সারাদেশ

মরুর ফল ত্বীন ফলছে জয়পুরহাটে

নিজস্ব প্রতিনিধি, জয়পুরহাট : খাদ্যশস্যের ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত উত্তরের জনপদ দিনাজপুর। জেলায় ধান চাষের পাশাপাশি ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে বিভিন্ন জাতের ফলের চাষ। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির বিদেশি ফলও। এর মধ্যে এবার জেলার দক্ষিণের উপজেলা নবাবগঞ্জে শুরু হয়েছে মরুভূমির মিষ্টি ফল ‘ত্বীন’-এর আবাদ।

নতুন এই ফল চাষ শুরু করে এলাকায় মানুষের দৃষ্টি কেড়েছেন উপজেলার কৃষক মতিউর মান্নান। নতুন এই ফলের বাগান দেখতে ভিড় করছেন স্থানীয়রা। এই ফলের আবাদ করে কেবল মতিউর নিজেই লাভবান হচ্ছেন না, বাগানটিতে সুযোগ হয়েছে বেশ কয়েকটি পরিবারের কর্মসংস্থানেরও।

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, উত্তরবঙ্গে প্রথমবারের মতো এই ফলের চাষ শুরু হয়েছে। এই উপজেলার ৪ বিঘা জমিতে পাঁচ প্রজাতির ৯০০ ত্বীন ফলের গাছ লাগিয়েছেন কৃষক মতিউর মান্নান। এরই মধ্যে বাগানের গাছগুলোতে ফলও আসতে শুরু করেছে।

বাগান দেখতে আসা রোকন ও জুলহাজ বলেন, আমরা কেবল ফেসবুক-টিভিতে ত্বীন ফলটি দেখেছি। পবিত্র কোরআনেও এই ফলের নাম আছে। এই ফলটি নিয়ে তাই আগ্রহ ছিল। আজ বাগানে এসে বাস্তবে ফলটি দেখতে পেয়ে আমাদেরকে অনেক ভালো লাগল।

মতিউরের ত্বীন বাগানে গিয়ে দেখা যায়, দেখতে অনেকটা ডুমুর আকৃতির এই ত্বীন ফল। গাছে গাছে অনেক ফল ধরেছে। এলাকায় প্রথম চাষ হওয়া এই ফল নিয়ে স্থানীয়দের যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে। অনেকেই এই ফলে আবাদের কথাও ভাবছেন। অনেকেই তাই কেবল ফলটি দেখতে এলেও কেউ কেউ মতিউরের কাছ থেকে পরামর্শও নিচ্ছে কিভাবে ফলটি আবাদ করা যায়, সে বিষয়ে।

রোকন ও জুলহাজও জানালেন তেমন আগ্রহের কথা। তারা বলেন, ফলের বাগান দেখে আমাদের এরকম বাগান করা ইচ্ছা হচ্ছে। আমরা বাগান দেখার পাশাপাশি মতিউর মান্নানের কাছ থেকে এই ফল চাষের পদ্ধতি সম্পর্কে অনেক কিছু জানলাম। আমরা ভবিষতে রকম বাগান করব।

বাগানের শ্রমিক লাবলুসহ বেশ কয়েকজন জানালেন, এখানে ১০ জন ত্বীন ফলের বাগানে কাজ করছেন। করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে যখন তারা কাজ হারিয়ে পথে বসেছিলেন, তখন মতিউরের ত্বীনের বাগানে তাদের কর্মসংস্থান হয়েছে।
তারা বলেন, এখানে কাজ করে আগের থেকে আমাদের সংসার অনেক ভালো চলছে। মতিউর ভাইয়ের মতো এলাকায় আরও যদি কেউ ত্বীনের বাগান তৈরি করে, তাহলে আরও বেশকিছু মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে।

