নিজস্ব প্রতিবেদক: যানবাহন ধর্মঘটের কারণে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। সরকারি চাকরিজীবীরাও তার বাইরে নয়। পরিবহন ধর্মঘট নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে আমিনুল ইসলাম নামের এক চাকরীজীবী বলেন, ‘সরকার তাঁকে মাসে যাতায়াত ভাতা দেয় ২৫০ টাকা। এদিকে একদিনে লাগছে ৫০০ টাকা। এসব কেউ দেখে না।’
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে আজ রোববারও রাজধানী ঢাকায় পালিত হচ্ছে পরিবহনমালিক ও শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘট। মহানগরীর ভেতরে আজও চলাচল করছে না কোনো বাস। রাজধানী থেকে ছেড়ে যাচ্ছে না আন্তজেলা ও দূরপাল্লার গণপরিবহন।
আজ সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস হওয়ায় সরকারি ও বেসরকারি চাকরিজীবীরা পড়েছেন বেশ ভোগান্তিতে। সড়কে বেসরকারি বাস চলছে না। সড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা আছে। কিন্তু ভাড়া বেশি। অনেকে উপায় না পেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে অফিসে গেছেন।
রাজধানীর তেজগাঁও, মহাখালী ও ফার্মগেট এলাকায় সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেছে, সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ির ভিড়। বিআরটিসি বাস চলছে। তবে সংখ্যায় কম। সে তুলনায় যাত্রীর ভিড় বেশি। অনেককে হেঁটে অফিসে যেতে দেখা গেছে। কর্মজীবী নারীদের জন্য ভোগান্তি বেড়েছে কয়েক গুণ।
রুনা রহমান বেসরকারি একটি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে চাকরি করেন। তাঁর অফিস মতিঝিলে। মহাখালীর নাবিস্কো থেকে তিনি নিয়মিত বাসে যাতায়াত করেন। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রুনা বলেন, গতকালও তিনি ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেলে অফিসে গেছেন। ভাড়া দিতে হয়েছে ১৫০ টাকা। এটি তাঁর নিয়মিত ভাড়ার অন্তত ৫ গুণ। তিনি বলেন, প্রতিদিন গড়ে ৩০০ টাকা দিয়ে অফিসে যাওয়া-আসা কি সম্ভব?
রেবন হোসেন, আমার সকালে অফিস। গাড়ি চলাচল না করায় হেঁটে আসতে হয়েছে। দীর্ঘপথ হাঁটা কঠিন।
আরমান ভূইয়া নামের এক চাকরিজীবী বলেন, বিভিন্ন গন্তব্যে বিআরটিসি বাস চললেও রাস্তায় অতিরিক্ত যাত্রী থাকায় তাতে উঠা যায় না। তাই উত্তরায় অফিসে যাওয়া পথে রুট পরিবর্তন করে লোকাল সিএনজিতে অতিরিক্ত ভাড়া গুণতে হচ্ছে। এছাড়া সকল কিছু দাম বৃদ্ধি পেলেও চাকুরিজীবীদের বেতন বাড়েনি, এতে আমরা ভোগান্তিতে পড়ছি।
চেীধুরী নুরুন্নাহার বলেন, আমার বাসা কদমতলা, বাসাবো। সেখান থেকে বাংলামোটরে হেঁটে আসতে হয়েছে। পাইনি গাড়ি। এতে অফিসে যথাসময়ে আসা সম্ভব হয়ে উঠে না। বিআরটিসি বাস শুধু সরকারি চাকরিজীবীদের সুবিধা দিয়েছে। গাড়িতে সাধারণ মানুষকে উঠতে দেয়া হয়নি। তাহলে আমাদের যাতায়াত কিভাবে হবে।
তবে আকাশ চৌধুরী জানান, তিনি রাস্তাঘাট ফাঁকা পাওয়াতে খুশি। তেমন কোনো বেগ পেতে হয়নি কারওয়ান বাজারে নিজের অফিসে আসতে। তিনি বলেন, রাস্তাঘাট ফাঁকা দেখে মনে হয়েছে চলাচল আরামদায়ক।
বুধবার (৩ নভেম্বর) বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বর্তমান ক্রয়মূল্য বিবেচনা করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন ডিজেলে লিটারপ্রতি ১৩ দশমিক ১ এবং ফার্নেস অয়েলে লিটারপ্রতি ৬ দশমিক ২১ টাকা কমে বিক্রয় করায় প্রতিদিন প্রায় ২০ কোটি টাকা লোকসান দিচ্ছে। অক্টোবর মাসে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন বিভিন্ন গ্রেডের পেট্রোলিয়াম পণ্য বর্তমান মূল্যে সরবরাহ করায় মোট ৭২৬ দশমিক ৭১ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সরকার শুধু ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য প্রতি লিটার ভোক্তা পর্যায়ে ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা পুনঃনির্ধারণ করেছে।
এ নিয়ে ভাড়াবাড়ানো বা তেলের দাম কমাতে যানবাহন মালিক-শ্রমিকরা তিনদিন ধরে ধর্মঘট পালন করছে।
সান নিউজ/এফএআর