শিক্ষা

করোনা দুর্যোগে শিক্ষা ব্যবস্থার ছন্দপতন

ববিতা সুলতানা: বিশ্বজুড়ে এখন বড় আতঙ্কের নাম প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)। ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চীনের ‘উহান’প্রদেশে করোনা ভাইরাস এর প্রথম সংক্রমণ দেখা দেয়। এরপর থেকেই ভাইরাসটি বিশ্বজুড়ে মহামারী আকার ধারণ করে। এই ভাইরাসের কারণে মানুষ এখন অনেকটা গৃহবন্দী জীবনযাপন করছে।

এই ভাইরাসের প্রভাব শুধু বিশ্বের অনন্যা দেশেই নয় আমাদের বাংলাদেশেও পড়েছে। এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গত বছর (২০২০ইং) মার্চ মাস থেকেই দেশের বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয় সরকার। শিক্ষার ক্ষেত্রে করোনা কেবল সাময়িক প্রভাব ফেলেনি, এটি সৃষ্টি করছে শিখনের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি।

বিশ্ববিদ্যালয় সহ অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাদের পাঠদানের মাধ্যম হিসেবে ইন্টারনেটকে ব্যবহার করছে। তবে সব স্তরের শিক্ষার্থীরা সমান সুবিধা পাচ্ছেনা। অনলাইন ক্লাস করো জন্য আশীর্বাদ, কারো জন্য অভিশাপ বলা যায়। অনেক শিক্ষার্থী বিভিন্ন সমস্যার কারণে ক্লাসে উপস্থিত হতে পারছেনা। অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে ক্লাসের যথেষ্ট চাহিদা অপূর্ণই থেকে যাচ্ছে। অনলাইন ক্লাস তাত্ত্বিক জ্ঞান মিললেও ব্যবহারিক জ্ঞান থেকে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে।

করোনা শুরু থেকে দেশে যখন জরুরী অবস্থার পরিবেশ তৈরি হয় তখন থেকে সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো সাধারণ ছুটির আওতাভুক্ত করে বন্ধ করে দেয়। তখন অন্য সব ক্ষেত্রে একই অবস্থা জারি করে। এতে যেন সংক্রমণ না ছাড়ায়। কিন্তু কয়েক সপ্তাহ পর ধীরে ধীরে সব সেক্টর চালু করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি, গণ-পরিবহন ভাড়া ও স্বাভাবিক করা হয়েছিল। অর্থাৎ সীমিত কথাটি রইল না কোথাও।

কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন আসেনি। এর পিছনে কারণ কি?

করোনা কি শুধু মাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই? আর কোথাও নেই?

যে সকল শিক্ষার্থীগণ ফাইনাল ইয়ার এ আছেন তাদের সমস্যা সব চেয়ে বেশি হবে। তাদের কোমর এমন ভাবে ভেঙে যাবে যে, নতুন উদ্যমে পড়া লেখা করার সাহস সঞ্চয় করতে সক্ষম হবে না। যদি সক্ষম হন,তবে ততদিনে অনেক বেশি সময় নষ্ট হয়ে যাবে।বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া লেখা কেবল বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে হয় না। কেবল বিসিএস -ই একজন শিক্ষার্থীর টার্গেট তা কিন্তু নয়। বরং বহু শিক্ষার্থী আছেন যারা বিদেশে পড়ালেখা করার স্বপ্ন বুনেছেন।

বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো করোনাকে পুঁজি করে শিক্ষা-কার্যক্রম বন্ধ রাখেনি। তারা যথাযথ ব্যবস্থা করে সেমিস্টার শেষ করেছে। সামনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এডমিশন এর আবেদন শুরু হবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে,বাংলাদেশের যে সকল শিক্ষার্থী এ সময় বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর শিক্ষা নিতে আবেদন করার কথা ভেবেছে, তারা তা করতে পারবে না। কারণ তার সেমিস্টার শেষ হয়নি, ফলাফল আসেনি। ফলে কি হবে?

