নিজস্ব প্রতিনিধি, নোয়াখালী : অনেক বিতর্কের পর কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের একটি দল ভাসানচর যাচ্ছে। এ জন্য ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্বাগত জানিয়ে বিভিন্ন ব্যানার ফেস্টুন স্থাপন করে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে।
শুক্রবার সকালে নৌ বাহিনীর জাহাজে চট্রগ্রাম থেকে ১৬৪২ রোহিঙ্গার একটি দল ভাসানচরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। স্বেচ্ছায় যারা যেতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে তাদের পাঠানোর মাধ্যমেই এ স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সকালে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নিয়ে যেতে উখিয়া কলেজ মাঠে অস্থায়ী ট্রানজিট পয়েন্ট স্থাপন করা হয়েছে। পরে ভাসানচর যেতে আগ্রহী রোহিঙ্গাদের ২০টি বাসে চট্রগ্রাম নিয়ে আসা হয়। চট্রগ্রামে বি এ এফ শাহিন কলেজের মাঠের অস্থায়ী ক্যাম্পে রাতে থাকার ব্যবস্থা করা হয়। শুক্রবার সকালে নৌ বাহিনীর পতেঙ্গা ঘাট দিয়ে তাদের জাহাজে তোলা হয়।
এর আগে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর কার্যক্রম ঘিরে বঙ্গোপসাগরের এই দ্বীপ ঘুরে আসে ২২টি এনজিওর প্রতিনিধি দল। ভাসানচরে যেতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের জন্য সেখানে মজুত করা হয়েছে ৬৬ টন খাদ্য সামগ্রী।
হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার নাজিম উদ্দিন জানান, এরই মধ্যে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে ২০ শয্যার দুটি হাসপাতাল প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসক নিয়োগ ও আসবাপত্র স্থাপন করা হয়েছে এ দুটি হাসপাতালে।
এদিকে পর্যায়ক্রমে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামে নিয়ে সেখান থেকে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নেয়ার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে নৌবাহিনীর ১৪টি জাহাজ। প্রথম দুই মাস তাদের রান্না করা খাবার সরবরাহ করা হবে। এর পর নিজ নিজ বাসস্থানেই তারা রান্না করতে পারবেন।
নোয়াখালীর হাতিয়ায় সাগরের মাঝে ভেসে থাকা ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য সব ধরনের সুযোগ সুবিধা সংবলিত ঘর নির্মাণ করাা হয়েছে। ঝড় জলোচ্ছ্বাস থেকে সুরক্ষায় বিশেষ ব্যবস্থাও রয়েছে। বসবাসের যে ব্যবস্থা করা হয়েছে তা দেখতে গত সেপ্টেম্বরে দুই নারীসহ ৪০ রোহিঙ্গা নেতাকে সেখানে নিয়ে যায় সরকার। তারা ভাসানচরের আবাসন ব্যবস্থা দেখে মুগ্ধ হয়। তারা ক্যাম্পে ফিরে অন্যদের ভাসানচরে যেতে উদ্বুদ্ধ করে। দুই বছর আগে সরকার ভাসানচরে এক লাখ রোহিঙ্গাকে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিল। কিন্তু তাদের অনিচ্ছার কারণে তা সম্ভব হচ্ছিল না।
কোনো বলপ্রয়োগ ছাড়াই রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে যাওয়ার ইতিবাচক মনোভাব দেখে তাদের সেখানে পাঠানোর বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয় সরকার। রোহিঙ্গাদের প্রথম দলটিকে নিরাপদে ভাসানচরে পাঠাতে পারলে আরও অনেক পরিবার সেখানে যেতে আগ্রহী হবে বলে সরকার আশা বাদী।
সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৩ হাজার একর আয়তনের ভাসানচরে ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করে এক লাখের বেশি মানুষের বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বর্তমানে মালয়েশিয়া যেতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসা তিন শতাধিক রোহিঙ্গাকে সমুদ্র থেকে উদ্ধার করে ভাসানচরে নিয়ে রাখা হয়েছে।
সান নিউজ/এসএম