অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরে শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে দৃশ্যমান পরিবর্তন হয়নি; বরং সিদ্ধান্তহীনতা, প্রশাসনিক জটিলতা, গতিহীনতা শিক্ষাব্যবস্থাকে আরও দুর্বল করেছে। শিক্ষার বিভিন্ন পদে ব্যক্তির বদল হলেও কাজকর্মে তেমন পরিবর্তন হয়নি। দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ শোনা যায় আগের মতোই।
শিক্ষা বরাবরই বাজেট বরাদ্দে অবহেলার শিকার। অন্তর্বর্তী সরকারের অধীন চলতি অর্থবছরেও শিক্ষা খাতে মোট বাজেটের শতকরা হার বাড়েনি, বরং প্রাথমিক শিক্ষায় বরাদ্দ কমেছে। ফলে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার পথ আরও কঠিন হয়ে পড়ছে।
জাতীয় শিক্ষানীতির বাস্তবায়ন বা সংশোধনের কাজও থমকে আছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্র সংস্কারে ১১টি কমিশন হলেও শিক্ষা খাতে কোনো কমিশন গঠন করেনি অন্তর্বর্তী সরকার। প্রাথমিক শিক্ষায় একটি পরামর্শক কমিটি হলেও সুপারিশ বাস্তবায়নে অগ্রগতি সামান্য।
বরং এই কমিটির সদস্যদের মতামত উপেক্ষা করে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা আবার চালু করা হয়েছে ‘কোটার ভিত্তি’তে। পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে পঞ্চম শ্রেণির ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী। প্রাথমিকের পাশাপাশি শিক্ষাবর্ষের সাত মাস পর অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্যও জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা চালুর তোড়জোড় চলছে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরীর ভাষ্য, গণ-অভ্যুত্থান শুরু হয়েছিল শিক্ষা ও চাকরিতে কোটার বৈষম্য থেকে। কিন্তু বৃত্তি পরীক্ষায় সেই কোটা থাকছে। এর ফলে বিদ্যালয়গুলো নির্ধারিত এসব শিক্ষার্থীর ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করবে, যা বৈষম্য তৈরি করবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের ইতিবাচক সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে উপাচার্য নিয়োগে অনুসন্ধান কমিটি (সার্চ কমিটি) গঠন। এর মাধ্যমে শুধু গত মাসে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) নতুন উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর আগে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় পাঁচ মাস অচলাবস্থা ছিল।
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের উৎসব ভাতা বাড়ানোও একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। আগে তাঁরা মূল বেতনের ২৫ শতাংশ বোনাস পেতেন, এখন পাচ্ছেন ৫০ শতাংশ। তবে অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্টে ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা বন্ড দিলেও এর সুবিধা পেতে আরও প্রায় ছয় মাস লাগবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। ফলে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের টাকা পেতে ভোগান্তি রয়ে গেছে।
গত মার্চ থেকে শিক্ষা উপদেষ্টার দায়িত্বে আছেন অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরার (সি আর আবরার)। এ বিষয়ে জানতে চাইলে গণ-অভ্যুত্থানে তরুণদের অবদানের কথা উল্লেখ করে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বড় একটি অস্থিরতার মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। এরপর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে একটু সময় লেগেছে। এর মধ্যে আবার প্রতিষ্ঠান ভেদে কোথাও কোথাও অতীতের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। কোথাও সমস্যা মেটাতে কিছুটা সময় লেগেছে। আবার কোথাও সময় লাগেনি।
অধ্যাপক সি আর আবরার বলেন, শিক্ষা কমিশন না হওয়ার বিষয়ে তিনি বলতে পারবেন না। তবে কিছু বিষয়ে বিশেষ করে মাধ্যমিক শিক্ষাকে কীভাবে ঢেলে সাজানো যায়, তা নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে খুব কম উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা বলা যাবে না। আশা করি, আগামী পাঁচ-ছয় মাসে আমাদের নেওয়া প্রয়াসগুলো আরও বেগবান করতে পারব।
সাননিউজ/এসএ