নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর ফুলবাড়িয়ায় বঙ্গবাজারসহ কয়েকটি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রায় ৫ হাজার দোকানে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার মালামাল পুড়ে গেছে বলে দাবি করেছে দোকান মালিক সমিতি।
আরও পড়ুন : বঙ্গবাজারে বিজিবি মোতায়েন
এতে কয়েক হাজার ব্যবসায়ী সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। একই সাথে ঈদের আগেই এসব মার্কেটে কর্মরত অর্ধ লাখ কর্মচারী বেকার হয়ে পড়ার ও বেতন না পাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
রিয়াজুল গার্মেন্টস, খান ফ্যাশন, এস এ গার্মেন্টস, খান শাড়ি বিতানসহ বঙ্গ-মার্কেটে ৫টি দোকান ছিল ব্যবসায়ী মো. মামুনের। ঈদকে সামনে রেখে ৫টি দোকানে ১০ কোটি টাকার মালামাল তুলেছিলেন। আগুনে এক নিমিষে সব শেষ হয়ে গেছে তার। মুহূর্তের মধ্যে সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে মার্কেটের পাশে ফুটপাতে বাচাঁতে পারা অল্পকিছু মালামালের ওপর বসে কাদঁছেন তিনি।
আরও পড়ুন : কঙ্গোতে ভূমিধসে ১৩ শিশুসহ নিহত ২০
এই ব্যবসায়ী জানান, ১০ কোটির টাকার মধ্যে ১ কোটি টাকার মতো মালামাল বিক্রি করতে পেরেছেন গত কয়েক রমজানে। বাকি পুরো টাকার মালামাল দোকান ও গুদামে ছিল। এর মধ্যে কয়েক লাখ টাকার মালামাল রক্ষা করতে পেরেছেন। বাকি সব পুড়ে গেছে। এখন কীভাবে তিনি ঋণ শোধ করবেন, সংসার চালাবেন, কীভাবে দোকানের কর্মচারীদের বেতন দেবেন, তা নিজেও জানেন না।
তিনি আরও বলেন, ‘আমার জীবনের সব উপার্জন যে আগুনে পুড়ে গেল, এই ক্ষতির দায় নেবে কে? কে আমার ঋণ পরিশোধ করবে? আমার তো কিছুই নেই। সব তো শেষ হয়ে গেছে।’
আরও পড়ুন : ফ্লোরিডা থেকে নিউইয়র্কে যাচ্ছেন ট্রাম্প
বঙ্গবাজার মার্কেটে ‘মায়ের দোয়া' নামেই ৬টি দোকান ছিল ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হেলাল খানের। তার দোকানে ৬ কোটি টাকারও বেশি মালামাল ছিল।
তিনি জানান, কোনও রকমে একটি দোকানের মালামাল বের করতে পেরেছি। গোডাউনের মালামালও বের করতে পারিনি। কিছু পুড়েছে, বাকি সব পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। ঈদ উপলক্ষ্যে ৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকার মালমাল তুলেছি। সবই নষ্ট হয়েছে। এই অবস্থায় সরকার যদি আমাদের সহযোগিতা করে, তাহলে কোনোরকম উঠে দাঁড়াতে পারবো। নয়তো আমাদের মরণ ছাড়া কোনও উপায় নেই।
আরও পড়ুন : পাঁচ হাজার দোকান পুড়েছে
আগুনে ব্যবসায়ী মামুন, হেলাল খানের মতো হাজারও ব্যবসায়ীর দোকান পুড়ে গেছে। সবাই মার্কেটের পাশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের সীমনা প্রচীর ঘেঁষা সড়কের ফুটপাতে সব হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। কেউ কেউ আগুন লাগার ঘটনা মোবাইলে পরিবারকে কান্নাজনিত কণ্ঠে জানাচ্ছেন।
আরেক ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম কাদঁতে কাদঁতে মোবাইল ফোনে বলছেন, সবার সবকিছু দেখা হয়ে গেছে। আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিস, নৌ বাহিনী, পুলিশ, র্যাব সব আইছে; কিন্তু কিছুতেই কিছুই হচ্ছে না। এখন আল্লাহর দিকে চাইয়া আছি। আল্লাহ বৃষ্টি দিক। রহম দিয়ে সবকিছু ঠান্ডা করে দিক। আর কিছুই চাই না। কিছুই চাওয়ার নাই। আমাগো সবকিছু শেষ হয়ে গেছে।
আরও পড়ুন : মধুপুরে বাসে ডাকাতি, আহত ৭
তিনি বলেন, সামনে ঈদ। ছাওয়াল-পাওয়ালদের কতকিছু কিনে দেব বলে কথা দিছিলাম। এখন আমাগো সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। আল্লাহ রহম না করলে আর কিছুতেই কিছু করা যাবে না।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা গেছে অনেক কর্মচারীকে।
আরও পড়ুন : জাতীয় জরুরি সেবা সাময়িক বন্ধ
তারা জানান, মালিকদের কাছে তো গত কয়েক রমজানের বেচাবিক্রির কিছু টাকা হলেও আছে। সেটা দিয়ে কিছুদিন হলেও চলতে পারবে। কিন্তু যারা কর্মচারী তাদের হাতে কোনও টাকা পয়সা নেই। তারা কীভাবে পরিবার নিয়ে চলবে।
শিল্পী ফ্যাশন নামের একটি দোকানের কর্মচারী জাকির হোসেন বলেন, আগুনে পুড়ে যাওয়া মার্কেটগুলো লাখের ওপরে কর্মচারী রয়েছে। অধিকাংশ দোকানে কর্মচারী গত মাসেরও বেতন পায়নি। এর মধ্যে আগুনে মার্কেটের সব পুড়ে গেছে।
আরও পড়ুন : অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলতাফ হুসাইন
তিনি বলেন, এখন মালিক কবে গত মাসের বেতন দেবে সেটাও জানি না। আর ঈদের আগে মার্কেট ঠিক করা সম্ভব হবে কি না, দোকান আবার খুলবে কি না সেটাও জানি না। এই অবস্থায় আমরা কীভাবে ঈদ করবো, কীভাবে ঘর ভাড়া দেবে, কীভাবে ছেলে-মেয়ে, মা-বাপেরে টাকা পাঠামু?
আরেকটি দোকানের কর্মচারী হেলাল জানান, মালিকরা তো আগুনের ঘটনা দেখিয়ে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারবে। সরকারও তাদের সহযোগিতা করবে। কিন্তু আমরা তো সেটা পারবো না। মালিক বেতন না দিলে কিছু করার নেই।
আরও পড়ুন : চাঁদার দাবিতে শিক্ষার্থীকে নির্যাতন
মালিক যদি বলে, আগুনে সবকিছু পুড়ে গেছে, কীভাবে বেতন দেবো, তখন আমরা কি করবো। এখন তো কোথাও চাকরি পাবো না। কিছুই মাথায় আসছে না, কী করবো, কীভাবে ঈদ করবো পরিবার নিয়ে।
সান নিউজ/এনজে