চেয়ারম্যানকে ফাঁসাতে ইউএনও' র নাটক
সারাদেশ
অপরাধ ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা

চেয়ারম্যানকে ফাঁসাতে ইউএনও' র নাটক

নিনা আফরিন,পটুয়াখালী : পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুজ্জামান মামুন খাঁনকে ফাঁসাতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তদন্ত নাটক সাজিয়ে রিপোর্ট জমা দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ রিপোর্ট অসত্য এবং উদ্দেশ্যপ্রনোদিত দাবী করে ১৮ সেপ্টেম্বর বিষয়টির অধিকতর তদন্ত চেয়ে জেলা প্রশাসকের নিকট আবেদন করেছেন হয়রানির শিকার চেয়ারম্যান মামুন খান।

আরও পড়ুন : মাইক্রোবাসের ধাক্কায় ঝরল ৫ প্রাণ

নিজের অপরাধ ধামাচাপা দেয়া ও স্থানীয় রাজনৈতিক দ্বন্দ্বকে পুঁজি করে মনগড়া তদন্ত রিপোর্ট দিয়ে সমালোচনায় পরেছেন রাঙ্গাবালীর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাশফাকুর রহমান। তবে তার সাথে চেয়ারম্যানের কোন দ্বন্দ নেই বলে দাবী করেছেন ইউএনও।

জেলা প্রশাসন,রাঙ্গাবালী উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় একাধিক সুত্র জানায়, নিজ কার্যালয়ের কর্মচারীকে গুলি ও মারধোর করা, হাট বাজার ইজারা দিয়ে টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে নিজের কাছে রাখা, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মান না করে বরাদ্দ আত্মসাৎ করা সহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাশফাকুর রহমানের রিরুদ্ধে। এসব অভিযোগের রেষ না কাটতেই মনগড়া একটি তদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়ে নতুন সমালোচনা জন্ম দিয়েছেন ঐ কর্মকর্তা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, চেয়ারম্যান মামুন খাঁনকে হেনস্থা করতে ২০২০ সালে জেলা প্রশাসকে নিকট ১২ জন মৃত এবং ৫১ জনের নাম দুইবার অন্তভুক্ত হয়েছে এবং তাদের বরাদ্দ আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে একটি অভিযোগ দেন স্থানীয় কয়েকজন। এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর পটুয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. হেমায়েত উদ্দিন সরেজমিন তদন্ত করে জেলা প্রশাসকের নিকট তদন্ত প্রতিবেন দাখিল করেন। তদন্ত রিপোর্টে তিনি এ অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি এবং চেয়ারম্যানকে হেনস্থার জন্য করা হয়েছে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন।

আরও পড়ুন : পেট্রল স্টেশনে বিস্ফোরণে নিহত ১০

রাঙ্গাবালী উপজেলার একাধিক ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বার জানান, ইউএনও মাশফাকুর রহমান চেয়ারম্যানের রাজনৈতিক দ্বন্দ্বকে পুজি করে নিস্পত্তি হওয়া অভিযোটিকে পূর্নজীবীত করেছেন। এরপর তিনি চেয়ারম্যানের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে তদন্ত কর্মকর্তা নিযুক্ত করে উদ্দেশ্য প্রণোদিত রিপোর্ট দাখিল করেন।

গত ০১ সেপ্টেম্বর ইউএনও‘র দাখিল করা ওই রিপোর্টে চেয়ারম্যানকে অভিযুক্ত করা হয়। অথচ তদন্তে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ইউএনও‘র মতামতের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে উপজেলা মৎস্য অফিসার আনোয়ার হোসেন বাবুল জানান, যে চাল নিয়ে অভিযোগ উঠেছে আসলে সে চাল আত্মসাৎ হয়নি। এ বিষয়ে বেশী কিছু বলা যাবে না বলেও জানান তিনি।

অনুসন্ধানে জানা যায় গত ৪ জুলাই হয়রানির শিকার চেয়ারম্যান ইউনএনও‘র কাছে একট পত্র প্রেরন করেন। সেখানে তিনি জানান, যে সকল জেলেদের নাম নিয়ে অভিযোগ ছিলো সে সকল জেলেদের ভিজিএফ চাল গোডাউন থেকে উত্তোলন ও প্রদান করা হয়নি। যাচাই বাছাই শেষে যেহেতু তালিকা উপজেলা নির্বাহী অফিসার চুড়ান্ত করেন তাই নতুন তালিকা প্রেরনের জন্য ইউএনওর ‘র কাছে আবেদন জানান ।

