টি.আই সানি,(শ্রীপুর প্রতিনিধি) : গাজীপুরের শ্রীপুরের সড়কগুলো ফাঁকা। কিছু সময় পরপর পণ্যবাহী ট্রাক ও কয়েকটি যাত্রীবাহী সিএনজিচালিত অটোরিকশা এবং মোটরসাইকেল চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সাপ্তাহিক হাট বাজার গুলো অনেকটাই জমজমাট। তবে বাজারে নেই কোন সামাজিক দূরত্ব, নেই মাস্ক ,বলা যায় স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। মোড়ে মোড়ে প্রশাসনের তৎপরতা থাকলেও হাটে বাজারে প্রশাসনের কোন তৎপরতা দেখা যায়নি। শ্রীপুর রেলওয়ে স্টেশন ও বাস টার্মিনালে সুনসান নীরবতা। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করতে সারা দেশে আট দিনের লকডাউনের তৃতীয় দিন চলছে আজ শুক্রবার। তৃতীয় দিনে সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মোড়ে মোড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন যানবাহন থামিয়ে জবাদিহিতা করছে। অজুহাতে সন্তুষ্ট হলে যান ছেড়ে দিচ্ছেন, নয়তো আটকে দিচ্ছেন। মাওনা চৌরাস্তা উড়াল সেতুর নিচে তল্লাশিচৌকি পার হয়ে মাওনা কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা গেলো সুনসান নীরবতা। বাজারে সবজি, ডিম, মাছ, মুরগি সবই আছে। কিন্তু ক্রেতা নেই।
ঢাকা-ময়মনসিংহের মহাসড়কের নয়নপুর এলাকার বাস ষ্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে ছিলেন এক নব দম্পতি। তাঁরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, লক ডাউনের আগে শ্রীপুরে এক আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে আসছিলাম। তারা থেকে যেতে বলেছেন। লকডাউনে আটকা পড়েছিলাম। অন্যের বাড়িতে এত দিন বসে থাকতে ভালো লাগছে না। আজ শুক্রবার বাড়ি নেত্রকোনার পূর্বধলা চলে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হয়েছি। এখানে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দাঁড়িয়ে রয়েছি, যখন তাদের সাথে কথা হয় তখন বেলা সাড়ে ১১টা। ট্রাক বা অন্য কোনো পরিবহন পাওয়া গেলে সেটি দিয়েই বাড়ি ফিরে যাব।
মাওনা চৌরাস্তা কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা মোহাম্মদ ফারুক শেখ বললেন, বাজারে তেমন লোকজন আসে না। লকডাউন দিয়ে লোকজন ঘর থেকে বাইর (বাহির) হতে না পরালে বাজারে আইব কেমনে। বাজারে লোকজন না আইলে আমরা বেচমু (বিক্রি) কার কাছে। কাঁচাবাজারের ব্যবসাীয়দের অবস্থা খুব খারাপ। দিনের মাল দিনে বিক্রি করতে না পারলে পচে নষ্ট হয়ে যায়। দিন শেষে লোকশান গুনতে হয়।
শ্রীপুর পৌর শহরের কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা গেল, এমনই অবস্থা। ক্রেতা নেই। শিল্প কারখানা অধ্যুষিত শ্রীপুরের প্রতিটি বাজারেই শুক্রবারে ক্রেতা-বিক্রেতায় হাঁটা যেতো না। তিল ধারণের ঠাঁই থাকতো না। কিন্তু লকডাউনের কারণে এখন তেমন ক্রেতা সমাগম নেই।
বরমী বাজারের পাইকারি কাঁচাবাজারে মোটামুটি ভীড় দেখা গেল। লোকজন গায়ে গা-ঘেঁষে যে যার মতো বাজার করছেন। তাঁদের কেউ কেউ মাস্ক পরা। আবার কেউ মাস্ক খুলে পকেটে ঢুকিয়ে বাজারে প্রবেশ বরছেন। মুখের নিচে মাস্ক নামিয়ে একজন ক্রেতা মাছের দাম করছিলেন। মাস্ক এভাবে পড়লে লাভ কী? জানতে চাইলে মুচকি হেসে বললেন, এত ভিড়, মাস্ক নাকে তুললে দম আটকে আসে নিচে দিয়ে রাখছি। স্বাস্থ্যবিধি বলে কিছুই দেখা গেল না এখানে।
শ্রীপুরের মাওনা উড়াল সেতুর নিচে দায়িত্ব পালন করছেন শ্রীপুর থানার ইন্সপেক্টর (অপারেশন) গোলাম সারোয়ার। তিনি বলেন, শ্রীপুর থানা পুলিশের উদ্যোগে উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ জৈনা বাজার, শ্রীপুর চৌরাস্তা ও মাওনা চৌরাস্তায় তল্লাশি চৌকি স্থাপন করা হয়েছে। ভোর থেকেই বিভিন্ন পয়েন্টে পর্যাপ্ত পুলিশ রয়েছে। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার নির্দেশিত কঠোর বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে কাজ করছে পুলিশ। প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষকে সহযোগিতা করছে পুলিশ। বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে সরকারের নির্দেশিত যানবাহন চলছে।
গাজীপুরের অতিরিক্ত পুরিশ সুপার (এডিশনাল এসপি) রাসেল শেখ বলেন, পুলিশের তৎপরতা আগের মতোই আছে। বিভিন্ন জায়গায় চেকপোস্ট বসিয়ে অপ্রয়োজনীয় চলাচল রোধে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এছাড়া দোকানপাট বন্ধ রাখার ব্যাপারে অভিযান চালানোসহ জনসাধারণকে সব সময়ই সতর্ক করা হচ্ছে। থানা পুলিশ ও গোয়েন্দা শাখার একাধিক টিম বিভিন্ন থানা এলাকায় দায়িত্ব পালন করছে। যদি নির্দেশনা অমান্য করে কোনো গাড়ি মহাসড়কে আসে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। লকডাউন নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ আদালতও পরিচালিত হচ্ছে।
সান নিউজ/আরএস