জাতীয়

করোনার সাথে ডেঙ্গু আতঙ্ক ঢাকায়; নজর নেই প্রশাসনের

নিজস্ব প্রতিবেদক:

শীত কমতে না কমতেই শুরু হয়েছে মশার উপদ্রব। সাধারনত এই সময়ে মশার উপস্থিতি এতোটা দেখা না গেলেও এবার অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন রাজধানীবাসী। ডেঙ্গু আতঙ্কে এরই মধ্যে উৎকণ্ঠা সবার মাঝে। এডিস মশাবাহিত এ রোগ যে এখন সারাবছরের সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে যাচ্ছে, সে কথা আগেই জানিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞরা। এবার বর্ষার আগেই তার প্রমাণও মিলেছে।

পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩৮ জন। আর এ বছর জানুয়ারিতে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৯৭ জন। আর ফেব্রুয়ারির প্রথম ১২ দিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালের বিছানায় ঠিকানা হয় ২২৬ জনের। এ বছর জানুয়ারি মাসে নগরীতে এডিস মশার উপস্থিতি যেমন বেড়েছে, ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগির সংখ্যাও পূর্বের চেয়ে পাঁচগুণ।

এর আগে ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে ডেঙ্গুর রোগীর দেখা তেমন একটা পাওয়া না গেলেও তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে এডিসবাহিত মশাও। নগরবাসী বলছেন, দিনের বেলা কোনোমতে পার হলেও সন্ধ্যার আগে থেকে শুরু হয় মশার উপদ্রব।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ‘ডেঙ্গু সার্ভিলেন্স অ্যান্ড প্রেডিকশন প্রোজেক্ট’এর আওতায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মশার উপস্থিতি নিয়ে গবেষণা করছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ। দু-বছর ধরে চলবে এই কার্যক্রম।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জানুয়ারি মাসে রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার উপস্থিতি ঝুঁকিপূর্ণ। তাদের জরিপ জানাচ্ছে, জানুয়ারিতে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরীবাগ ও শাহবাগ এলাকায় মশার ব্রুটো ইনডেক্স ছিল সবচেয়ে বেশি, ২৬ দশমিক ৬৭। এছাড়া লালমাটিয়া-মোহাম্মদপুরে ১০, গুলশান-বনানীতে শূন্য, বাসাবো-খিলগাঁওয়ে ১৩ দশমিক ৩৩, শাঁখারীবাজার ও পাটুয়াটুলীতে ১৩ দশমিক ৩৩। উল্লেখ্য, মশার লার্ভার উপস্থিতি হিসাব করা হয় ব্রুটো ইনডেক্সের মাধ্যমে।

ফেব্রুয়ারিতে এখন পর্যন্ত গুলশান-বনানী এবং লালমাটিয়া-মোহাম্মদপুর এ দুটি অঞ্চলের তথ্য নেওয়া হয়। তাতে দেখা যায়, গুলশানে ব্রুটো ইনডেক্স বেড়ে ২০ হয়েছে। লালমাটিয়ায় কমে হয়েছে ৬ দশমিক ৬৭।

প্রতি একশ প্রজনন উৎসের মধ্যে এডিস মশার লার্ভা বা পিউপা ২০টি বা তার বেশি যদি পাওয়া যায়, তাহলে সেটাকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ উপস্থিতি’ বলা হচ্ছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, জানুয়ারিতে মশার এতটা উপস্থিতি ভালো লক্ষণ নয়। জানুয়ারিতে ব্রুটো ইনডেক্স পাঁচের নিচে থাকার কথা। কিন্তু গত বছর জানুয়ারির চেয়ে এ বছর জানুয়ারিতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা অনেক বেশি। তার মানে এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপও বেশি হতে পারে।

এদিকে গেল বছরে ডেঙ্গু যখন মহামারীতে রূপ নিতে যাচ্ছিলো, মশা নিয়ন্ত্র করতে না পারার কারণে তখন আদালতের কাঠগড়াতেও উঠতে হয় ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনকে। তখন তারা নিজেদের ব্যার্থতা স্বীকার করে পরবর্তীতে আরও বেশি দায়িত্বশীল হবার কাথা জানায়। কিন্তু আবারও সেই একই অভিযোগ এরই মধ্যে। মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম অপ্রতুল বলে ক্ষোভ জানাচ্ছের ঢাকার মানুষেরা।

