের সঙ্গে যোগাযোগের এক পর্যায়ে তিনি ফিজিক্যালি পণ্যটি দেখে নেয়ার জন্য তাদের ঠিকানা চান। কিন্তু অ্যাডমিন ঠিকানা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন- আমরা শুধুমাত্র অনলাইন ডেলিভারি দিয়ে থাকি, ফিজিক্যালি পণ্য বিক্রি করি না।
রাশিদ শাহরিয়ার বলেন, “আমি পণ্যটি দেখে খুবই আগ্রহী হয়ে উঠেছিলাম কারণ লেদারের এই জ্যাকেটটির বাজার মূল্য ছিলো কমপক্ষে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। কিন্তু তারা আমাকে অফার করেছে মাত্র ২ হাজার ৫০০ টাকা। পরে আমি পণ্যটি অর্ডার করতে চাইলে তারা কুরিয়ার সার্ভিস ফি বাবদ আমাকে ২০০ টাকা বিকাশের মাধ্যমে পেমেন্ট করতে বলে। আমার আপত্তি থাকা সত্বেও আমি সেটা পেমেন্ট করি। পরবর্তীতে তারা আমাকে এসএ পরিবহণের মাধ্যমে পণ্যটি পাঠায়।”
তিনি বলেন, “আমি এসএ পরিবহণের অফিসে গিয়ে প্যাকেটটি খুলে দেখে নিতে চাই, কিন্তু কুরিয়ার কর্তৃপক্ষ সেটা করতে দেয়না। তারা বলে আপনাকে আগে পেমেন্ট করতে হবে তারপর খুলতে হবে। আমি বলি প্যাকেট খুলে যদি আমার কাঙ্খিত পণ্যটি না পাই তাহলে কি হবে? তাদের জবাব- সেটা আমাদের বিষয় না। আপনি না নিলে আমরা ফেরত পাঠিয়ে দিবো। আমি পরে পেমেন্ট করে প্যাকেটটি নিয়ে বাসায় চলে আসি। খুলে দেখি সেখানে আমার অর্ডার করা জ্যাকেটটি নয় বরং অত্যন্ত নিম্নমানের একটি জ্যাকেট যার বাজার মূল্য ৫০০ টাকার বেশি হবে না। আমি পরে পেজটির ইনবক্স এবং তাদের ফোনে বিষয়টি জানাই। তারা বিষয়টি দেখবে বলে আমাকে তাদের পেজ থেকে ব্লক করে দেয় এবং আমার নাম্বারটিও ব্লাকলিস্টে রেখে দেয়।”
কাজলী আক্তার নামের একজন ক্রেতা জানান, তিনি অনলাইনে এম্ব্রোয়ডারি ডিজাইন দেখে একটি থ্রি-পিসের অর্ডার করেন। কিন্তু ডেলিভারি নেয়ার পর খুলে দেখেন এম্ব্রোয়ডারি নয় সেখানে কাঁচা রংয়ের কালি দিয়ে আঁকানো।
ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যের ক্ষেত্রেতো আর কথাই নেই। ১০ হাজার টাকা মূল্যের পণ্যগুলো ৩ থেকে ৫ হাজার টাকায় বিক্রির অফার দিয়ে থাকে এই অসাধু পেজ এবং ওয়েবসাইটগুলো। সেক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের প্যাকেটে ড্যামি সেট থেকে শুরু করে ইট ও কাঠের টুকরো পাওয়ার রেকর্ডও নেহায়েত কম নয়।
পুলিশ বলছে, ই-কমার্স প্রতারণা রোধে প্রয়োজন একটি আলাদা নিয়ন্ত্রণ সংস্থা। আর ইক্যাব বলছে, ভূইফোঁড় প্রতিষ্ঠানকে আইনের আওতায় আনতে সন্মিলিত উদ্যোগের বিকল্প নেই। ভোগান্তির কথা স্বীকারও করেছেন ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ইক্যাব। প্রতারণা রোধে সন্মিলিত উদ্যোগের তাগিদ সংস্থাটির। দেশে বর্তমানে প্রায় ১৫০০ কোম্পানি ইক্যাবের তালিকাভুক্ত। এর বাইরে নামে-বেনামে শত শত প্রতিষ্ঠান প্রতিনিয়ত নানাভাবে প্রতারিত করছে গ্রাহকদের। এদের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
প্রতিদিন এমন ঘটনা অহরহ ঘটলেও অনেকটাই উদাসীন কুরিয়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ। প্রতারক চক্র ফেসবুকে শতশত ভুয়া পেইজ খুলে চালাচ্ছে প্রতারণার নানা কূটকৌশল। মাঝে মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে কেউ কেউ গ্রেপ্তার হলেও এর একটি বড় অংশ ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
সান নিউজ/এস