নিজস্ব প্রতিনিধি, নরসিংদী : শীতকাল মানেই আমেজ আর উৎসবের সময়। গ্রামীণ আমেজ আর অনুভূতিকে আরও ত্বরান্বিত করতে নরসিংদীর রায়পুরায় হয়ে গেলো গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলা। উপজেলার পলাশতলী ইউনিয়নের শাহাপুর গ্রামে বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয় এ মেলা। অন্যান্য বছর তিনদিনব্যাপী হলেও এবার করোনা পরিস্থিতির কারণে এই মেলা একদিনেই সমাপ্ত হয়।
সাধক মাহমুদ শাহ ফকিরের তিরোধান দিবসকে উপলক্ষ্য করে প্রতিবছর পৌষ মাসের শেষ বৃহস্পতিবার এ মেলা বসে। এ বছর ৬১১তম তিরোধান দিবস। ৬১০ বছর ধরে এই মেলা আয়োজন করে আসছে এলাকাবাসী। এখানকার মানুষের বিশ্বাস, সাধক মাহমুদ শাহ পায়ে হেটে পানির ওপর দিয়ে নদী পার হতেন।
এই মেলাকে কেন্দ্র করে আশেপাশের গ্রামের মানুষদের মধ্যে বিরাজ করে উৎসবমুখর পরিবেশ। এমনকি মেয়েরা নাইওর আসে তাদের পরিজন নিয়ে। মেলায় আশেপাশের প্রায় ১৫টি গ্রামের মানুষ একসাথে জড়ো হয়, নিজেরে মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয় আনন্দ।
মেলা ঘুরে দেখা যায়, প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা ও মাঠ জুড়ে হরেক রকম দোকান বসেছে। বাচ্চাদের খেলনা, মাটির তৈজসপত্র, পুতুল, চরকি, কসমেটিকস আর বাহারিজাতের খাবারের সমারোহ। সকল শ্রেণি পেশার মানুষ এসব দোকান ঘুরে ঘুরে তাদের প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কিনে নিয়ে যাচ্ছে।
মেলার দোকান সাজিয়ে বসা সরফ আলী জানান, তিনি ১৫ বছর ধরে এই মেলায় খেলনা দোকান নিয়ে বসেন। এখানে প্রতিবছর প্রচুর জনসমাগম ঘটে। বিক্রিও অনেক।
বেতের জিনিসপত্র বিক্রি করছেন খৈনকুটের শরিফ মিয়া। তিনি জানান, এ মেলায় বাঁশ ও বেতের তৈরী জিনিসপত্রের কদর কোন অংশে কম নয়। মেলা উপলক্ষে বেশকিছুদিন আগে থেকে এগুলো তৈরী শুরু করে গ্রামের নারী পুরষ।
ছেলে মেয়েদের নিয়ে নরসিংদী শহর থেকে ঘুরতে আসা সবুজ আহমেদ জানান, ছোটবেলা থেকেই তিনি এই মেলায় আসেন এবং ঘুরে ফিরে উপভোগ করেন। মেলায় জিলাপি, মুড়ি, নিমকিসহ ছোট ছেলে মেয়েদের জন্য খেলনাও কিনে নিয়ে যান তিনি।
মেলায় কেউবা বাশি বাজাচ্ছে, আবার কেউবা লাঠিম হাতে ঘুরাচ্ছে আবার অনেকেই চরকিতে উঠছে। ঈদের মতো করে এই মেলাটাকেও উপভোগ করেন আশপাশের কয়েক গ্রামের মানুষ। গ্রামীণ এই সংস্কৃতি এত বছর পরেও ধরে রাখাটা একটা চ্যালেঞ্জ বলে জানান স্থানীয়রা।
মেলা আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে মাইনউদ্দিন প্রধান নামে এক সদস্য জানান, এবার করোনা সংক্রমণের কারণে প্রশাসনের নির্দেশনায় আয়োজন তিনদিনের পরিবর্তে একদিন করা হয়েছে। মেলায় মাস্ক বিতরণ করার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। পুলিশও মোতায়েন রয়েছে।
প্রায় ছয়শত বছর ধরে এই মেলাটি উৎসব হিসেবে এলাকায় হয়ে আসছে বলে জানান স্থানীয়রা।
সান নিউজ/আর/এস