এ সকল শিক্ষার্থীর বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে। তখন দেখা যাবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আন্তর্জাতিক শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে একবছর পিছিয়ে পড়ে যাবে। নভেম্বর বা ডিসেম্বর যে সকল শিক্ষার্থী বাহিরে যাওয়ার অদম্য ইচ্ছা নিয়ে অপেক্ষা করছিলো তার এই ফল মিস করবে। ফলে অযথা সময় নষ্ট হওয়াতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়বে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ক্ষতি একদিকে যেমন ধীরগতি, অন্যদিকে তেমনিই সুদূরপ্রসারী। আর তাই দীর্ঘ এক বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের সুদূরপ্রসারী প্রভাব হয়তো এখন আমরা পরিমাপ করতে পারছি না। তাই বলে এটা যে অনুপস্থিত, এমনটা ভাবার কোনো যুক্তি নেই।

একটু ভাবুন তো, একটি স্কুল পড়ুয়া ছেলে বা মেয়ে কিভাবে দীর্ঘ ১২ মাস পার করলো। শহরে না হয় অনলাইনের কল্যাণে স্কুলের সঙ্গে ছাত্র ছাত্রীরা সংযুক্ত আছে। কিন্তু লাখ লাখ ছাত্র-ছাত্রী যারা গ্রামে বাস করে, তাদের কথা কি কখনো ভেবে দেখেছি?

সেখানে বেশির ভাগ নিম্ন আয়ের সন্তানেরা। হয়তো আর স্কুলে ফিরতে পারবে না। অনেকেই হয়তো উপার্জনের পথ বেছে নিয়েছে। তাদের বেশির ভাগ বিভিন্ন নেশায় আসক্ত হয়েছে । আর এর সামাজিক ক্ষতির দিকগুলো একটু ভাবুন তো?

তারা স্কুলে ফিরলেও তাদের শিক্ষার মান কি রকম হবে, তা ও সহজেই অনুমেয়।

দীর্ঘদিন বন্ধে শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। বাড়ছে আত্মহত্যা ,অপরাধ-প্রবণতা, অসামাজিক কাজে জড়িয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। সামাজিক অনাচার শিকার হচ্ছে মেয়ে শিক্ষার্থী। তাদের উপর সহিংসতা ও অত্যাচারের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ফলে তারা কোন উপায় না পেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। তাই দেশের সবকিছু যেহেতু স্বাভাবিক,তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো খুলে দেওয়া হোক। এভাবে আর কতদিন!!

লেখক: শিক্ষার্থী, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

উলিপুরে মানব পাচারকারীকে গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন

কুড়িগ্রামের উলিপুরে প্রতারণার অভিযোগে চিহ্নিত মানব পাচারকারী মমিনুল ইসলাম বাব...

বিদ্যালয়ে কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতি, দুদকের অভিযান

মাদারীপুর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) উত্তর রমজানপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ...

মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনাসহ ৩ জন দোষী সাব্যস্ত

ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের সত্যতা ম...

শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের সাজা দিয়ে রায় ঘোষণা

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্র...

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পাকিস্তানের জাতীয় কবির তত্ত্ব নিয়ে সেমিনার

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পাকিস্তানের জাতীয় কবি ও চিন্তাবিদ আল্লামা ইকবালের &lsqu...

মুন্সীগঞ্জে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আ. লীগের সহযোগী সংগঠনের মিছিল

মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখানে পুলিশের উপস্থিতিতেই কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষিত দল আওয়াম...

উলিপুরে মানব পাচারকারীকে গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন

কুড়িগ্রামের উলিপুরে প্রতারণার অভিযোগে চিহ্নিত মানব পাচারকারী মমিনুল ইসলাম বাব...

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পাকিস্তানের জাতীয় কবির তত্ত্ব নিয়ে সেমিনার

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পাকিস্তানের জাতীয় কবি ও চিন্তাবিদ আল্লামা ইকবালের &lsqu...

বিদ্যালয়ে কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতি, দুদকের অভিযান

মাদারীপুর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) উত্তর রমজানপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ...

কুষ্টিয়া-২ আসনে মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবিতে নারীদের বিক্ষোভ

কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসন পুনর্বিবেচনা করে সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক শহ...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা