নিজস্ব প্রতিনিধি, ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়ীয়া, মুক্তাগাছা ও ভালুকা উপজেলার পাহাড়ী লাল মাটিতে হলুদের আবাদ বেশি হয়ে থাকে। তার মধ্যে ফুলবাড়ীয়া উপজেলার পাহাড়ী লাল মাটিতে উৎপাদিত হলুদের সুনাম রয়েছে সারাদেশে।
পাহাড়ী লাল মাটিতে আবাদ হওয়া হলুদের দাম কম থাকায় চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষক। গত কয়েক বছর ধরেই হলুদের দামের দরপতন নিয়ে অনেক হলুদ ব্যবসায়ী লোকসানের মুখে পড়েছেন। কৃষি বিভাগের বিরুদ্ধে হলুদ চাষের ওপর নতুন জাত ও প্রদর্শণীর ব্যবস্থা গ্রহণ না করার অভিযোগ রয়েছে।
ফুলবাড়ীয়া উপজেলার বাকতা, কালাদহ, নাওগাঁও, রাঙামাটিয়া ও এনায়েতপুর ইউনিয়নে ব্যাপক ভাবে পাহাড়ী লাল মাটিতে আবাদ হয় হলুদ। এবার উপজেলায় ১ হাজার ১০ হেক্টর জমিতে হলুদের আবাদ হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি বিভাগ। বর্তমান বাজার দরে ২ কোটি ১২ লাখ টাকার হলুদ উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
৫ ইউনিয়নে হলুদের আবাদ হলেও কৃষি বিভাগ মাত্র একটি হলুদ প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করেছিলেন। স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ কৃষি বিভাগ হলুদ চাষের উপর কোন গুরুত্ব দেয় না। মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শের জন্য কখনো এগিয়ে আসে না। কোন প্রশিক্ষনের ব্যবস্থাও গ্রহন করেন না।
বালুঘাট বাজারে কথা হয় হলুদ চাষী আশরাফুল ইসলাম সুজনের সাথে। তিনি জানান, ৩০ শতাংশ জমিতে তিনি হলুদের আবাদ করেছেন। তার খরচ হয়েছে ১৬ হাজার টাকা। হলুদ ক্ষেত পাইকারদের কাছে বিক্রি করতে গেলে বর্তমান বাজার দরে ১১ হাজার টাকা দাম করেছেন। পাইকারদের কাছে লোকসান দিয়ে হলুদ ক্ষেত বিক্রি না করে ৪ হাজার ৫শ টাকা খরচ করে শ্রমিক দিয়ে হলুদ উত্তোলন করে বাড়ীতে রেখেছেন।
মাঘ ও ফাল্গুন এ ২ মাস হলুদ উত্তোলন ও বিক্রির সময়। এখন যদি হলুদ বিক্রি করতে না পারি আর কবে বিক্রি করবো। তিনি আরও বলেন, হলুদ আবাদ করার পর আজ পর্যন্ত কৃষি বিভাগের কোন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার সাথে তার দেখা হয়নি। আমরা উচ্চ ফলনশীল হলুদের আবাদ শুধু শুনি কিন্তু কোন পরামর্শ পাই না।
একই বাজারে কথা হয় হলুদ ব্যবসায়ী ইদ্রিছ আলীর সাথে তিনি বলেন, কয় বছর ধরেই হলুদের দামের কোন ঠিক নাই। বার্মা ও ইন্ডিয়া থেকে হলুদ আসে বলে হলুদের দাম কমে যায়। গত বছর হলুদের ব্যবসা করে তার ২ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। গত মৌসুমে কাঁচা হলুদ ৭শ/৮শ টাকা মন দরে ১ হাজার মন হলুদ ক্রয় করেছিলেন তিনি।
এবার ৫শ/৬শ টাকা মন দরে হলুদ ক্রয় করছেন। ফুলবাড়ীয়া উপজেলায় স্থানীয় জাতের হলুদের আবাদ বেশি হয় বলে কৃষক তেমন লাভবান হতে পারেন না। আমাদের পাশ্ববর্তী মধুপুরের কৃষকরা মালা নামের এক হলুদ করেন। ঐ হলুদের ফলনও হয় বেশি।
ফুলবাড়ীয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জেসমিন নাহার জানান, যে সকল ফসল বেশি আবাদ হয় তার প্রদর্শণী থাকে কম। আমাদের কিছুই করার থাকে না। কৃষি বিভাগের উপসহকারীরা মাঠে গিয়ে কৃষককে পরামর্শ দেয়া তাদের কাজ। না গেলে আমি খোজ নিয়ে ব্যবস্থা নিব।
সান নিউজ/কালাম/এসএ