আরও পড়ুন : পাকিস্তানকে সাহায্য করা নৈতিক দায়িত্ব

এ বিষয়ে রাঙ্গাবালী উপজেলা খাদ্য গুদামের ইনচার্জ মঞ্জুরুল ইসলাম জানান, উল্লেখিত ৬৩ জনের তালিকা নিয়ে অসঙ্গতি দেখা দিলে মার্চ মাসে স্থগীত করে চাল গুদামে রাখা হয়। পরে তালিকা সংশোধন করে এপ্রিল মাসের চালের সাথে বাকি ৬৩ জনের চাল দেয়া হয়েছে। চেয়ারম্যান সাহেব চাল আত্মসাৎ করেনি। চাল বিতরনে অনিয়ম হয়নি বলে নিশ্চিৎ করেছেন সংশ্লিষ্ট একাধিক ট্যাগ অফিসার। ইউএনও‘র তদন্ত রিপোর্টেও তারা একই বক্তব্য দিয়েছেন বলে প্রতিবেদকের কাছে দাবী করেন।

সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসুচীর আওতায় প্রদানকৃত ভিজিএফ বিষয়ে একাধীক কর্মকর্তা জানান, সরকারি কোন সহয়তা প্রদানের তালিকা করতে প্রথমে ইউপি সদস্যরা খসড়া তালিকা প্রনয়ন করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনোনীত ট্যাগ অফিসারের কাছে জমা দেন। ট্যাগ অফিসার ওই তালিকা যাচাই-বাছাই করে ইউনিয়ন পরিষদে পাঠায়। পরে ইউনিয়ন পরিষদ জেলেদের ক্ষেত্রে তালিকা উপজেলা মৎস্য অফিসে পাঠায়। মৎস্য অফিস যাচাই করে ইউএনও‘র কার্যালয়ে পাঠালে ইউএন সর্বাধিক যাচাই করে তালিকা অনুমোদন করে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা(পিআইও)' র দপ্তরে প্রেরন করেন। অনুমোদিত ভিজিএফ তালিকা উপজেলা খাদ্য অফিস ও ইউনিয়ন পরিষদে প্রেরন করা হয়। পরবর্তীতে তালিকা অনুযায়ী চেয়ারম্যান চাল বরাদ্দ পেলে লিখিত ভাবে স্ব-স্ব ইউপি সদস্যদেরকে বুঝিয়ে দেন। ইউপি সদস্যরা ইউএনও মনোনীত ট্যাগ অফিসারের উপস্থিতিতে ওই চাল বিতরণ করেন।

আরও পড়ুন : ঈদে মিলাদুন্নবী অত্যন্ত মহিমান্বিত দিন

এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক( সুজন) এর পটুয়াখালী জেলা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মানস কান্তি দত্ত জানান, জেলেদের চাল বিতরণে অনিয়ম হলে তার দায় শুধু চেয়ারম্যানের একার হতে পারে না। এ ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী অফিসার,ট্যাগ অফিসারও সমানভাবে দোষী। একজন চেয়ারম্যানকে দোষীকে করে তদন্ত রিপোর্ট প্রদানের আগে তার নিজের অপরাধের তদন্ত হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সুত্র জানায় ইউএনও‘র অপরিসীম অনিয়ম-দুর্নীতি ধামা চাপা দিতে ইউএনও তার নিজস্ব আস্থাভাজন ও চেয়ারম্যানের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান ওলিদ তালুকদারকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করেন। হাট ইজারা দিয়ে দেড়কোটি টাকা সরকারি তহবিলে জমা না দেয়া,মুজিব বর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মান না করে টাকা আত্মসাৎ,কর্মচারীকে নিজ অফিসে গুলিকরাসহ একাধিক অভিযোগে তার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসনের একাধিক তদন্ত চলৃান রয়েছে। উল্লেখিত তদন্ত কমিটিকে সহয়তা কারনে চেয়ারম্যানের উপর ব্যাপক রুষ্ট হন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। আর এ কারনেই নিষ্পত্তি হওয়া একটি বিষয় পূনরুজ্জীবিত করে চেয়ারম্যানকে সায়েস্তা করার পদক্ষেপ গ্রহন করেন তিনি

