নিজস্ব প্রতিনিধি, নরসিংদী : নরসিংদীর বেলাবোতে সড়ক দুর্ঘটনায় একসাথে তিন মেয়ের মৃত্যুতে বাকরুদ্ধ স্বামীহারা হোসনেয়ারা। মারা গেছে রুনা নামে আহত হওয়া তাদের খালাতো বোনও।
শুক্রবার বিকেলে বেলাবো উপজেলার ঢাকা সিলেট মহাসড়কের দড়িকান্দি নামকস্থানে বাস-প্রাইভেটকার মুখোমুখি সংঘর্ষে তিনবোনসহ চারজন নিহত হয়েছেন।
আহত হয়েছেন রুনা নামে আরও একজন। মারা যাওয়া তিন মেয়ের পরিবারের স্বজনরা জানায়, শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে তাদের খালাতো বোন রুনা তাদের আত্মীয় প্রাইভেটকার চালক নিহত নওয়াব আলীকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়। মারা যাওয়া নিহত তিন বোন হলেন, খায়রুন্নাহার (৩৫), কামনা আক্তার (২৪) ও জামিয়া আক্তার তৃষা (২২)। তারা নরসিংদীর পলাশ উপজেলার চালনা এলাকার মৃত বেনু মিয়ার মেয়ে। অপর নিহত প্রাইভেটকারের মালিকের নাম নওয়াব আলী (৫৪)। তিনি কুষ্টিয়ার মিরপুরের ইয়াকুব আলীর ছেলে এবং গাজীপুরের একটি কারখানার বায়িং হাউজের ব্যবস্থাপক।
দূর্ঘটনায় আহত রুনা বেগম শনিবার (২ জানুয়ারী) সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন বলে জানায় তাদের পরিবার। তিন মেয়ে ও দুই ছেলেকে রেখে মারা যান পিতা বেনু মিয়া। এরপর পরিবারের হাল ধরেন বড় ছেলে আপেল। তিনিও কাজ করতে গিয়ে ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে মারা যান আপেল। পরিবার চালানোর জন্য ছোট ছেলে মেয়েদের নিয়ে অনাহারে অর্ধাহার দিন পার করতে থাকে পরিবারটি। কোন উপায় না পেয়ে ব্র্যাকের স্বেচ্ছাসেবী হিসাবে কাজ শুরু করেন মা হোসনেয়ারা বেগম। এভাবে হোসনেয়ারা দুর্বল হয়ে পড়লে মায়ের স্থলাভিত্তিক হয় বড় মেয়ে খায়রুন। প্রায় দুবছর কাজ করে কিছু স্বচ্ছলতা আসে পরিবারে। সর্বশেষ তিন/ চার মাস আগে স্বাস্হ্য সেবী হিসেবে কাজ শুরু করে যার বেতনও এখন পায়নি। এখন তাদের আয়ের আর কেউ রইল না।
নিহতদের পরিবারের স্বজনরা আরও জানান, প্রাইভেটকারটিতে চালকসহ মোট ৫ জন ছিলেন। শুক্রবার বিকেল মহাসড়কের জঙ্গুয়া এলাকা অতিক্রম করার সময় সিলেটগামী আল মোবারকা পরিবহন নামের একটি যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে প্রাইভেটকারটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। দুর্ঘটনার সময় বাসটি অতিরিক্ত গতিতে আরেকটি বাসকে ওভারটেক করতে গেলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রাইভেটকারটিকে চাপা দেয়।
এতে দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া প্রাইভেটকারটির চালকসহ ৪ যাত্রীর মৃত্যু হয়। পরে ভৈরব হাইওয়ে থানার পুলিশ ও স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রাইভেটকারটি কেটে ৪ জনের লাশ উদ্ধার করে।
ভৈরব ফায়ার সার্ভিস এর স্টেশন অফিসার রাকিব হোসেন বলেন, টহলে থাকাবস্থায় খবর পেয়ে এসে দেখতে পাই বাসটির ডানপাশের নীচে প্রাইভেটকারটি চাপা পড়ে আছে। এসময় গাড়ি কেটে ৪ জনের লাশ উদ্ধার ও গুরুতর আহত এক নারীকে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
নিহতদের পরিবার জানান, প্রাইভেটকারে থাকা এই ৫ জন মিলে কিশোরগঞ্জের ভৈরবের মেঘনা পাড়ের উদ্দেশ্যে গিয়েছিলো। ঘোরাঘুরি শেষে ফেরার পথে বেলাব উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের জঙ্গুয়া এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
ভৈরব হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুনুর রহমান জানান, বাসটি অতিরিক্ত গতিতে আরেকটি বাসকে ওভারটেক করতে গেলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রাইভেটকারটিকে চাপা দিলে এই দুর্ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রাইভেটকারটি কেটে ৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। দুর্ঘটনাস্থল থেকে ঘাতক বাসটি আটক করা গেছে তবে এর চালক পালিয়ে গেছেন।
সান নিউজ/এসআইআর/এনকে