সারাদেশ

রিমান্ডে বাবুল আক্তারের হুঙ্কার

ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম ব্যূরো: টানা তিন দিন জিজ্ঞাসাবাদ করেও স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার প্রধান আসামি বাবুল আক্তার পিবিআইকে উল্লেখযোগ্য কোনো তথ্য দেননি। বরং বাবুল আক্তার হুঙ্কার ছেড়ে বলেছেন, আমি বাবুল আক্তার, এতটা সস্তা নই। যা বলতে বলবেন বলে দেব এমনটা ভাবছেন কেন? আমার নার্ভ যথেষ্ট শক্ত।

জিজ্ঞাসাবাদে ঢাকায় তার বাসার ঠিকানাও ভুল দিয়েছেন। মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় যে মামলা করেছেন সেখানেও বাবুল আক্তারের ঢাকার ঠিকানা ভুলভাবে লেখা হয়েছে। পরে জিজ্ঞাসাবাদে গড়িমসির পর সঠিক ঠিকানা দেন বাবুল আক্তার।

এমন তথ্য দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআিই পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা। তিনি বলেন, বাবুল আক্তার এখন পাঁচ দিনের রিমান্ডে আছেন। রিমান্ড শেষে পিবিআই বাবুল-মিতু দ¤পতির ছেলের সঙ্গে কথা বলবে। প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে তার বক্তব্য এই মামলায় জরুরি। এর আগেও পুলিশ ছেলের সঙ্গে কথা বলেছে।

তিনি বলেন, বাবুল আক্তার তার সন্তানদের নিয়ে কিছুটা বিচলিত। তবে রিমান্ডের দু‘দিনে তিনি মামলা সংক্রান্ত ব্যাপারে তেমন কোনো কথা বলেননি। এক রকম নিরুত্তর ছিলেন। বাবুল বলেছেন, তার নার্ভ যথেষ্ট শক্ত। তিনি এত সস্তা নন। এখন পর্যন্ত স্ত্রী হত্যার আসামি হিসেবে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার কোনো ইচ্ছে প্রকাশ করেননি তিনি। কথা বলছেন খুবই কম।

এর আগে হত্যাকান্ডে মিতুর স্বামী বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পায় পিবিআই। ফলে মিতুর বাবার দায়ের করা নতুন মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে বাবুল আক্তারকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের ৩য় আদালতে নেওয়া হয়। আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

সন্তোষ কুমার চাকমা আরো বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে মিতু হত্যাকান্ডে বাবুল আক্তারের তিন লাখ টাকার কিলিং মিশনের তথ্য উদঘাটন করে পিবিআই। যার মধ্য দিয়ে মিতু হত্যাকান্ড নতুন মোড় নেয়। বাবুল আক্তারের বন্ধু সাইফুলের দেওয়া তথ্যে এই রহস্য উদঘাটন হয়। সাইফুল সাক্ষী হিসেবে আদালতেও কিলিং মিশনের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেছেন।

সাইফুল আদালতকে বলেছেন, এনজিওকর্মী গায়ত্রী সিংয়ের সঙ্গে বাবুল আক্তারের পরকিয়ার বিরোধ থেকেই স্ত্রী মিতুকে সরিয়ে দিতে কিলিং মিশনের পরিকল্পনা করা হয়। ২০১৫ সালে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে বাবুল আক্তার যখন কর্মরত ছিলেন তখনই এনজিওকর্মী গায়ত্রী সিংয়ের সঙ্গে বাবুল আক্তারের পরকীয়ার স¤পর্ক গড়ে উঠে।

পরে স্ত্রী মিতু তা জানতে পারে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়ার পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে সালিশও হয়। এনিয়ে দু‘জনের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। পরবর্তীতে বন্ধু সাইফুল ও সোর্স মুছা সিকদারকে কাজে লাগিয়ে এ হত্যাকান্ড ঘটায়।

