আহমেদ রাজু
মসলিন কাপড় বিলুপ্ত হওয়া সম্পর্কে এতদিন একটি ধারণা প্রচলিত ছিলো ইংরেজ সরকার তাঁতীদের আঙ্গুল কেটে দিতো। যদিও এর কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই।
সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন গবেষণায় বেরিয়ে আসছে তাঁতীরা মসলিন বোনার কাজ করতে আগ্রহী ছিলো না। তাই তারা নিজেই নিজের বৃদ্ধাঙ্গুলি কেটে ফেলতো, যাতে এই কাজ আর করতে না হয়।
পলাশীর যুদ্ধের পর মসলিন সংগ্রহের জন্য গোমস্তা নিয়োগ করে কোম্পানি সরকার। তারা ছিলো কোম্পানির বেতনভুক্ত কর্মচারী। এই গোমস্তারা মসলিন সংগ্রহের জন্য হয়ে উঠে নিষ্ঠুর। চালাতে থাকে অমানবিক নির্যাতন-অত্যাচার। মসলিন তাঁতীরা তখন দিশেহারা হয়ে উঠে।
গরীব চাষীকে টাকা ধার দিয়ে কম দামে তার কাছ থেকে নেয়া হতো কার্পাস। দেশি মানুষদের মধ্যে এক শ্রেণির লোক দালাল ও পাইকার হিসেবে কাজ করতো। তারা তাঁতীদের ঠকাতো।
১৭৬০ সালে এক টাকায় পাওয়া যেতো একমণ চাল। একজন তাঁতি তখন মসলিনের কাজ করে মাসে পেতো দুই টাকা। অর্থাৎ একমাস কাজ করে পেতো দুই মণ চালের দাম!
এতো কম মজুরি পাওয়ায় তাদের পরিবারের খাবারই জুটতো না। তবুও গোমস্তারা জোর-জবরদস্তি করে মসলিন বুনতে বাধ্য করতো তাঁতীদের।
এরপর ঢাকাই মসলিন রফতানির ওপর উচ্চহারে করারোপ করা হয়, ফলে বিলেতে মসলিনের দাম বেড়ে যায় অস্বাভাবিক। সেখানে বিক্রি কমে যায় মসলিন।
ঊনবিংশ শতাব্দীতে ইংরেজ সরকার স্থানীয় শিল্পকে ধ্বংস করার পরিকল্পনা হাতে নেয়। দেশিয় বস্ত্রের ওপর ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ করারোপ করা হয়।
পক্ষান্তরে ব্রিটেনে প্রস্তুতকৃত আমদানি করা কাপড়ের ওপর কর ছিলো ২ থেকে ৪ শতাংশ। বিলেতের সস্তা সুতো আসতে থাকে। আর তা থেকে তৈরি হতে থাকে সস্তা কাপড়। হারিয়ে যেতে থাকে ঢাকাই মসলিন।
সান নিউজ/এনএম