জাতীয়

অ্যাপে অনীহা, যাত্রী চলছে কন্ট্রাক্টে

রাসেল মাহমুদ : ২০১৬ সালে অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং সেবা হিসেবে উবার যাত্রা শুরুর পর দেশের পরিবহন খাতে হঠাৎ বড় ধরনের পরিবর্তন আসে। স্বল্প সময়ের মধ্যেই তুমুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই সেবা। উবারের পরেই দেশে পাঠাও, ওভাই, সহজসহ বেশ কিছু অ্যাপ ভিত্তিক রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান চালু হয়। আর এর মাধ্যমে হাজার হাজার বেকার তরুণের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়। কিন্ত বর্তমান সময়ে এসে অ্যাপ ভিত্তিক রাইড শেয়ারিংয়ে অনীহা তৈরি হয়েছে রাইডারদের।

তারা অ্যাপের বদলে কন্ট্রাক্টে যাত্রী নিতেই বেশি পছন্দ করেন। বিশেষ করে দেশের চলমান কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে মোটরসাইকেল রাইডারদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তাছাড়া রাইডশেয়ারিং সার্ভিসের মাধ্যমে মোটরসাইকেলে যাত্রী তোলার ওপর গত মাসে সরকার যে নিষেধাজ্ঞা দেয় তারপর এই প্রবণতা আরও বেড়েছে।

রোববার ও সোমবার ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় রাইড শেয়ার করেন এমন বাইকারদের সাথে কথা বলে এসব বিষয় জানা গেছে।

তারা বলছেন, প্রতিদিনই এ ব্যবসায় প্রতিযোগিতা বাড়ছে। নতুন নতুন বাইকার আসছে। কিন্তু সে তুলনায় যাত্রী বাড়ছে না। আবার অ্যাপে যাত্রী বহন করলে তার একটি বড় অংশ রাইড শেয়ারিং কোম্পানিকে দিতে হয়। এতে তাদের লস হয়ে যায়। তাই অ্যাপের থেকে কন্ট্রাক্টে যাত্রী নিতেই তারা বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। তাছাড়া কন্ট্রাক্টে ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করা যায় বলেও এটাতে তাদের আগ্রহ বেশি।

তবে কন্ট্রাক্টে যাত্রী বহনে ঝুঁকি রয়েছে বলে মনে করেন অনেক বাইকার। তাদের বক্তব্য- অনেক যাত্রী অবৈধ মালামাল নিয়ে গাড়িতে ওঠেন। তখন পুলিশি ঝামেলা হলে তারাও ফেঁসে যান। এরপরও তারা কন্ট্রাক্টে যাত্রী নিতে বেশি আগ্রহী।

এ অবস্থাকে যাত্রী জিম্মির সাথে শামিল করতে চান অনেক সেবাগ্রহীতা। তারা বলছেন, নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে অ্যাপে যেখানে ১৫০ টাকা ভাড়া আসে, কন্ট্রাক্টে সেই ভাড়া ডাবল বা তার বেশি দিয়ে যেতে হয়। নিরুপায় হয়েই তারা যেতে বাধ্য হয়।

যাত্রাবাড়ী এলাকায় কথা হয় বাইকরাইডার জামিলের সাথে। জামিল বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। করোনার ধাক্কায় চাকরি হারিয়ে তিনি এখন রাইড শেয়ার করেন। সাননিউজকে তিনি বলেন, অ্যাপের বড় সমস্যা কমিশন। যাত্রীর কাছ থেকে তারা যে টাকা পান তার ২০ থেকে ২৫ শতাংশ কোম্পানি কেটে নেয়। এ জন্য তিনি কন্ট্রাক্টে যাত্রী বহন করেন।

এটা অ্যাপের থেকে সুবিধাজনক বলে দাবি করেন জামিল। বলেন, অ্যাপে রিকোয়েস্ট আসলে যাত্রীকে পিক করতে কখনো দূরে যেতে হয়। যাত্রীর অবস্থান নিশ্চিত হওয়াও বেশ ঝামেলার। তার চেয়ে কন্ট্রাক্টে যাত্রী নিলে এসব ঝামেলা এড়িয়ে চলা যায়।

অনেকটা একই কথা বলেন, রাইডার আলতাফ ফারুক। তিনি বলেন, এখন বাইকারের তুলনায় যাত্রী কম। অ্যাপের কমিশন দিয়ে পোষায় না, তাই কন্ট্রাক্টে যাত্রী বহন করি। এতে কিছু টাকা আয় করা যায়।

আসিফুর রহমান নামের এক রাইডার জানান, কন্ট্রাক্টে বাইক চালালে যেমন সুবিধা হয়, তেমন আবার অসুবিধাও রয়েছে। সকল যাত্রীতো আর ভালো নয়, অনেক যাত্রী মাদকদ্রব্য সরবরাহ করে। আমার এক যাত্রী চেকপোস্টে মাদকসহ আটক হয়। তখন আমাকেও সমস্যায় পড়তে হয়। আর এমন ঝুঁকি নিয়েও বাইক চালাই।

