আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কর্ণাটকের একটি সরকারি প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে মুসলিম ছাত্রীদের হিজাব পরার ওপরে বিধিনিষেধ আরোপের প্রতিবাদে দেশটির রাজধানী দিল্লিতেও বিক্ষোভ হয়েছে।
রাজধানী দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গতকাল মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) এই বিক্ষোভ করেন।
আজ বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, কর্ণাটকে মুসলিম শিক্ষার্থীদের হিজাব পরার বিষয়ে বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার দ্য মুসলিম স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন নামে একটি ছাত্র সংগঠন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের নর্থ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভের করে ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের সামনে আয়োজিত বিক্ষোভে বহু শিক্ষার্থী অংশ নেন। এর মধ্যে অনেক মেয়ে শিক্ষার্থীও ছিলেন এবং হিজাব পরেই তারা সেখানে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
এ সময় কর্ণাটকের আন্দোলনকারীদের সমর্থনে তারা বিভিন্ন ব্যানার প্রদর্শন করেন। ব্যানারে লেখা ছিল - ‘আমরা, মোহাম্মদ (সাঃ) এর অনুসারী। আমরা ঘৃণার বিরুদ্ধে লড়াই করবো’ এবং ‘কর্ণাটকের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছি।’
কর্ণাটকের স্কুল-কলেজে মুসলিম ছাত্রীদের হিজাব পরা নিয়ে শুরু হওয়া বিতর্ক ব্যপক আকার ধারণ করেছে।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ৩ দিনের জন্য সব স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করলেও মঙ্গলবার সেখানকার একটি কলেজে হিন্দু-মুসলিম শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়েছে।
ক্যামেরায় ধরা পড়া শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি অবস্থানের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে ছড়িয়েছে।
এই ভিডিওতে দেখা যায়, কর্ণাটকের একটি কলেজ চত্বরে হিজাব পরা এক ছাত্রী হাঁটছেন। এ সময় গেরুয়া ওড়না পরা একদল তরুণ তাকে ঘিরে হিজাববিরোধী স্লোগান দেন এবং হেনস্তা করেন।
শত শত তরুণের সামনে একাই প্রতিবাদ জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশংসায় ভাসছে কর্ণাটকের মুসকান নামের ওই মুসলিম ছাত্রী। আর এই ঘটনা ঘটেছে কর্ণাটকের মান্দিয়া প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে।
ভিডিওতে দেখা যায়, ওই তরুণী স্কুটি পার্কিংয়ে রেখে কলেজ ভবনের দিকে হাঁটছে। এ সময় গেরুয়া ওড়না পরা একদল তরুণ ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দেয় এবং তার দিকে এগিয়ে যায়।
প্রতিবাদে পাল্টা ‘আল্লাহু আকবার’ স্লোগান দেওয়ার সময় এই তরুণীকে ভীত দেখা যায়নি। ওই সময় হাত উপরে তুলে আল্লাহু আকবার স্লোগান দিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে দেখা যায় তাকে। পরে কলেজের অধ্যক্ষ এবং অন্যান্য শিক্ষকরা তাকে সরিয়ে নেন।
দীর্ঘ একমাস ধরে কর্ণাটকের বিভিন্ন স্কুল কলেজে একদিকে হিজাব পরে ক্লাস করার অনুমতির দাবিতে আন্দোলন করছে মুসলিম ছাত্রীরা।
অপরদিকে হিন্দু শিক্ষার্থীরা গেরুয়া ওড়না পরে মুসলিম শিক্ষার্থীদের হিজাববিরোধী আন্দোলন শুরু করেছে।
কর্ণাটকে এই আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছে গত মাসে। উদুপি জেলার সরকারি বালিকা পিইউ কলেজে ৬ জন মুসলিম ছাত্রীকে হিজাব পরার কারণে শ্রেণিকক্ষের বাইরে বসতে বাধ্য হয়।
সেসময় কলেজ প্রশাসন জানায়, ইউনিফর্মের অংশ নয় হিজাব এবং ওই ছাত্রীরা কলেজের নিয়ম লঙ্ঘন করেছে। ছাত্রীদের ক্লাসে হিজাব পরার বিষয়ে আপত্তি জানায় স্থানীয় ডানপন্থী বিভিন্ন গোষ্ঠী ও তাদের ছাত্র সংগঠন।
উদুপির এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে রাজ্যের মান্দিয়া এবং শিভামোগগা এলাকায়। সেখানকার কলেজ কর্তৃপক্ষ হিজাব নিষিদ্ধ করে।
যদিও আইনে হিজাব পরে মুসলিম ছাত্রীদের ক্লাসে আসতে কোনও বাধা নেই।
পরে উদুপির একটি প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ ছাত্রী হিজাব পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আদালতের দ্বারস্থ হন।
আরও পড়ুন: ইসরায়েলি হামলায় ৩ ফিলিস্তিনি নিহত
গত মঙ্গলবার ( ৮ ফেব্রুয়ারি) সেই বিষয়েই কর্ণাটকের হাইকোর্টে শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আজ বুধবার ( ৯ ফেব্রুয়ারি) সেই শুনানি অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।
সান নিউজ/ এইচএন