হঠাৎ করে ত্বীন ফলকেই কেন বেছে নিলেন মতিউর— জানতে চাই তার কাছে। উত্তরে মতিউর মান্নান বলেন, করোনা মহামারিতে স্থবির হয়ে পড়ে পুরো দেশ। ওই সময় ব্যবসার পুঁজি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম। এরপর ঢাকা থেকে গ্রামে ফিরে আসি। পরে ছোট বোনের পরামর্শে অক্টোবরের দিকে গাজীপুর থেকে ত্বীন ফলে চারা এনে পতিত ৪ বিঘা জমিতে চাষ করতে শুরু করি। এই বাগানের পেছনে প্রায় ২৩ লাখ টাকা খরচ হয়েছে বলে জানান তিনি।

মতিউর আরও বলেন, প্রথম দিকে কিছুটা ভয় তো ছিলই। তবে চারা রোপণের দেড় মাসের মাথায় গাছে ফল আসতে শুরু করে। তখন বুঝতে পারি, আমি ভুল সিদ্ধান্ত নিইনি। এখন দুয়েকটি করে ফল পাকতে শুরু করেছে। ঢাকার বাজার ফলটি চাহিদা অনেক, দামও ভালো। প্রতিকেজি ফল বিক্রি হয় এক হাজার টাকা দরে। আশা করছি, এই বাগান থেকে ভালোই লাভ হবে।
তিনি আরও বলেন, বাগান সম্প্রসারণ করতে এরই মধ্যে আমি গাছে কলম করতে শুরু করেছি। কলমগুলো করে বাগান সম্প্রসারণের পাশাপশি সেগুলো স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে পারব।

নবাবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দেশে গাজীপুরের পর প্রথমবারের মতো আমাদের এলাকায় এই ফলের চাষ শুরু করেছেন কৃষক মতিউর মান্নান। ত্বীন ফলটি মরু এলাকায় বেশি পাওয়া যায়। এটি খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু। তাছাড়া এর ওষুধি অনেক গুণ রয়েছে। কেউ যদি এই ফলের বাগান নতুন করে তৈরি করতে চায়, আমাদের কৃষি অফিস তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।

এই কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, এই ফলের আবাদ ও ভালো ফলন পেতে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে নিয়মিত মতিউরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে, বাগান পরিদর্শন করা হচ্ছে। তাকে প্রয়োজনীয় সব সহায়তাই করা হচ্ছে।

সান নিউজ/এসএম

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

কোচিং সেন্টারে মিলল বিপুল অস্ত্র-বিস্ফোরক

রাজশাহী নগরীর কাদিরগঞ্জ এলাকায় একটি বাড়ি থেকে অস্ত্র ও বিস্ফোরক তৈরি সরঞ্জাম...

আলাস্কায় ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক শেষ, যুদ্ধ স্থগিতের ঘোষণা নেই

যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট...

কোনো চাঁদাবাজকে বাংলাদেশে থাকতে দেওয়া হবে না : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

কোনো চাঁদাবাজকে বাংলাদেশে থাকতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র...

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মালয়েশিয়ার প্রভাব কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশ

দীর্ঘদিনের রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা জোরদার করা...

‘গোপন রাজনীতি’, ছাত্রশিবির ও ডাকসু নির্বাচন নিয়ে উত্তপ্ত ঢাবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গেস্টরুম সংস্কৃতি এবং এই কেন্দ্রিক নির্যাতন গত ১৫ বছরে ছি...

ফের ৯৮ বাংলাদেশিকে বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠাল মালয়েশিয়া

ফের কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটকে দেওয়া হয়েছে ৯৮ বাংলাদেশিকে। বিম...

‘গোপন রাজনীতি’, ছাত্রশিবির ও ডাকসু নির্বাচন নিয়ে উত্তপ্ত ঢাবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গেস্টরুম সংস্কৃতি এবং এই কেন্দ্রিক নির্যাতন গত ১৫ বছরে ছি...

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মালয়েশিয়ার প্রভাব কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশ

দীর্ঘদিনের রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা জোরদার করা...

কোনো চাঁদাবাজকে বাংলাদেশে থাকতে দেওয়া হবে না : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

কোনো চাঁদাবাজকে বাংলাদেশে থাকতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র...

আলাস্কায় ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক শেষ, যুদ্ধ স্থগিতের ঘোষণা নেই

যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা