আহমেদ রাজু
মুখ ও মুখোশের স্ক্রিপ্ট রেডি হলো। সম্পন্ন হলো সব আয়োজন। কিন্তু নায়িকা পাবেন কোথায়! রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারের মেয়েরা সিনেমায় অভিনয় করবে, এমন কথা তখন ভাবাই যেতো না।
তাই নায়িকা খুঁজতে কাগজে দেয়া হলো বিজ্ঞাপন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্সের ছাত্রী জহরত আরা ও ইডেন কলেজের আইএর ছাত্রী পিয়ারি বেগম যোগাযোগ করলেন। কোলকাতার শিল্পী পূর্ণিমা সেনগুপ্তও এলেন। তিনিই হলেন নায়িকা (কুলসুম)। নায়ক আফজালের বোন রাশিদার চরিত্রে অভিনয় করলেন পিয়ারি। নাম নিলেন নাজমা। আফজাল নিজেই পরিচালক। অট্টহাসির জন্য বিখ্যাত ইনাম আহমেদ ছিলেন ডাকাতসর্দারের ভূমিকায়।
হিন্দি সিনেমায় তখন মধুবালা, সুরাইয়া ও নার্গিসের যুগ। সিনেমা হলের সামনে বিখ্যাত এই নায়িকাদের পোস্টার সাটানো থাকতো। এসব পোস্টার দেখেই পিয়ারির বড় নায়িকা হওয়ার সাধ জাগে। নায়িকা হতে পিয়ারি বোম্বে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
মুখ ও মুখোশের একটি দৃশ্যে আলী মনসুর ও জহরত আরা
তিনি জানতে পারেন রাজকাপুর তার সিনেমার জন্য একজন নতুন নায়িকা খুঁজছেন। কিন্তু তার আর বোম্বে যাওয়া হয়নি।
এরইমধ্যে একদিন কাগজে বিজ্ঞাপন দেখলেন আবদুল জব্বার খান মুখ ও মুখোশের নায়িকা খুঁজছেন। গোপনে দেখা করলেন। নায়িকাও হলেন। মুখ ও মুখোশে অভিনয়ের জন্য তিনি ১০০ টাকা সম্মানি পেয়েছিলেন।
মুখ ও মুখোশের সেটেই পরিচয় বাংলাদেশি সিনেমার প্রথম নায়ক আমিনুল হকের সঙ্গে। তিনিও এই সিনেমায় অভিনয় করেন।
ভালোবেসে ১৯৫৮ সালে আমিনুল হককে তিনি বিয়ে করেন। চান্দা সিনেমাতেও এহতেশাম তাকে নায়িকা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু স্বামী ও তার শ্বশুড়বাড়ির লোকেরা চায়নি তিনি আর অভিনয় করেন। তাই মুখ ও মুখোশের পর তিনি আর কোনো ছবিতে অভিনয় করেননি।
মুখ ও মুখোশের একটি দৃশ্যে পিয়ারি
যদিও পিয়ারি ১৯৫৩ সাল থেকে রেডিওতে নিয়মিত অনুষ্ঠান করতেন। মঞ্চনাটক করতেন। জহরত আরা ছিলেন পিয়ারি বেগমের বান্ধবী। পড়তেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সে। বেতারে ও মঞ্চে তিনি নাটক করতেন।
কাগজে বিজ্ঞাপন দেখে তিনিও পিয়ারির সঙ্গে এসে গোপনে দেখা করেন আবদুল জব্বার খানের সঙ্গে। মুখ ও মুখোশের তিন নায়িকার মধ্যে তিনিও একজন।
সাননিউজ/এএসএম