পরীবাগ এলাকার বাসিন্দা শিরীন সুলতানা বলেন, গত বছর ডেঙ্গুতে এতো মানুষের মৃত্যূ হওয়ার পরও এখনও উদাসীন সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা। এখনইতো দিনে-রাতে মশা গুনগুন করে।

বিদেশ ফেরৎ সাহাদাৎ কুটন বললেন, বিমান থেকে নেমে ভেতরে আসার সঙ্গে সঙ্গে মশার কামর খেয়েছি। এই যে দেখুন হাত লাল হয়ে গেছে।

উত্তরা এলাকার অবস্থা আরও বেশি ভয়াবহ। সন্ধ্যার আগে থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়তে থাকে মশা। এক জায়গায় বেশিক্ষণ দাঁড়ানোর উপায় থাকে না।

মশার উৎপাত নিয়ে ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মমিনুর রহমান মামুন বলেন, কিউলেক্স ও এডিস মশার অন্যতম প্রজননস্থল সরু নর্দমাগুলোতে মশার ওষুধ ছিটানো যায় না। সেখানে কীভাবে কাজ করব সেটা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।

তবে ১৫ ফেব্রুয়ারি শনিবার মশা নিধনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন দুই সপ্তাহব্যাপী ক্র্যাশ প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছে।

প্রোগ্রাম সংশ্লিষ্টরা জানান, নিয়মিত ফগার মেশিনের পাশাপাশি ডিএনসিসির আনা নতুন তিন ধরনের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হবে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অনেক কর্মীর অভিযোগ, তারা ওই মেশিন চালাতেই পারেন না। দেয়া হয়নি কোন প্রশিক্ষণ।

এ ব্যাপারে উত্তর সিটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, যাদের থেকে মেশিন কেনা হয়েছে তারা প্রশিক্ষণ দিয়ে গেছে। এছাড়া আমাদের ওয়ারেন্টি পিরিয়ড থাকায় তারাই সমস্যা ঠিক করে দিবে।

ডিএনসিসি’র প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মমিনুর রহমান মামুন বলেন, এবারও আমাদের ডেঙ্গুর শঙ্কা রয়েছে। তাই এটাকে বিবেচনায় রেখেই আমরা বছরের শুরু থেকে কার্যক্রম হাতে নিয়েছি।

গুলশান-বনানী-ধানমন্ডির মতো অভিজাত এলাকাগুলোতে মশার ওষুধ ছেটানো হয় বেশি। কিন্তু সাধারন মানুষের বসবাসের স্থানগুলোতে এই কায়ক্রম দেখা যায় কালেভদ্রে। এমন অভিযোগ মোহাম্মদপুর-লালমাটিয়া-বাসাবো-খিলগাঁও এলাকার বাসিন্দাদের। স্থানীয়রা বলছেন, মশা মারা হয় শুধু ভদ্র পল্লিতে, গরীব মরলে কার কি আসে যায়।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে ডেঙ্গু ভেঙেছে বাংলাদেশের ইতিহাসের সব রেকর্ড। সে বছর এ রোগে আক্রান্ত হন ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন। সরকারি হিসেবেই মৃত্যূর সংখ্যা জানানো হয় ১৬৪ জনের।

সান নিউজ/সালি

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

আজ বিশ্ব বই ও কপিরাইট দিবস

সান নিউজ ডেস্ক: আজ ২৩ এপ্রিল, বিশ...

কাতারের সঙ্গে ১০ চুক্তি-সমঝোতা সই 

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ ও কাতা...

খাগড়াছড়িতে গৃহকর্মীকে জিম্মির অভিযোগ 

আবু রাসেল সুমন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধিঃ

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি দিবস

সান নিউজ ডেস্ক: আজকের ঘটনা কাল অতীত। প্রত্যেকটি অতীত সময়ের স...

আড়িয়ল ইউপিতে উপ-নির্বাচন

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি:

কার্বণ মিল ও সীসা কারখানা বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন

কামরুল সিকদার, বোয়ালমারী প্রতিনিধি:

কক্সবাজারে দুই জেলের লাশ উদ্ধার 

জেলা প্রতিনিধি: কক্সবাজার জেলার চ...

আড়িয়ল ইউপিতে উপ-নির্বাচন

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি:

খাগড়াছড়িতে গৃহকর্মীকে জিম্মির অভিযোগ 

আবু রাসেল সুমন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধিঃ

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা