কামরুজ্জামান স্বাধীন, উলিপুর (কুড়িগ্রাম) : কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী সুপারির হাট অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ায় অভিযোগ পাওয়া গেছে। একটি কুচক্রিমহল তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করতে এই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে। হাটটি সরিয়ে কয়েক কিলো দুরে একটি ঈদগাহ মাঠে নেয়া হয়েছে। হাটটি স্থায়ীভাবে চলে গেলে আগামী বছর প্রায় ১৫ লাখ টাকার রাজস্ব হারাবে সরকার।
অন্যদিকে, উলিপুর বাজারের পান ব্যবসায়ীরাও পড়ছেন চরম বিপাকে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পৌর মেয়র মামুন সরকার ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, অতি প্রাচীনতম উলিপুর হাট-বাজারের অন্তভূক্ত সুপারির হাটটি দীর্ঘদিন ধরে জমজমাট ভাবে পরিচালিত হয়ে আসছিল। কিন্ত স¤প্রতি একটি মহল সম্প্রীতি সুপারির হাটটি উপজেলার পান্ডুল ইউনিয়নের মিনাবাজার সংলগ্ন একটি ঈদগাহ মাঠে সরিয়ে নেয়। নিয়ম বহির্ভূতভাবে সেখানে প্রতি সপ্তাহে কয়েক লাখ টাকার সুপারি ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে। এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন, পৌর প্রশাসন, ইজারাদারদের সাথে কয়েকদফা বৈঠক হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
অভিযোগে আরো জানা যায়, মিনা বাজারে সপ্তাহে (রবি-বুধবার) নিদিষ্ট হাটবার থাকলেও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে উলিপুর হাটের সাথে মিল রেখে সোমবার-বৃহস্পতিবার সেখানে সুপারির হাট বসানো হয়েছে। সুপারীর হাটকে কেন্দ্র করে সপ্তাহে সোমবার-বৃহস্পতিবার এ এলাকার মানুষজন সাপ্তাহিক আয়ের একটা অন্যতম উৎস ছিল। হাটটি সরিয়ে নেয়ায় বর্তমানে সেটি বন্ধ হয়ে গেছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, সপ্তাহে দুদিন (সোম-বৃহস্পতিবার) উলিপুর হাটে প্রায় ২০ লাখ টাকার সুপারী কেনা বেচা হত। কিন্তু হঠাৎ হাটটি অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়। এর আগেও একইভাবে ধানের হাট চলে যায়। পাটের হাটটিও বিলুপ্তির পথে। এছাড়াও প্রায় তিন বছর আগে মাছের বাজার উপজেলার তবকপুর ইউনিয়নে চলে গেছে। এভাবে একে একে সব হাট চলে গেলে ঐতিহ্যবাহী উলিপুর হাটটি তার স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলবে। সরকার হারাবে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব।
মিনাবাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দুলাল মিয়া বলেন, আমরা হাটের ব্যাপারে কিছুই জানতাম না। শুরুতেই কিছু পাইকাররা সমন্বিতভাবে মাইকিং করে হাটটি এখানে নিয়ে এসেছে। পরে ঈদগাহ মাঠের উন্নয়নে হাটটি সেখানে বসিয়েছে তারা।
আরও পড়ুন: হবিগঞ্জে বিএনপি নেতা গউছসহ ৪০ জন কারাগারে
হাট ইজারাদার কয়ছার আলী বলেন, মাছ বাজার ব্যতিত এ বছরে ১কোটি ৩৪ লাখ ২১হাজার ৫২৫ টাকা হাট ইজারা হয়। প্রতি হাটে প্রায় ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার সুপারী কেনা বেচা হত এবং ৪ থেকে সাড়ে ৪হাজার টাকার খাজনা আদায় হত। কিন্তু হাটটি চলে যাওয়ায় ব্যবসায়ীসহ আমরা বিপাকে পড়েছি।
উলিপুর পৌর মেয়র মামুন সরকার বলেন, এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনসহ একাধিকবার ইজাদারদের সাথে বৈঠক হলেও ফলপ্রসু হয়নি। এর আগে প্রায় ১০লাখ টাকার মাছ বাজারটি দুরের একটি বাজারে চলে গেছে। সেটি আর ফিরে আসেনি। এদিকে, ঐতিহ্যবাহী পাট হাটিটিও গাছ রোপনের মাধ্যমে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী বছর সরকার বড় অংকের রাজস্ব হারাবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপুল কুমার অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, এ বিষয়ে ইজারাদারসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সান নিউজ/এনকে