আরও পড়ুন : কৃষকের সঙ্গে উধাও প্রবাসীর স্ত্রী

এ বিষয়ে হয়রানির শিকার চেয়ারম্যান সাইদুজ্জমান মামুন জানান, তালিকা নিয়ে অসঙ্গতি দেখা দিলে তা লিখিত ভাবে ইউএনওকে অবগত করেছি। একই অভিযোগ এর আগে জেলা প্রশাসনের তদন্তে ভিত্তিহীন বলে প্রতিয়মান হয়েছে। প্রতিপক্ষরা হেনস্তা করতে মনগড়া অভিযোগ দিয়েই যাচ্ছে। ইউএনও আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আমাকে হয়রানী করছেন। এছাড়াও বিগত দিনের ইউএনও‘র অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা রাঙ্গাবালীতে আসলে আমি প্রটোকল মেনে তাদের সহায়তা করি। যে কারনে ইউএনও আমার উপর ক্ষুব্ধ।

এ প্রসঙ্গে ইউএনও মাশফাকুর রহমান জানান,চাল বিতরণে কোন অনিয়ম হয়নি। ট্যাগ অফিসারের উপস্থিতে তালিকা ভুক্ত জেলেদের মাঝে চাল বিতরণ করা হয়েছে। তবে তালিকায় যে নাম রয়েছে সেটা নিয়ে অভিযোগ দায়ের হওয়ায় একটি তদন্ত রিপোর্ট জেলা প্রশাসকের দপ্তরে জমা দেয়া হয়েছে।একই বিষয়ে ২০২০ সালে অতিরিক্ত জেলা প্রসাশক তদন্ত করার পর আবার তদন্ত উদ্দেশ্য প্রনোদিত কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান,আগের তদন্তের বিষয়টি তার জানা নেই। প্রসাশনিক তদন্তে ভাইস চেয়ারম্যান তদন্ত কমিটির প্রধান হতে পারেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ইউএনও জানান, উপজেলা পরিষদের সভায় ভাইস চেয়ারম্যানকে স্টাডিং কমিটির সভাপতি হওয়ায় তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে। এটা পরিষদের বিষয়। হাটবাজারের টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দেয়ার বিষয়ে তিনি জানান,এ কাজে দায়িত্ব প্রাপ্ত হচ্ছেন তহসিলদার। তিনি টাকা জমা না দেয়ায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মুজিব বর্ষের ঘরের মালামাল ক্রয় করা আছে,কাজ দ্রুতই শেষ হবে বলে দাবী তার। স্থানীয় চেয়ারম্যানের সাথে তার কোন দ্বন্দ নেই বলেও দাবী করেন তিনি।

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ পরিচালক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( সার্বিক) মো. হুমায়ুন কবির জানান, চেয়ারম্যান এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বিরুদ্ধে আলাদা আলাদা তদন্ত চলমান আছে। রিপোর্ট পেলে সে অনুযায়ি ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। তিনি জানান,কেউ দোষী হলে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

সান নিউজ/এইচএন

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

কুমিল্লায় শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা

জেলা প্রতিনিধি: কুমিল্লা জেলার সদ...

শিরীন পারভীন দুদকের প্রথম নারী মহাপরিচালক

নিজস্ব প্রতিবেদক: দুদকের পরিচালক...

টেম্পুচাপায় কলেজছাত্রী নিহত

জেলা প্রতিনিধি: চট্টগ্রামের কালুর...

মুন্সীগঞ্জে দোকানিকে ছুরিকাঘাতে হত্যা 

জেলা প্রতিনিধি: মুন্সীগঞ্জে চিপস...

ভারতের বিশ্বকাপ দল ঘোষণা

স্পোর্টস ডেস্ক : আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য দল ঘোষণা...

শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান

নিজস্ব প্রতিবেদক: আওয়ামী লীগ সাধা...

সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু ২ মে

নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামীকাল থেকে দ...

রাজধানীতে তাপমাত্রা বাড়ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: গত ২ দিনের তুলনায় মঙ্গলবার ঢাকার তাপমাত্রা...

চীনে সড়ক ধসে নিহত ১৯ 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: চীনের দক্ষিণাঞ...

গরমে ঠান্ডা পানি খেলে কী হয়?

লাইফস্টাইল ডেস্ক: গরমের মধ্যে এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানি স্বস্তি য...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা