ছবি: সংগৃহীত
মতামত

জয় করতে হবে ভালোবাসা দিয়েই

প্রভাষ আমিন: ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। সব মানুষের কাছে প্রিয় নাম। তবে ‘সব মানুষের প্রিয়’ এটা বলা বোধহয় পুরোপুরি ঠিক হবে না। যারা সাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাস করে, যারা জঙ্গিবাদকে প্রশ্রয় দেয়, যারা প্রগতির বিরোধী, অন্ধকারই যাদের শক্তির উৎস; তারা জাফর ইকবালকে পছন্দ করে না। তাঁকে হত্যা করতে চায়। একবার হামলায় তিনি অল্পের জন্য বেঁচেছেন। তবে যারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে, যারা অসাম্প্রদায়িক, যারা প্রগতির পক্ষে, যারা বিজ্ঞান ভালোবাসেন, যারা আলোর পথের যাত্রী; তাদের কাছে ড. জাফর ইকবাল প্রাতঃস্মরণীয়। বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের কাছে তিনি দেবতুল্য। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন উচ্চশিক্ষার জন্য। সুযোগ ছিল সেখানেই নিশ্চিন্ত জীবনযাপনের। কিন্তু সব প্রলোভনকে পায়ে দলে তিনি ফিরে আসেন দেশে। ঢাকার কোনও বিশ্ববিদ্যালয় নয়, সস্ত্রীক তিনি যোগ দেন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রান্তিক এই বিশ্ববিদ্যালয়টি দেশজুড়ে খ্যাতি পেয়েছে ড. জাফর ইকবালের কারণেই।

শিশু-কিশোরদের বিজ্ঞানমনস্ক করতে, শিক্ষাকে আনন্দময় করতে, ভর্তি পরীক্ষার ভোগান্তি কমাতে তার চেষ্টার অন্ত নেই। শিক্ষকতা এবং শিক্ষা আন্দোলনের পাশাপাশি বিরামহীনভাবে চলছিল তার লেখালেখি। বড় ভাই হুমায়ুন আহমেদের পর জাফর ইকবালই বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক। শিশু-কিশোরদের পছন্দের তালিকায় তিনি এক নম্বর। তাঁর লেখালেখিতে উঠে এসেছে মুক্তিযুদ্ধ, অসাম্প্রদায়িকতা, বিজ্ঞান। পাশাপাশি চলমান বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে তিনি নিয়মিত কলাম লিখেছেন, তাতে তুলে ধরেছেন নানা অসঙ্গতি। বছর তিনেক আগেই শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর নিয়ে থিতু হয়েছেন ঢাকায়। কিন্তু অবসর নিলেই কাজের মানুষের অবসর মেলে না। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় যখন আন্দোলনে উত্তাল, তখন কেঁদে ওঠে তার প্রাণ। ‘আমার প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়টি ভালো নেই’ শিরোনামে লিখলেন তাঁর মনোবেদনার কথা। কিন্তু শিক্ষার্থীরা যখন আমরণ অনশনে মরতে বসেছে, একের পর এক উদ্বেগের দিন পেরিয়ে যাচ্ছে, কেউই যখন অনড় শিক্ষার্থীদের অভিমান ভাঙাতে পারছিল না; তখন বুধবার ভোর রাতে ঢাকা থেকে প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটে গেলেন ড. জাফর ইকবাল। ১৬৩ ঘণ্টা পর শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙালেন ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। গোটা জাতির ওপর চেপে বসা একটি অস্বস্তির পাথর নেমে গেল। ধন্যবাদ প্রিয় জাফর ইকবাল।

তিন বছর আগে অবসরে যাওয়া একজন শিক্ষক যেটা পারলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য, প্রক্টর, শিক্ষকরা সেটা পারলেন না কেন? আমি এই প্রশ্নটার উত্তর খুঁজছি। অনেকে বলছেন, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগের একদফা আন্দোলনে যুক্তির চেয়ে আবেগ বেশি। এটা কিন্তু অস্বাভাবিক নয়। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে আবেগ থাকারই কথা। কিন্তু সেই আবেগকে ধারণ করে মমতার হাত নিয়ে তাদের পিঠে হাত বুলিয়ে দেওয়ার মতো একজন শিক্ষকও কি সেখানে নেই? বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদ লিজার বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছিলেন হলের কয়েক শ’ ছাত্রী। একটি হলের শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ প্রশমনের জন্য উপাচার্য নয় প্রক্টরের উদ্যোগই যথেষ্ট হওয়ার কথা। তাতো হলোই না, প্রভোস্টের পদত্যাগের আন্দোলন বদলে গেলো উপাচার্যের পদত্যাগের একদফা আন্দোলনে। এটা অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, উপাচার্য, শিক্ষকদের ব্যর্থতা। গত সপ্তাহে এই কলামে ‘ভয় দেখিয়ে জয় করা যায় না’ শিরোনামে আমি লিখেছিলাম ‘আমার মনে হয়, শিক্ষার্থীদের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে, তাদের পিঠে মমতার স্পর্শ বুলিয়ে, তাদের ক্ষোভের জায়গাটা অনুধাবন করেই সহজে এই সমস্যার সমাধান করা যেত। ভয় দেখিয়ে নয়, জয় করা যেত ভালোবেসেই। কিন্তু আমরা গায়ের জোরের ওপর বেশি নির্ভর করতে গিয়ে ভালোবাসতেই ভুলে গেছি।’

