নিজস্ব প্রতিবেদক: আজ রক্তে ভেজা ঐতিহাসিক চা শ্রমিক বা ‘মুল্লুক চলো’ দিবস। উন্নত জীবনের আশায় জন্ম ভিটা ছেড়ে চা বাগানে কাজ করতে আসা একদল মানুষের সেই সোনালি স্বপ্ন যখন গুঁড়িয়ে যায়, সেই জ্বালা নিয়ে তারা ফিরতে চান নিজ দেশে।
আরও পড়ুন: আন্তর্জাতিক জাদুঘর দিবস
১৯২১ সালের এ দিনে সিলেট অঞ্চলের প্রায় ৩০ হাজার চা শ্রমিক সিলেট থেকে পায়ে হেটে চাঁদপুরের মেঘনা স্টিমার ঘাটে পৌঁছান। তারা জাহাজে করে নিজ দেশে ফিরে যেতে চাইলে ব্রিটিশ গোর্খা বাহিনীর সৈনিকরা নির্বিচারে গুলি চালিয়ে তাদের হত্যা করে মেঘনা নদীতে লাশ ভাসিয়ে দেয়।
যারা পালিয়ে এসেছিলেন তাদেরও আন্দোলন করার অপরাধে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়। ফলে এ জনগোষ্ঠীর সদস্যরা ফিরে পাননি স্ব-ভূমির অধিকার।
এরপর থেকেই প্রতিবছরের এ দিনে নিজেরাই চা শ্রমিক দিবস হিসেবে দিনটি পালন করে আসছেন নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত শোষণ-বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার চা শ্রমিকরা। শতবর্ষ আগের তাদের স্ব-ভূমিতে ফিরে যাওয়ার এ আন্দোলন ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হয় ‘মুল্লুক চলো’ আন্দোলন হিসেবে।
আরও পড়ুন: ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস
জানা যায়, ১৮৫৪ সালে পরীক্ষামূলকভাবে সিলেটের মালিনীছড়া চা বাগানে চাষ শুরু করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। এ সময় চা বাগান তৈরির জন্য ভারতের আসাম, ওড়িশা, বিহার ও উত্তর প্রদেশসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে শ্রমিকদের স্থানান্তর করা হয়।
তখন ‘গাছ হিলেগা, রুপিয়া মিলেগা’ (গাছ নড়লে টাকা মিলবে)- এমন প্রলোভনে শ্রমিকদের নিয়ে এলেও তাদের ভুল বুঝতে বেশি সময় লাগেনি। বিশাল পাহাড় পরিষ্কার করে বাগান তৈরি করতে গিয়ে হিংস্র পশুর কবলে পড়ে অনেক শ্রমিকের জীবন অকালে ঝড়ে। সঙ্গে ছিল ব্রিটিশদের অব্যাহত অত্যাচার।
এসব নির্যাতনের প্রতিবাদে তৎকালীন চা শ্রমিক নেতা পণ্ডিত গঙ্গাচরণ দীক্ষিত ও পণ্ডিত দেওসরন ‘মুল্লুকে চলো’ (মাতৃভূমিতে ফিরে যাওয়ার) আন্দোলনের ডাক দেন।
আরও পড়ুন: বিশ্ব মা দিবস
১০৩ বছর পর কেমন আছেন চা শ্রমিকরা? সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে যাওয়া হয় শ্রীমঙ্গলের ভাড়াউড়া চা বাগানে।
সেখানে ভাঙাচোরা কাঁচামাটির ঘরে শুয়ে থাকা বৃদ্ধা সীতা বাউড়ি বলেন, চা-শ্রমিক দিবস আবার কী? একবেলা খেতে পাই না, আমাদের আবার দিবস! কয়েকদিন ধরে আমি অসুস্থ। কিন্তু বাগানের মধ্যে যে হাসপাতাল রয়েছে, তা সাইনবোর্ড সর্বস্ব। ডাক্তার-ওষুধ কোনোটাই পাওয়া যায় না।
বর্তমানে দেশের প্রায় ১৬৫টি চা বাগানের শ্রমিকরা মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। এ শিল্পের উন্নয়ন হলেও ২০০ বছর ধরে মৌলভীবাজারের ৯২টি চা বাগানে বংশ পরম্পরায় কাজ করা চা শ্রমিকদের ভাগ্যের পরিবর্তন হচ্ছে না। একজনের দৈনিক মজুরি ১৭০ টাকা। আর সপ্তাহ শেষে ৩ কেজি আটা।
আরও পড়ুন: আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস
চা শ্রমিক ইউনিয়নের মনু ধলাই ভ্যালির সভাপতি ধনা বাউরি বলেন, চা শ্রমিকদের ভাগ্যে আজও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। এমনকি মৌলিক অধিকার ভোগেরও সুযোগ পাচ্ছেন না তারা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের প্রধান উপদেষ্টা রাম ভজন কৈরী বলেন, শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি মালিকপক্ষকে লিখিত দেয়ার পর কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। তবে মালিকপক্ষ কালক্ষেপণ করছেন বলে জানান তিনি।
সান নিউজ/এনজে