বিনোদন ডেস্ক: "তাকদুম তাকদুম বাজে বাংলাদেশের ঢোল" গানটি আমাদের নিয়ে যায় এক ভিন্নজগতে। মাতিয়ে তোলে আনন্দেঅ তবে কখনও দুঃখের সময়ও বাজে ঢোল। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঢোল বাজানো হয় উৎসব-আনন্দে। তবে আমার কথা শুধু ঢোল নিয়ে নয়। কথা হচ্ছে ঢোল নিয়ে যিনি এ গানটি লেখেছেন।
১৯৭৫ সালে দেহাবসান হলেও এখনও যেন বাংলাদেশের ঢোল বাজিয়ে চলেছেন শচীন দেব বর্মণ। যাকে উপমহাদেশে শচীন কর্তা বলেই সম্বোধন করা হয়। কিংবদন্তিতুল্য এই সংগীত পরিচালক, সুরকার, গীতিকার, লোকসংগীত শিল্পী ও গায়ক জন্মগ্রহণ করেন কুমিল্লায়। তিনি ছিলেন চন্দ্রবংশীয় মানিক্য রাজপরিবারের সন্তান। বাবা নবদ্বীপ চন্দ্রবর্মণ, মা মণিপুরের রাজকন্যা নিরুপমা দেবী। বাবার কাছেই সংগীতে হাতেখড়ি শচীন দেব বর্মণের।
কুমিল্লা জেলা স্কুল থেকে মেট্রিক, ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে আইএ এবং বিএ পাস করে, তিনি কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাস করেন। ১৯২৩ সালেই আকাশবাণী কোলকাতায় তিনি প্রথম গান করেন। ১৯৩১ সালে তার বাবা কোলকাতায় প্রয়াত হন, সে সময় তিনি ত্রিপুরার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছিলেন। ত্রিপুরা রাজ্যের উচ্চতর পদের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে, তিনি কোলকাতার ত্রিপুরা প্যালেসও ত্যাগ করে সামান্য একটি ভাড়া করা বাড়িতে চলে যান।
এ বিষয়ে নিজের আত্মজীবনীতে তিনি লিখেছেন, পিতার মৃত্যুর পর আমি যেন অগাধ জলে পড়ে গেলাম। এই অবস্থায় আমি আগরতলা বা কুমিল্লা গিয়ে থাকলে রাজকীয় আরামে ও নিশ্চিন্তে নিজেদের বাড়িতে বাস করতে পারতাম এবং রাজ্য সরকারের কোনো উচ্চপদে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারতাম। আমার বড় ভাইরা আমাকে তাই করতে বললেন। আমার কিন্তু এ ব্যবস্থা মনঃপূত হলো না। নিজে একলা সংগ্রাম করে, নিজে উপার্জন করে সঙ্গীত সাধনায় জীবন কাটিয়ে দেব। মনের মধ্যে একমাত্র এই আকাঙ্ক্ষা নিয়ে কলকাতার ত্রিপুরা প্রাসাদ ছেড়ে ভাড়া করা সামান্য একখানা ঘরে আমার আস্তানা বাঁধলাম।
বিলাসী জীবনের মোহ ছেড়ে, সংগীত সাধনার জন্য শচীন দেব বর্মণের এই ত্যাগ বৃথা যায়নি। ভারতের পদ্মশ্রী পদকসহ অনেক অনেক দেশি এবং বিদেশি পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত এই মানুষটি আজও উপমহাদেশের সংগীত ভূবণে "কর্তা" হিসেবেই বিবেচিত হয়ে আসছেন। ১৯০৬ সালের ১ অক্টোবর তৎকালীন বৃটিশ ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের কুমিল্লায় (বর্তমান বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলা) জন্মগ্রহণ করেন শচীন দেব বর্মণ। বাংলা গানের এই কিংবদন্তিকে, আমার শ্রদ্ধা, আমার ভালোবাসা।
তক্ষশীলা হতে সংগৃহীত
সান নিউজ/এফএআর