ড. জাফর ইকবাল ঢাকা থেকে ছুটে গিয়ে আবারও প্রমাণ করলেন, শিক্ষার্থীরা যত আবেগীই হোক, যত অনড়ই থাকুক; ভালোবেসে তাদের হৃদয়ও জয় করা যায়।

আগেই বলেছি, আন্দোলনটা শুরু হয়েছে প্রভোস্টের পদত্যাগের দাবিতে। যেটা পরে বদলে গেছে উপাচার্যের পদত্যাগের একদফা দাবিতে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ এভাবে হামলা চালাতে পারে; লাঠি-গুলি-টিয়ার গ্যাস-সাউন্ড গ্রেনেড নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে; এটা আসলে অবিশ্বাস্য। আন্দোলন বদলে যাওয়াটা সেই অবিশ্বাস আর অভিমান থেকেই আসা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যুক্তির চেয়ে আবেগ বেশি, তারচেয়ে বেশি অভিমান। ‘আমাদের ক্যাম্পাসে আমাদের শিক্ষকদের সামনে পুলিশ এভাবে আমাদের ওপর হামলা করতে পারলো’ এই তীব্র অভিমানই তাদের অনমনীয় করে তুলেছে। আমরণ অনশন ভাঙ্গলেও উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি থেকে এখনও সরে আসেনি তারা। তবে জাফর ইকবাল পথ দেখিয়ে দিয়েছেন। ছাত্রলীগ দিয়ে হামলা, পুলিশ দিয়ে হামলা, পুলিশের মামলা, আন্দোলনের সমর্থকদের গ্রেফতার, বিকাশ বন্ধ, খাবার বন্ধ করে আন্দোলন দমানো যাবে না। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলতে হবে, তাদের অভিমানের জায়গাটা বুঝতে হবে। জয় করতে হবে ভালোবাসা দিয়েই।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি অবশ্য সে পথেই হাঁটলেন। সব দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে আন্দোলন প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের প্রশংসা করেছেন। শিগগিরই তাদের সঙ্গে আলোচনার কথা বলেছেন। শুধু শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় নয়, সব বিশ্ববিদ্যালয়ে বিরাজমান অভিন্ন সমস্যার যৌক্তিক সমস্যার আশ্বাস দিয়েছেন। আশ্বাস দিয়েছেন মামলা প্রত্যাহার, গ্রেফতার করা সাবেক শিক্ষার্থীদের মুক্তির। তবে শিক্ষামন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দেয়নি শিক্ষার্থীরা। আমরণ অনশন ভাঙলেও উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে অনড় তারা। তবু শিক্ষামন্ত্রীর কণ্ঠে যে মমতার ছোঁয়া ছিল, তাতেই যেন সমস্যার সমাধান হয়। শিক্ষার্থীদের সব যৌক্তিক দাবি যেন মেনে নেওয়া হয়। লেখক: হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ

সাননিউজ/এমএম

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

নোয়াখালীতে ভূমি দুস্যুর বিরুদ্ধে মানববন্ধন 

নোয়াখালী প্রতিনিধি: নোয়াখালীর কোম...

কেশবপুরে নির্বাচনী কার্যালয়ের শুভ উদ্বোধন

আব্দুর রাজ্জাক সরদার, কেশবপুরঃ আগামী ০৮ ই মে ২০২৪, রোজ বুধবা...

আফ্রিকায় ভারী বৃষ্টি, নিহত ১৫৫

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আফ্রিকায় গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ভারী বৃষ্টি হ...

ফজলুল হকের মাজারে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

নিজস্ব প্রতিবেদক: শেরে বাংলা এ কে...

ফসলের ক্ষতি করে চলছে অবৈধ ব্যাটারি ইন্ডাস্ট্রি

কামরুল সিকদার, বোয়ালমারী (ফরিদপুর):

থাইল্যান্ডের প্রতি বিনিয়োগের আহ্বান 

নিজস্ব প্রতিবেদক: থাইল্যান্ডের ব্...

ফসলের ক্ষতি করে চলছে অবৈধ ব্যাটারি ইন্ডাস্ট্রি

কামরুল সিকদার, বোয়ালমারী (ফরিদপুর):

আজ শেরে বাংলার ৬২তম মৃত্যুবার্ষিকী

নিজস্ব প্রতিবেদক: আজ অবিভক্ত বাংল...

প্রাথমিক বিদ্যালয় খুলছে কাল

নিজস্ব প্রতিবেদক: তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে রোববার (২৮ এপ্রিল)...

আজ ঢাকার বায়ু অস্বাস্থ্যকর

নিজস্ব প্রতিবেদক: আজ রাজধানী ঢাকার বায়ু অস্বাস্থ্যকর অবস্থায়...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা