নিজস্ব প্রতিনিধি, সাতক্ষীরা : বাংলাদেশে পর্যটনের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো সুন্দরবন। অত্যন্ত সম্ভাবনাময় এ শিল্পকে ঘিরে বিকশিত হয়েছে বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি। বহুদেশ এ খাতকে আঁকড়ে ধরে সামনে আসার চেষ্টা করছে। একইভাবে পর্যটন শিল্পে বাংলাদেশও অগ্রসরমান।
আমাদের দেশের অনেক জেলাই প্রাকৃতিক বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ও ঐতিহাসিক স্থাপনাকে ঘিরে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিতি পেয়েছে। এ ক্ষেত্রে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সুন্দরবন উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরার গুরুত্ব ও সম্ভাবনাও কম নয়।
জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব ছাড়াও করোনার কারণে সাত মাস বন্ধ থাকার পর সবুজে সবুজে ভরে উঠেছে সুন্দরবন। দেখা মিলছে পশু-পাখির। আম্পানের ক্ষতি কাটিয়ে সুন্দরী, গেওয়া, গরানের বনে এখন সবুজের সমারোহ। বাড়ছে পর্যটকদের ভিড়। বিচরণ বেড়েছে হরিণ, ডলফিনসহ বন্য প্রাণির।
পশ্চিম সুন্দরবনের মুন্সীগঞ্জ, কলাগাছিয়া, কটকা, হিরোনপয়েন্ট, হাড়বাড়িয়া, আন্ধারমানিকসহ বিভিন্ন এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত গাছগুলো দীর্ঘ বিশ্রামে যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। তবে বিভিন্ন কারণে সুন্দরবনও হারাতে বসেছে তার নিজস্বতা। বন এলাকা সংকুচিত হয়ে পড়ছে। কিছু অসাধু মানুষের কারণে এই ম্যানগ্রোভ বন হারাতে বসেছে তার সৌন্দর্য। বিপন্ন হয়ে পড়েছে এর প্রাণীকূল আর বৃক্ষরাজী।
সমস্যার মধ্যেও বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ এ বনে বাড়ছে পর্যটকের সংখ্যা। বনের সাতক্ষীরা রেঞ্জে বাড়ছে রাজস্ব আদায়।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশাল এলাকাজুড়ে সুন্দরবনের অবস্থান। দুইশ বছর আগে মূল সুন্দরবনের বিস্তৃত ছিল প্রায় ১৬ হাজার ৭০০ বর্গকিলোমিটার। তবে সংকুচিত হতে হতে বর্তমানে আয়তন এসে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০ হাজার বর্গকিলোমিটারে। সুন্দরবনের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ পড়েছে বাংলাদেশে আর বাকিটা ভারতে। এ হিসেবে সুন্দরবনের বাংলাদেশের অংশ প্রায় ৫ হাজার ৮০০ বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে চার হাজার একশ বর্গকিলোমিটার স্থলভাগ ও এক হাজার ৭০০ বর্গ কিলোমিটার জলাভূমি।
বিশ্বজুড়ে সুন্দরবনের খ্যাতি রয়েল বেঙ্গল টাইগার আর চিত্রল হরিণের জন্য। তবে এখানে বানর, কুমির, হাঙ্গর, ডলফিন, অজগর ও বনমোরগ ছাড়াও রয়েছে কয়েকশ প্রজাতির প্রাণী, পাখি, সরীসৃপ ও দুইশ’রও বেশি প্রজাতির মাছ। এসব বন্য প্রাণী ও সুন্দরবনের নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে দেশ-বিদেশের পর্যটকরা ছুটে আসেন।
সুন্দরবনের নাম স্বার্থক করতেই রয়েছে সারি সারি সুন্দরী গাছ। এছাড়াও রয়েছে গরান, গেওয়া, কেওরা ধুন্দল, গোলপাতাসহ প্রায় তিনশ প্রজাতির বৃক্ষ।
সম্প্রতি বনে বেড়াতে যাওয়া সাতক্ষীরা সদরের মাজহারুল ইসলাম জানান, করোনার পর সুন্দবনে ঘুরতে যেয়ে অনেক ভালো লেগেছে। অসংখ্য নদী আর খাল জালের মতো জড়িয়ে আছে সুন্দরবনকে। এগুলো সুন্দরবনকে আকর্ষণ করে।
সুন্দরবনে ঘুরতে আসা পর্যটকরা জানান, সুন্দরবন আসলেই অনেক সুন্দর। কিছু পর্যটকরা নদীতে পানির বোতল, ওয়ান টাইম প্লেট, খাবারের উচ্ছিষ্ট ফেলে। সেগুলো থেকে পরিবেশ নষ্ট করে। দীর্ঘদিন পর্যটক নিষিদ্ধ থাকায় এসব থেকে রক্ষা পেয়েছে পরিবেশ। এখন সুন্দরবনের মধ্যে ছোট ছোট নদীতেও ঝাঁকে ঝাঁকে ডলফিনের দেখা মিলছে। সবমিলিয়ে এক মনোরম পরিবেশ তৈরি হয়েছে সুন্দরবনে।
সান নিউজ/কেটি/এস