তুষার আবদুল্লাহ
মতামত

পঞ্চাশে পক্ষ একটাই: বাংলাদেশ

তুষার আবদুল্লাহ

বাংলাদেশ আমার অগ্রজ। আমার তিন বছর আগে তাঁর জন্ম। আমার বেড়ে ওঠা তাঁর হাত ধরে। এখনও ধরে আছি। বাংলাদেশ কী করে জন্ম নিলো, সেই জন্ম প্রক্রিয়ার গল্প কানে আসতে শুরু করে, বলা ভালো বুঝতে শুরু করি স্কুলে যাওয়ার কিছু আগে থেকে। পরিবারে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া মানুষ যেমন ছিল, তেমনই সেই সময়ে স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত মানুষও ছিলেন। তাদের মুখ থেকে শোনা হতো যুদ্ধ দিনের আখ্যান। কোনও কোনও ঘটনার বর্ণনা শুনে সেই বয়সেও শিহরিত হয়েছে। আমার ছোট চাচার মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার জন্য বাড়ি খেকে পালিয়ে যাওয়ার কাহিনি যেমন এক প্রকার আন্দোলিত করতো তখনকার কিশোর মন, তেমনই পুলিশ কর্মকর্তা আরেক চাচার সৈয়দপুরের অবাঙালিদের হাতে নৃশংশ ভাবে প্রাণ হারানোর ঘটনা এখনও বিমর্ষ করে।

ছেলেবেলায় তাঁর শহীদ হওয়ার কাহিনি আমার মন বাড়িতে যে আঘাত করেছিল, তা এখনও প্রতিধ্বনিত হয়। শৈশবের বেড়ে ওঠা কলোনিতে। সেখানে প্রায়ই প্রতিবেশীদের আড্ডায় মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলো উঠে আসতো। কে, কোথায়, কীভাবে শহর ছেড়ে পালিয়েছিলেন, আশ্রয় নিয়েছিলেন কোথায়, পাক হানাদার বাহিনী থেকে প্রাণে রক্ষা পাওয়া এবং মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার গল্পও শুনেছি। এ ধরনের আলাপে কেউ কেউ মুক্তিযুদ্ধের সময়কে ‘গন্ডগোল’ বা ‘গন্ডগোলের বছর’ও বলতেন। যতবার ‘গন্ডগোল’ শব্দটি উচ্চারিত হতো, ততবার আমার মা প্রতিবাদ করে বলতেন, একাত্তরে গন্ডগোল হয়নি। যুদ্ধ হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধ।

আমার স্কুলের এক শিক্ষককেও মা প্রতিবাদ করে বলেছিলেন, বাচ্চাদের সত্য কথা জানান। ওই শিক্ষক মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে আমাদের ভুল ও বিকৃত গল্প বলতেন।

আমাদের বেড়ে ওঠার সময়টায় সরকারি গণমাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এসেছে সম্পাদিত হয়ে। বিকৃত সম্পাদনা। তবে সরকারি গণমাধ্যমের বাইরে, সাংস্কৃতিক কর্মী ও লেখকরা তাদের ভঙ্গিতে মুক্তিযুদ্ধকে প্রতিপাদ্য করে তুলতেন। তা থেকে আমরা মুক্তিযুদ্ধের নির্যাস নেওয়ার চেষ্টা করেছি। তবে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সময় আমাদের লেখক, শিল্পী, সাংস্কৃতিক কর্মীরা স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিকে বিভিন্ন মাত্রায় সামনে নিয়ে এসেছিলেন। এটা আরও প্রকাশ্য হয় ১৯৯৬’র নির্বাচনে স্বাধীনতা বিরোধীদের বয়কট করার ডাকে।