সন্তোষ চাকমা বলেন, চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলা তদন্ত করছিল নগর গোয়েন্দা পুলিশ। তারা প্রায় তিন বছর তদন্ত করেও অভিযোগপত্র দিতে ব্যর্থ হয়। পরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে আদালত মামলা তদন্তের ভার পিবিআইকে দেন। এরপর নড়াইলে একটা লোককে আমরা পর্যবেক্ষণে নিই। তার নাম গাজী আল মামুন। সাইফুল ও মামুন দুজনকেই পিবিআই ডাকে। তারা সাক্ষী হিসেবে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। এরমধ্যে সাইফুল বাবুল আক্তারের দেয়া তিন লাখ টাকা মুছার এক আত্নীয়ের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কথা স্বীকার করেন।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রামে জঙ্গি দমন অভিযানের জন্য আলোচিত বাবুল আক্তার সিএমপির গোয়েন্দা পুলিশের এডিসি থেকে পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে যোগ দেন। এর কয়েকদিন পর ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রামের ওআর নিজাম রোডের বাসা থেকে কয়েকশ গজ দূরে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে গিয়ে নগরীর জিইসি মোড়ে খুন হন বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। মোটরসাইকেলে করে আসা কয়েকজন সেখানে ছেলের সামনে তাকে প্রথমে ছুরিকাঘাত করে। পরে গুলি করে হত্যা করে। হত্যাকান্ডের পর নগরীর পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন বাবুল আক্তার।

এরপর চট্টগ্রামে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে বাবুল আক্তারের স¤পৃক্ততাও মিতু হত্যাকান্ডের সম্ভাব্য কারণ হতে পারে ধরে নিয়ে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। তবে অল্পদিনেই সে ধারণা থেকে সরে আসেন তদন্তকারীরা। হত্যাকান্ড নিয়ে নানা গুঞ্জনের মধ্যে ওই বছরে ২৪ জুন রাতে ঢাকার বনশ্রীতে শ্বশুরের বাসা থেকে বাবুল আক্তারকে গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে নিয়ে প্রায় ১৪ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তখন তার কাছ থেকে জোর করে পদত্যাগপত্র নেওয়ার খবর ছড়ালেও সে বিষয়ে কেউ মুখ খুলছিলেন না।

তার ২০ দিন পর ২০১৬ সালের ১৪ আগস্ট স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, বাবুলের অব্যাহতির আবেদন তার কাছে রয়েছে। আরও ২২ দিন পর ৬ সেপ্টেম্বর বাবুল আক্তারকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। নানা আলোচনা সমালোচনার মধ্যে চুপ থাকা বাবুল আক্তার হত্যাকান্ডের দুই মাস পর ফেসবুকে স্ত্রীকে নিয়ে আবেগঘন একটি স্ট্যাটাস দিয়ে আবার আলোচনায় আসেন। মিতু হত্যার পর থেকে বাবুল ঢাকায় শ্বশুরবাড়িতে থাকলেও নতুন চাকরিতে (বেসরকারি) যোগ দেয়ার পর দুই সন্তান নিয়ে ঢাকার মগবাজারে আলাদা বাসা নিয়ে থাকতে শুরু করেন।

সান নিউজ/এসএম

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

প্রেসক্লাবের উদ্যোগে বৃক্ষরোপণ উদ্বোধন

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : কুষ্টিয়ার মিরপুর প্রেসক্লাবের উদ্যোগে ব...

মিষ্টি জান্নাতকে আইনি নোটিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: মানহানির মতো মন...

আনহার আহমেদ চৌধুরী মৃত্যুবরণ করেছেন

নিজস্ব প্রতিনিধি: ইউনিভার্সিটি অফ...

বড়াইগ্রামে দুই ব্যবসায়ীকে জরিমানা

নাটোর প্রতিনিধি: বড়াইগ্রামের বনপাড়া বাজারের বনফুল সুইটসের মা...

আনারের হত্যাকারীরা চিহ্নিত

নিজস্ব প্রতিবেদক : এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারকে যারা হত্যা করেছ...

সমুদ্রবন্দরে ১ নম্বর সংকেত

নিজস্ব প্রতিবেদক : বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি ন...

আনার হত্যায় ৩ আসামির রিমান্ডে

নিজস্ব প্রতিবেদক: ভারতের কলকাতায় ঝিনাইদহ-৪ আসনের...

এমপি হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি

বিনোদন ডেস্ক : ঢাকাই সিনেমার আলোচিত চিত্রনায়িকা মিষ্টি জান্ন...

আদালতে তোলা হচ্ছে অভিযুক্তদের

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঝিনাইদহ-৪ আসনের...

পাপুয়া নিউগিনিতে ভূমিধস

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পাপুয়া নিউ গিনির ৬টি প্রত্যন্ত গ্রামে ভয়...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা