এহসানুল হক, ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ): বিধবা এক বৃদ্ধা ভূমি অফিসে যাবে বলে বাড়ি থেকে রওনা দিলেন। রাস্তায় বিভিন্ন মানুষকে ভূমি অফিসের ঠিকানা জিজ্ঞেস করতে করতে অবশেষে আসলেন ভূমি অফিসের সামনে। হাতে কিছু কাগজ নিয়ে ভূমি অফিসের গেটে দাঁড়িয়ে ছিলেন। অবাক আর অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছিলেন ভূমি অফিস ও সেখানকার মানুষজনের দিকে। বিধবা বৃদ্ধার নাম হালিমা খাতুন।
আরও পড়ুন: মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার ৫৪
বয়স ৭০ পেরিয়ে আশি ছুঁইছুঁই। দাঁড়িয়ে থেকে হাতে থাকা কাগজগুলো নাড়াচাড়া করছেন। কীভাবে কি করবেন বুঝতে পারছিলেন না। ঠিক সেই মুহূর্তে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহবুবুর রহমান অফিস থেকে বের হয়ে রওনা দিলেন বাসার উদ্দেশ্যে।
ঘড়ির কাঁটায় তখন আনুমানিক সাড়ে তিনটা থেকে চারটা বাজে। গেটে দাঁড়িয়ে থাকা হালিমা খাতুনকে এসিল্যান্ড জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি ভূমি অফিসে এসেছেন? উত্তরে বিধবা বললেন, আমার ছেলের নামে একটু জমি আছিন। এই জমিডা খারিজ করতাম আইছিলাম। কিন্তু অহন কই যাইয়াম (যাব), আর কার কাছে যাইয়াম কিছুই বুঝতাম পারতাছি না। আর কয় টেহা লাগে হেইডাও জানি না। আর আমার কাছে কোন টেহাও নাইগা অহন।
আরও পড়ুন: হাইকোর্টে রফিকুল ইসলাম মাদানী
বৃদ্ধার মুখ থেকে এ কথাগুলো শুনার পর ভূমি কর্মকর্তা বৃদ্ধাকে সাথে নিয়ে ফের অফিসে ফিরে গেলেন। অফিস সহকারীকে দিয়ে আবেদন করিয়ে অনলাইনে সাবমিট করেন। খারিজ আবেদন ও খারিজের সরকারি ফিসহ যাবতীয় খরচ এসিল্যান্ড নিজ বেতনের টাকা দিয়ে করেন। বিধবা হালিমা খাতুনের বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সরিষা ইউনিয়নের সরিষা গ্রামে। সংসারে তার তিন ছেলে এক মেয়ে রয়েছে। এক ছেলে আবার প্রতিবন্ধী।
ভূমি অফিসে কর্মরত অফিস সহকারী আল আমিন জানান, এসিল্যান্ড স্যার সরিষা ইউনিয়নের সহকারী (ভূমি) অফিসারকে উক্ত আবেদনের রিপোর্ট অল্প সময়ের মধ্যে প্রেরণের নির্দেশ দেন। রিপোর্ট প্রদানের পর এসিল্যান্ড স্যার হেয়ারিং নিয়ে কোন বিবাদী না থাকায় নামজারী মঞ্জুর করেন। পরে হালিমা খাতুন ডিসিআর নেওয়ার জন্য অফিসে আসেন। ডিসি আরের সরকারি ফি এগারো শত টাকা চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমি এতো টেহা কইত্তে দেম বাবা? আমি তো ঠিক মতো খাইতেই পারি না বাবা। এ কথা জানতে পেরে এসিল্যান্ড স্যার আমাকে বললেন, টাকা নিও না। ওনার টাকা আমি দিব। পরে স্যার বেতনের টাকা থেকে ওই বৃদ্ধা বিধবার ডিসিআরের টাকা দেন। খতিয়ান সম্পন্ন করে বয়স্ক বিধবা মহিলার হাতে তুলে দেন।
আরও পড়ুন: অবসরে যাচ্ছেন ডিএমপি কমিশনার
এ সময় খুশিতে কান্না জড়িত কন্ঠে হালিমা খাতুন এসিল্যান্ড বলেন, বাবা তুমি অনেক বড় হইবা। আমি দুই আত (হাত) তুলে তোমার লাগি আল্লাহর কাছে দোয়া করি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা ভূমি অফিস থেকে শতভাগ ডিজিটাল ভূমিসেবা জনগণের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি। হালিমা খাতুনের বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে করেছি। সবার আগে আমাদের পরিচয় আমারা সবাই মানুষ। আর মানুষ মানুষের জন্য। এ ধরনের মানবিক কাজে আত্মতৃপ্তি পাই।
সান নিউজ/কেএমএল