আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মিয়ানমার সেনাবাহিনী দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় শান রাজ্যের একটি বৌদ্ধ মঠে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর ওপর হামলা চালিয়ে অন্তত ৩০ জন বেসামরিক নাগরিক ও তিনজন বৌদ্ধ ভিক্ষুকে হত্যা করেছে।
আরও পড়ুন : শপথ নিলেন নেপালের নতুন প্রেসিডেন্ট
শনিবার (১১ মার্চ) স্থানীয় সময় বিকেল ৪ টার দিকে দেশটির প্রতিরক্ষাবাহিনী এ হামলা চালায় জানিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
শনিবার দেশটির সেনাবাহিনী নান নিন নামক একটি গ্রামে গোলাবর্ষণ করে। এর পরপরই স্থানীয় বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে গোলাগুলি শুরু হয় বলে জানায় মিয়ানমারের প্রতিরক্ষা সংস্থা ক্যারেনি ন্যাশনালিটিজ ডিফেন্স ফোর্স (কেএনডিএফ)।
জান্তা সরকারের বিমান বাহিনী ও আর্টিলারি সদস্যরা গ্রামে প্রবেশ করে। একপর্যায়ে তারা স্থানীয় একটি মঠের ভিতরে লুকিয়ে থাকা গ্রামবাসীর ওপর হামলা চালায়।
আরও পড়ুন : বাখমুতে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘর্ষ, বহু হতাহত
দ্য কান্তারওয়াদ্দি টাইমস নামের স্থানীয় এক পত্রিকা প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা ভিক্ষুসহ বেসামরিক নাগরিকদের মঠের সামনে লাইনে দাঁড় করিয়ে নির্মমভাবে গুলি করে।
কেএনডিএফের প্রকাশিত একটি ভিডিওতে মঠটির সামনে অন্তত ২০ জনকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। তাদের মধ্যে কয়েকজনের শরীরে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের মতো কমলা রঙের পোশাক জড়ানো ছিল।
মরদেহগুলোর প্রতিটিতে একাধিক গুলির আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে দাবি করছে কেএনডিএফ। ভিডিওটিতে মঠের দেয়ালেও বুলেটের স্পষ্ট চিহ্ন দেখা যায়।
জানা যায়, সেনাসদস্যরা নান নিন ছাড়াও আশেপাশের আরও কয়েকটি গ্রামেও অভিযান চালায়। সেসময় বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। ফলে আকস্মিক এ অভিযানে বাস্তুহারা হয়েছে অসংখ্য পরিবার।
আরও পড়ুন : আবারও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল পিয়ংইয়ং
ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া সম্ভব হয়নি উল্লেখ করে বিবিসি জানিয়েছে দেশটির এ অংশে নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বর্বর হামলা নতুন নয়।
সংবাদ সংস্থাটি আরও জানায়, সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকেই এ অঞ্চলের বিদ্রোহীগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে একাধিক অভিযান চালিয়েছে সামরিক জান্তা।
আরএনডিএফ বলছে, ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে জান্তা সেনারা নান নিন ও স্থানীয় মঠের দিকে অগ্রসর হওয়ায় এখানে সংঘর্ষের মাত্রা বেড়েছে। নান নিন গ্রামটি শান রাজ্য থেকে কায়াহ রাজ্যে যাওয়ার প্রধান রুট।
আরও পড়ুন : যুক্তরাষ্ট্রে আরও এক ব্যাংক বন্ধ
জান্তা সরকারের বিশ্বাস, এ রাস্তা দিয়েই তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে অস্ত্র সরবরাহ করা হয়।
এটি এমন একটি এলাকা, যেখানে পা-ও, শান ও কারেনি জনগণ বসবাস করে। পা-ও ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ও এর সশস্ত্র শাখা এ এলাকায় জোরালোভাবে জান্তাপন্থী।
স্থানীয়সূত্রে, দেশটির সেনাবাহিনী এ অঞ্চলে পা-ও মিলিশিয়াদের শক্তিশালী করার জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, যাতে এলাকাটি নিয়ন্ত্রণকারী বিরোধীদের প্রতিহত করা যায়।
এদিকে, এ বছর মিয়ানমারে সাধারণ নির্বাচন হবে বলে আশা করা হচ্ছিল। কিন্তু, বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে জান্তা সরকারের ব্যর্থতা সে নির্বাচন আয়োজনের বিষয়টি প্রায় অসম্ভব করে তুলেছে।
আরও পড়ুন : বারে বন্দুক হামলায় নিহত ১০
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, মিয়ানমারে সেনা অভুত্থানের পর সশস্ত্র সহিংসতায় এ পর্যন্ত ২ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন অসংখ্য। সামরিক অভিযান চালিয়ে আটক করা হয়েছে হাজার হাজার বিদ্রোহী ও জান্তা সরকারের বিরোধীভাবাপন্ন নাগরিককে।
সেনা নির্যাতনে ঘরছাড়া হয়েছেন দেশটির বহু মানুষ। বিবিসি বলছে, প্রায় সাড়ে ১০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ৪০ হাজার বাড়ি ধ্বংস করা হয়েছে।
৪০ লাখ শিশু শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ও প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ মানুষ চরম খাদ্যাভাবে ভুগছেন। শুধু তাই নয়, সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে মিয়ানমারের অর্থনীতি।
আরও পড়ুন : মাদাগাস্কারে নৌকাডুবিতে নিহত ২২
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে দেশটির সেনাবাহিনী। এসময় ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) নেতা নোবেলজয়ী অং সান সু চিকে গ্রেফতার করা হয়।
সান নিউজ/এইচএন