১৯৯৬ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসে, শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধের মূল পটভূমি এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস নিয়ে কাজ শুরু করার। কিন্তু পাঁচ বছর সময়কাল এজন্য খুব সামান্য সময়। ২০০৮ থেকে ক্ষমতার ধারাবাহিকতা থাকায় মুক্তিযুদ্ধ এবং পটভূমিকে বহুমাত্রিকভাবে দেখার এবং মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী প্রজন্মের কাছে নিয়ে আসার সুযোগ হয়। দাবি করা অন্যায় হবে, সেই উপস্থাপন বা ইতিহাসের বয়ান নির্মোহ থেকেছে। কারণ যখন যে, যেই অবস্থান থেকে মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে কথা বলেছেন। তখন কথা বলেছেন নিজেকে অবলম্বন বা মুখ্য করে। বিজয়ের ৫০ বছরে নির্মোহ ইতিহাস হাতে পেয়ে যাওয়ার প্রত্যাশাটিও অযৌক্তিক। নির্মোহ ইতিহাস পেতে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকেও হয়তো আরও দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু বিকৃত ইতিহাসের বয়ান বা লেখার দায় থেকে আমরা বা আমাদের আগের প্রজন্ম মুক্তি পাবে না।

এখানে মুক্তিযুদ্ধ যারা করেছেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন, তারা দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেননি। মুক্তিযুদ্ধের বয়ান তারা দিয়েছেন রাজনৈতিক অন্ধত্ব থেকে। যা বিকৃত করেছে ইতিহাস।

বিজয়ের পঞ্চাশ বছরে এসে আমাদের এখন স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছতে হবে, এই রাষ্ট্রে একটিই পক্ষ থাকবে, বাংলাদেশ। আমাদের কিশোর- তরুণদের বাংলাদেশের বিপক্ষে যাওয়ার তো কোনও সুযোগ নেই। জন্মের পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে এসে, আমরা কেন আমাদের সন্তানদের জন্য সেই মঞ্চ তৈরি করে দেবো? বাংলাদেশের বিজয় যাত্রার কান্ডারীতো তারাই।

পরম্পরায় বিজয় যাত্রার অগ্নিমশাল থাকবে তাদের হাতেই। একাত্তরে যারা স্বাধীনতা বিরোধী ছিল, তাদেরকে পথিকৃৎ ভাবার সুযোগ কেন আমি, আমরা আমাদের সন্তানদের দেবো।

একাত্তরের যোদ্ধা এবং এখনকার অর্থনৈতিক বিজয় অর্জনের যোদ্ধাই হবে তাদের পথিকৃৎ। এই সত্য অন্বেষণের দায়িত্বটি যেমন পরিবারের, তেমনি রাজনীতিরও। বিজয় ৫০ উদযাপন, সুন্দর ও গৌরবময় হবে তখনই, যখন ওই দুই পক্ষ দায়িত্বশীল আচরণ করবে। বিজয়ের সূবর্ণ জয়ন্তিতে তাদের শুভ বুদ্ধির উদয় প্রত্যাশা করছি। একই সঙ্গে প্রত্যাশা থাকবে আমাদের সন্তানদের মাঝেও মাতৃভূমির প্রতি দায়িত্ববোধ জাগ্রত হবে।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী

সান নিউজ/এফএইচপি

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

খাগড়াছড়িতে গৃহকর্মীকে জিম্মির অভিযোগ 

আবু রাসেল সুমন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধিঃ

আড়িয়ল ইউপিতে উপ-নির্বাচন

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি:

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি দিবস

সান নিউজ ডেস্ক: আজকের ঘটনা কাল অতীত। প্রত্যেকটি অতীত সময়ের স...

কার্বণ মিল ও সীসা কারখানা বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন

কামরুল সিকদার, বোয়ালমারী প্রতিনিধি:

কার্বণ মিল ও সীসা কারখানা বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন

কামরুল সিকদার, বোয়ালমারী প্রতিনিধি:

কক্সবাজারে দুই জেলের লাশ উদ্ধার 

জেলা প্রতিনিধি: কক্সবাজার জেলার চ...

আড়িয়ল ইউপিতে উপ-নির্বাচন

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি:

খাগড়াছড়িতে গৃহকর্মীকে জিম্মির অভিযোগ 

আবু রাসেল সুমন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধিঃ

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা