আন্তর্জাতিক ডেস্ক: জাতিসংঘ মিয়ানমারের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানালে তাতে সায় দেয় সাধারণ পরিষদের ১১৯ দেশ। কিন্তু বাংলাদেশ মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ভোট দেয়নি। এতে অবাক হয়েছে বিশ্ব।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ, থার্ড কমিটি অথবা হিউম্যান রাইটস কাউন্সিল গত ৩ বছরে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে উত্থাপিত সব রেজ্যুলেশনে সায় দেয় বাংলাদেশ। এবারই প্রথম দেশটির বিরুদ্ধে জাতিসংঘের ভোটাভুটিতে ইচ্ছাকৃতভাবে ভোট দেয়নি ঢাকা। কিন্তু বাংলাদেশ কেন এমন করেছে, তা নিয়ে কূটনৈতিক অঙ্গনে চলছে বিশ্লেষণ।
এ নিয়ে একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা। শনিবার (১৯ জুন) একটি সংবাদমাধ্যমকে যুক্তি হিসেবে দুটি কারণ দেখিয়েছেন তিনি।
কারণ এক. এটা মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির ওপর আনা রেজ্যুলেশন, এটা ভিন্ন এক প্রস্তাব।
কারণ দুই. মিয়ানমার পরিস্থিতির সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে, যা রেজ্যুলেশনে আরও শক্তভাবে প্রতিফলন চেয়েছিল বাংলাদেশ। কারণ রোহিঙ্গা সংকট বা মিয়ানমার পরিস্থিতির বড় ভুক্তভোগী আমরা। কিন্তু বাংলাদেশের চেষ্টা সত্ত্বেও শুক্রবারের প্রস্তাবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি জোরালো ভাষায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এ কারণে অনেকটা প্রতিবাদ হিসেবেই বাংলাদেশ ঘোষণা দিয়ে অ্যাবস্টেইন বা প্রস্তাবের পক্ষে ভোটদান থেকে বিরত থেকেছে বলে ধারণা দেন তিনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বর্তমানে নিউ ইয়র্কে রয়েছেন উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, আমরা কেন অ্যাবস্টেইন করেছি তা নিয়ে জাতিসংঘে একটি বিবৃতি দিয়েছি। তাছাড়া এখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয় থাকায় আমরা সরাসরি তার নির্দেশনা পেয়েছি। ফলে দেশের স্বার্থ এবং অন্যান্য ইস্যু বিবেচনায় আমরা ভোট প্রদান থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।
রাষ্ট্রদূত বলেন, আগামী সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জোরালো দাবি জানিয়ে স্বতন্ত্র রেজ্যুলেশন আনা হচ্ছে। যার প্রস্তাব রাখছে বাংলাদেশ।
পাস হওয়া ‘প্রিভেনশন অব আর্ম কনফ্লিক্ট’ শীর্ষক শুক্রবারের রেজ্যুলেশনে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বর্তমান অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। রোহিঙ্গা সংকটের আসল কারণ উদ্ঘাটন এবং মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে আবারো রোহিঙ্গা উচ্ছেদ থেকে বিরত থাকতে রাষ্ট্রকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।
এদিকে, এই ভোটে কেবল মাত্র স্বৈরশাসিত বেলারুশই বিপক্ষে মত দিয়েছে। আর চীন-রাশিয়াসহ মোট ৩৬ দেশ প্রস্তাবে মতামত দেওয়া থেকে বিরত থাকে। দেশটিতে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের চার মাস পর নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি প্রথমবারের মতো একটি নিন্দাপ্রস্তাবও গৃহীত করেছে আন্তঃসরকার সংস্থাটি।
মতামত প্রদানে বিরত থাকা দেশগুলোর মধ্যে কেউ কেউ এই সংকটকে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ ইস্যু হিসেবে উল্লেখ করেছে। আর অন্যরা বলছে, ওই প্রস্তাবে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর নৃশংস সামরিক আক্রমণের বিষয়ে উল্লেখ নেই।
গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে সামরিক বাহিনী। এরপর থেকেই জান্তা সরকারের বিরোধিতায় রাস্তায় বিক্ষোভ করছে দেশটির জনগণ। জান্তাবিরোধী ওই বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর হামলায় ৮০০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, গ্রেফতার করা হয়েছে অন্তত পাঁচ হাজার জনকে।
সান নিউজ/এসএম/এমআর