নিজস্ব প্রতিবেদক : উচ্চস্তরের বায়ু দূষণের কারণে মানুষের শ্বাসযন্ত্র ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দেয়। জন্ম নেয় নানা ঠাণ্ডাজনিত রোগ, যা তাদের কোভিড-১৯ তথা করোনাভাইরাসকে আরও উজ্জীবিত করে তোলবে।
আগের বছরগুলোর ন্যায় এবারও শীতের শুষ্ক মৌসুমে ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকা শহর গুরুতর বায়ু দূষণের শিকার হতে পারে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়েছেন যে, এ বছর শীতে দূষিত বায়ু করোনাভাইরাসকে মৃত্যুর হারের বিবেচনায় আরও মারাত্মক করে তুলতে সহায়তা করতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) সম্প্রতি সতর্ক করে দিয়েছে, যেসব শহরে বায়ু দূষণের মাত্রা বেশি তাদের করোনা মহামারির প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, শীতকালে বায়ু দূষণের পাশাপাশি ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারকে অবিলম্বে কার্যকর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা দেখেছেন, প্রতি ঘন মিটার বায়ুতে বিপজ্জনক সূক্ষ্ম ধুলা ও বস্তুকণা পিএম ২.৫ যদি মাত্র এক মাইক্রোগ্রাম বৃদ্ধি পায় তাহলে সেটি কোভিড-১৯-এ মৃত্যুর হার ৮ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়। নেদারল্যান্ডসের আরেকটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, দূষণের সংস্পর্শে আসার মাত্রায় সামান্য বৃদ্ধি মৃত্যুর হার ২১ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. বেনজীর আহমেদ বলেন, ধুলার মারাত্মক দূষণ, কম আর্দ্রতা, কম সূর্যের আলো, ভিটামিন ডি এর হালকা ঘাটতি ও দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কারণে মানবদেহে শীতকালে অন্যান্য শ্বাসকষ্টের ভাইরাস এবংভাইরাস জাতীয় রোগ প্রভাব বিস্তার করতে পারে। তিনি জানান, যেহেতু শীতল আবহাওয়ার সময় আর্দ্রতা প্রচণ্ড হ্রাস পায় এবং ধুলার দূষণ মারাত্মক মোড় নেয়।
এ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেছেন, বয়স্ক ব্যক্তিরা এবং যাদের দীর্ঘকালীন শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা রয়েছে তারা শীতের সময় দূষণ এবং করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। তিনি বলেন, সরকারের উচিত করোনা এবং দূষণ উভয় প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি ডা. ইকবাল আর্সলান জানান, বায়ু দূষণের সংস্পর্শ শ্বাসকষ্ট এবং হৃদরোগ বৃদ্ধিতে অবদান রাখে এবং তা শেষ পর্যন্ত করোনার গুরুতর লক্ষণগুলোর ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক ডা. এমএ মতিন বলেন, নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত শুকনো মৌসুমে ধুলার দূষণ তীব্র হয়ে উঠবে, যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। শীতকালীন অন্যান্য রোগের পাশাপাশি করোনাভাইরাসকে সহায়তা করতে পারে। মানুষ যখন করোনার পাশাপাশি ঠাণ্ডায় আক্রান্ত হবেন, তখন তারা কাশি এবং হাঁচি দিয়ে দ্রুত করোনার ফোঁটা ছড়িয়ে অন্যকে সংক্রমিত করবেন।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে শুষ্ক মৌসুমে ধুলার দূষণ প্রতিরোধে ভোরবেলা অবশ্যই সঠিকভাবে সড়ক পরিষ্কার এবং যথাযথ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। ধুলা ছড়িয়ে পড়া বন্ধে তাদের নিয়মিত রাস্তায় পানি ছিটানো উচিত। রাস্তাঘাট ও ভবন নির্মাণের ফলে সৃষ্ট ধুলাবালি নিয়ন্ত্রণের জন্য নির্মাণকারীরা যাতে নির্মাণের এলাকা ঢেকে রাখেন এবং পানি ছিটানোর পাশাপাশি দূষণ সংক্রান্ত নিয়মাবলী মেনে চলেন, তা নিশ্চিত করতে সরকারের কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করা উচিত।
বিভিন্ন শিল্পকারখানা, যানবাহন, নৌযান ও নিকটস্থ ইটভাটা থেকে দূষণ এবং কালো ধোঁয়া নির্গমন রোধ করার জন্য কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সব শিল্পকারখানাকে বায়ু দূষণ কমাতে ইটিপি ব্যবহারে বাধ্য করতে হবে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
সান নিউজ/এসএ/এস