বাইকরা বাড়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, করোনার কারণে অনেক মানুষই তাদের চাকরি হারিয়ে এই পেশায় যুক্ত হয়েছেন। এতে করে মোটরসাইকেলের সংখ্যা বাড়লেও যাত্রীর সংখ্যা বাড়েনি। বাইক বাড়ার কারণে অ্যাপ থেকে খুব কমসংখ্যক কল আসে। তাই আমরা অ্যাপ ছাড়াই বাইক চালাই।

তবে কন্ট্রাক্টে রাইড শেয়ার নিতে অনাগ্রহী যাত্রীর সংখ্যাই বেশি। অনেকটা বাধ্য হয়ে তারা এমন সেবা নিচ্ছেন বলে জানান যাত্রীরা।

বেসরকারি চাকরিজীবী শিউলি আক্তার সাননিউজকে বলেন, অফিস টাইমে এমনিতেই যাত্রীর চাপ বেশি থাকে। তখন সুযোগ বুঝে তারা ভাড়া চায়। উপায় না পেয়ে আমরাও বেশি ভাড়া দিয়ে যেতে বাধ্য হই।

সোহেল নামের এক যাত্রী বলেন, লকডাউন শুরুর পর অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং বন্ধ ঘোষণা করলেও বাস্তবে তা বন্ধ হয়নি। এসময় তারা জনগণের সেবা দিতেই সড়কে নামে। কিন্তু আমরা দেখলাম উল্টা চিত্র। সড়কে নেমে অনেক রাইডার ডাকাতের মতো আচরণ করেছে। ৫০ টাকার ভাড়া ১৫০টাকা নিয়েছে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, আমি কাজলা থেকে পল্টন পর্যন্ত অন্যান্য সময় ৫০ থেকে ৬০ টাকা দিয়ে যাই। গুলিস্তান পর্যন্ত যেতে আমার কখনোই ৫০ টাকার বেশি লাগে নাই। কিন্তু লকডাউন শুরুর পর ২০০ টাকা দিয়েও যেতে হয়েছে।

বাইক টানছে দূরপাল্লার যাত্রী

এদিকে ঈদকে সামনে রেখে ঘরমুখো মানুষের একটি অংশ বাহন হিসেবে ভাড়ার বাইক বেছে নিচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে তাদের গুনতে হচ্ছে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া। দূরপাল্লার বাস না চলায় বাইকাররা এ সুযোগ নিচ্ছেন বলে জানান যাত্রীরা।

একাধিক বাইকার জানিয়েছেন তারা ঢাকা থেকে কুমিল্লা, নরসিংদি এমনকি ভৈরব পর্যন্তও যাত্রী নিচ্ছেন। কতো টাকা ভাড়ায় যাত্রী যাচ্ছে জানতে চাইলে একজন বাইকার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, লকডাউন শুরুর পর যাত্রাবাড়ী থেকে কুমিল্লার পদুয়ারবাজার বিশ্বরোড পর্যন্ত ৭০০ থেকে ১০০০ টাকায় যাত্রী নিয়েছি। এখন সেই রেট কিছুটা বেড়েছে। ১২০০/১৩০০ পর্যন্ত নেয়া হচ্ছে।

ওই বাইকার আরও জানান, দূরপাল্লার যাত্রায় ঝুঁকি থাকলেও কিছু বাড়তি উপার্জনের আশায় তারা এটা করছে।

সাননিউজ/আরএম/আরএস

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ঝালকাঠি নার্সিং কলেজে অচল অবস্থা!

ঝালকাঠি প্রতিনিধি: ঝালকাঠি নার্সি...

লক্ষ্মীপুরে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা স্কিম চালু

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি: লক্ষ্মীপুরে...

ভোলায় বঙ্গবন্ধু সেজেছে ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা

ভোলা প্রতিনিধি: শ্রদ্ধা ও ভালোবাস...

অবৈধ ইটভাটায় হুমকির মুখে জীববৈচিত্র্য

রংপুর ব্যুরো: রংপুর জেলাসহ বিভাগে...

মোস্তফা হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ: মুন্...

অবৈধ ইটভাটায় হুমকির মুখে জীববৈচিত্র্য

রংপুর ব্যুরো: রংপুর জেলাসহ বিভাগে...

বাঁশ দিয়ে লেন ভাগ, তবু যানজটে দুর্ভোগ

রংপুর ব্যুরো: রংপুর মহানগরীতে নিয়...

রোজা রাখার উপকারিতা

লাইফস্টাইল ডেস্ক: রোজা রাখার উপরা...

ঝালকাঠি নার্সিং কলেজে অচল অবস্থা!

ঝালকাঠি প্রতিনিধি: ঝালকাঠি নার্সি...

মোস্তফা হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ: মুন্...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা