নিজস্ব প্রতিবেদক:
অবশেষে ঋণ ও বিনিয়োগের সর্বোচ্চ সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিট কার্যকর করার ঘোষণা দিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে একমাত্র ক্রেডিট কার্ড ছাড়া সব ধরনের ঋণ ও বিনিয়োগের ওপর সর্বোচ্চ সুদের হার হবে ৯ শতাংশ।
ব্যাংকগুলো প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে এর চেয়ে কম সুদও নির্ধারণ করতে পারবে। তবে কোনোক্রমেই ৯ শতাংশের বেশি সুদ নেয়া যাবে না। নিয়মিত ঋণ বা বিনিয়োগের বিপরীতে অতিরিক্ত কোনো মুনাফা বা দণ্ডসুদও আরোপ করা যাবে না।
২৪ ফ্রেবুয়ারি (সোমবার) এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে সকল তফসিলি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
চলতি বছরের ১ এপ্রিল থেকে নির্ধারিত সুদে ঋণ বিতরণ শুরু হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ক্রেডিট কার্ড ছাড়া অন্য সব খাতে ঋণে সুদের হার ৯ শতাংশ নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় এই ব্যাংকটি ।
এতে আরও বলা হয়, কেবল গ্রাহক কোনো কারণে ঋণখেলাপি হলে ওই সময়ের জন্য ঋণের স্থিতি বা কিস্তির বিপরীতে ৯ শতাংশের বাইরে অতিরিক্ত ২ শতাংশ দণ্ডসুদ আরোপ করা যাবে।
এদিকে রফতানির ঋণের সুদের হার ৭ শতাংশে অপরিবর্তিত থাকবে। তবে ৬ শতাংশে আমানত নেয়ার ব্যাপারে কোনো বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়নি। বিষয়টি ব্যাংকারদের ওপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংকগুলো তাদের তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় কম রাখার চেষ্টা করবে।
এতে স্বাভাবিকভাবেই আমানতের সুদের হার কম হবে। বিষয়টি ব্যাংকগুলোই এখন প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে নিরূপণ করবে। ঋণের সর্বোচ্চ সুদ বেঁধে দেয়া হয়েছে। এখন এর ওপর ভিত্তি করেই আমানত সংগ্রহ ও অন্যান্য খরচ মেটানো হবে।
দেশের বিভিন্ন শিল্প, ব্যবসা ও সেবা প্রতিষ্ঠানসমূহের স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে অধিক সক্ষমতা অর্জনসহ শিল্প ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, ঋণ-বিনিয়োগ পরিশোধে সক্ষমতা এবং কাঙ্ক্ষিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে সরকার।
প্রজ্ঞাপন বলা হয়, অশ্রেণিকৃত ঋণ-বিনিয়োগের ওপর সুদ-মুনাফা হার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ নির্ধারণ করা হলো। কোনো ঋণ-বিনিয়োগের ওপর উল্লিখিতভাবে সুদ-মুনাফা হার ধার্য করার পরও যদি সংশ্লিষ্ট ঋণ-বিনিয়োগ গ্রহীতা খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হন সেক্ষেত্রে যে সময়কালের জন্য খেলাপি হবে অর্থাৎ মেয়াদী ঋণ-বিনিয়োগের ক্ষেত্রে খেলাপি কিস্তি এবং চলতি মূলধন ঋণ-বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মোট খেলাপি ঋণ-বিনিয়োগের ওপর সর্বোচ্চ দুই শতাংশ হারে দণ্ড সুদ-অতিরিক্ত মুনাফা আরোপ করা যাবে।
প্রজ্ঞাপনে আরো বলা হয়, বর্ণিত দণ্ডসুদ-অতিরিক্ত মুনাফা ব্যতিরেখে ঋণ-বিনিয়োগের ওপর অন্য কোনো সুদ-মুনাফা-দণ্ডসুদ-অতিরিক্ত মুনাফা আরোপ করা যাবে না। চলতি বছর থেকে ব্যাংকের মোট ঋণ-বিনিয়োগ স্থিতির মধ্যে এসএমই’র ম্যানুফ্যাকচারিং খাতসহ শিল্প খাতে প্রদত্ত সকল ঋণ-বিনিয়োগ স্থিতি অব্যবহিত পূর্ববর্তী তিন বছরের গড় হারের চেয়ে কোনোভাবেই কম হতে পারবে না। প্রি-শিপমেন্ট রপ্তানি ঋণের বিদ্যমান সর্বোচ্চ সুদ-মুনাফা হার ৭ শতাংশ অপরিবর্তিত থাকবে।
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, বর্তমানে ব্যাংকের ঋণ-বিনিয়োগের উচ্চ সুদ-মুনাফা হার দেশের ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ শিল্পসহ ব্যবসা ও সেবা খাতের বিকাশে প্রধান অন্তরায় হিসেবে দাঁড়িয়েছে। ব্যাংক ঋণ-বিনিয়োগের সুদ-মুনাফা হার উচ্চ মাত্রার হলে সংশ্লিষ্ট শিল্প, ব্যবসা ও সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানসমূহের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পায় এবং উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। এরফলে শিল্প, ব্যবসা ও সেবা প্রতিষ্ঠানসমূহ কখনো কখনো প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হয় বিধায় সংশ্লিষ্ট ঋণ-বিনিয়োগ গ্রহীতাগণ যথাসময়ে ব্যাংক ঋণ-বিনিয়োগ পরিশোধে সমর্থ হয় না। ব্যাংকিং খাতে ঋণ শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হয় এবং সার্বিকভাবে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়।
সান নিউজ/সালি
Newsletter
Subscribe to our newsletter and stay updated.