পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী ফলক
জাতীয়
গৌরবের প্রতীক

পদ্মা সেতুর শুভ উদ্বোধন

সান নিউজ ডেস্ক : জাতীয় গৌরবের প্রতীক স্বপ্নের পদ্মা সেতুর শুভ উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আরও পড়ুন: পদ্মা সেতু আমাদের অহঙ্কার

শনিবার (২৫ জুন) বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের সড়ক পথের শুভ উদ্বোধন করেন। ১১টা ৪০ মিনিটে টোলপ্লাজার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে টোল দিয়ে মাওয়া প্রান্তে উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-১ উন্মোচন করে মোনাজাতে অংশ নেন।

এর আগে পদ্মা সেতু উদ্বোধনে আয়োজিত সুধী সমাবেশে যোগ দেন তিনি। সকাল ১০টা ৪৮ মিনিটে সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বক্তব্য শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বক্তব্য শেষে স্মারক ডাকটিকিট, স্যুভেনির শিট, উদ্বোধনী খাম এবং বিশেষ সিলমোহর উন্মোচন করেন তিনি।

শুরুটা যেভাবে : ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশের মোট জাতীয় বাজেট ছিল পৌনে ২৮ হাজার কোটি টাকা। সে বছরই পদ্মা সেতু নির্মাণের নির্দেশ দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঠিক হয় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া এবং মাওয়া-জাজিরার যেকোনো একটি স্থানে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হবে।

আরও পড়ুন: অপমানের প্রতিশোধ নিয়েছি

এরপরের বছর আরপিটি-নেডকো-বিসিএল নামের যৌথ উদ্যোগের একটি প্রতিষ্ঠানের প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষাও শুরু হয়। জমা হয়েছিলো যাচাই সমীক্ষা। একই বছর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতাগ্রহণ করে। জোট সরকার ও পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্মা সেতুর উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরি করলেও অনুমোদন হয়নি। যার কারণে সেতুর মূল কাজ শুরু হয়নি।

তারপর ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট সরকার ক্ষমতা লাভ করে। ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র ২২ দিনের মাথায় নিউজিল্যান্ডভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মনসেল এইকমকে নিয়োগ দেয়া হয় পদ্মা সেতুর পূর্ণাঙ্গ নকশা তৈরির জন্য।

শুরুতে ১০ হাজার ১৬১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হলেও পরে নকশা পরিবর্তনে দৈর্ঘ্য বেড়ে গেলে ব্যয় বাড়ে। ২০১১ সালে প্রকল্পে সংশোধন এনে ব্যয় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি ২০ লাখ টাকা করা হয়। ২০১৬ সালে ফের ব্যয় বাড়িয়ে ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা করা হয়। সবশেষ প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়ায় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকায়।

আরও পড়ুন: পদ্মা সেতু ভোটের রাজনীতি এগিয়ে নেবে

প্রথমে সেতুর সঙ্গে রেলযোগাযোগ ছিল না, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেলসুবিধা যুক্ত করে চূড়ান্ত নকশা প্রণয়নের নির্দেশনা দেন। এর মধ্যেই সরকার জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু করে দেয়। চুড়ান্ত হয় সেতুর পূর্ণাঙ্গ নকশা।

বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু নির্মাণে ১২০ কোটি ডলারের ঋণ অঙ্গীকার করলেও পরে অনিয়মের অভিযোগ তুলে প্রকল্প থেকে সরে যায়। পরে এডিবি, জাইকা ও আইডিবিও চলে যায়। এরপর বাংলাদেশ সরকার সেতু নির্মাণে বিদেশি কোনো সাহায্য না নিয়ে পুরো ব্যয় নিজেই অর্থায়নের ঘোষণা দেয়।

দাতা সংস্থাগুলোর পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন না করার আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন। ২০১২ সালের ৮ জুলাই মাসে সংসদে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন। এরপর মন্ত্রিপরিষদের এক বৈঠকে ১২ জুলাই নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আরও পড়ুন: বিএনপি খুশি না

পদ্মা সেতু নির্মাণের শুরু : মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে সেতু নির্মাণের মূল কাজ শুরু হয় ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর। কোনো সেতু হয় স্টিলের না হয় কংক্রিটের। কিন্তু পদ্মা সেতু স্টিল ও কংক্রিটের মিশ্রণে তৈরি হয়েছে। সেতুর মূল কাঠামোটা স্টিলের, যা স্প্যান হিসেবে পরিচিত। খুঁটি ও যানবাহন চলাচলের পথ কংক্রিটের। প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার। ৪২টি খুঁটির সঙ্গে স্প্যানগুলো জোড়া দিয়ে সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। পদ্মা সেতুর পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয় ২০১০ সালের ১২ ডিসেম্বর আর পাইলিংয়ের কাজ শেষ হয় ২০১৯ সালের ১১ এপ্রিল।

পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যানটি শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারের ওপর ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পানির ওপর ভাসমান ক্রেনের সাহায্যে বসানো হয়। এরপর দ্বিতীয় স্প্যানটি বসে ১১৯ দিন পরে ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি। আর ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর ১২ ও ১৩ নম্বর পিলারের মাঝে ৪১তম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে গোটা পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হয়।

আরও পড়ুন: পদ্মা সেতুর অর্থনৈতিক সম্ভাবনা

প্রথম স্প্যান বসানোর পর শেষ স্প্যান স্থাপন করতে সময় লেগেছে ১ হাজার ১৬৭ দিন। গড়ে ২৮ দিনে একটি করে স্প্যান বসেছে। পদ্মায় স্রোতের কারণে জুন-আগস্ট পর্যন্ত তিন মাস স্প্যান বসানো বন্ধ ছিল। ২০১৭ সালে ১টি, ২০১৮ সালে ৪টি, ২০১৯ সালে ১৪টি এবং ২০২০ সালে ২২টি স্প্যান বসেছে।

৩০ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকার পদ্মা সেতু প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ঢাকা থেকে মাওয়া এবং জাজিরা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটারের এক্সপ্রেসওয়ের ব্যয়। এটি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন (পশ্চিম)। ২০১৬ সালে এক্সপ্রেসওয়েটির কাজ শুরু হয়। ২০২০ সালের ৯ এপ্রিল উদ্বোধন করা হয় ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে।

মূল সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি)। নদীশাসনের কাজ করেছে চীনের সিনোহাইড্রো করপোরেশন। জাজিরা ও মাওয়া প্রান্তের সংযোগ সড়ক নির্মাণ করেছে আবদুল মোনেম লিমিটেড। সার্ভিস এলাকা (নির্মাণ অবকাঠামো) নির্মাণের কাজও করেছে মোনেম লিমিটেড। সংযোগ সড়ক ও সার্ভিস এলাকার নির্মাণকাজ তদারক করছে সেনাবাহিনী। মূল সেতু ও নদীশাসনের কাজ তদারকি করছে কোরিয়াভিত্তিক এক্সপ্রেসওয়ে কোম্পানি।

আরও পড়ুন: পদ্মা সেতু অনুষ্ঠান মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী

পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। প্রশস্ত ২২ মিটার। চার লেনের সড়কটিতে থাকছে রোড ডিভাইডার বা সড়ক বিভাজক। পদ্মা সেতুতে থাকছে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগ পরিবহন; অর্থাৎ এসব পরিসেবা পদ্মা সেতুর মাধ্যমে ঢাকার বাইরের ২১ জেলাকে যুক্ত করবে। পদ্মা সেতুর মোট খুঁটি বা পিলারের সংখ্যা ৪২টি। স্টিল ট্রাসের মাধ্যমে পদ্মা সেতুতে রেললাইন স্থাপন করা হয়েছে।

মূল পদ্মা সেতু তৈরিতে ব্যয় হয়েছে ১২ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা। ঢাকা থেকে মাওয়া এবং জাজিরা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটারের এক্সপ্রেসওয়ের ব্যয় হয়েছে প্রায় ১১ হাজার ৪ কোটি টাকা। নদীশাসনে ব্যয় হয়েছে ৮ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা। টোল প্লাজা এবং এসএ-২ সহ ১২ কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ রোডের নির্মাণ ব্যয় ১ হাজার ৯০৭ দশমিক ৬৮ কোটি টাকা (দুটি টোল প্লাজা, দুটি থানা ভবন এবং তিনটি পরিষেবা এলাকাসহ)।

পুনর্বাসনে ব্যয় ১ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা। পরিবেশ রক্ষায় ব্যয় ১ হাজার ২৯০ দশমিক ৩ কোটি টাকা, কনসালটেন্সি ৬ হাজার ৭৮৩ দশমিক ৭ কোটি টাকা এবং অন্যান্য (বেতন, পরিবহন, সিডি ভ্যাট এবং ট্যাক্স, ফিজিক্যাল এবং প্রাইস কন্টিনজেন্সি, ইন্টারেস্ট ইত্যাদি) ১ হাজার ৭৩১ দশমিক ১৭ টাকা। এই প্রকল্পের জন্য ৬ হাজার ২৫৬ একর জমি কেনা হয়েছে। এ জন্য বাজারমূল্যের তিন গুণ ক্ষতিপূরণ দিয়েছে সরকার।

পদ্মা সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ করবে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। পদ্মা সেতু রাজধানী ঢাকা ও অন্যান্য প্রধান শহরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ২১টি জেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগে ব্যাপক অগ্রগতি আনবে। বিশেষ করে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ এই সেতু দিয়ে সরাসরি সড়ক যোগাযোগের সুবিধা পাবে।

সান নিউজ/এফএ

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

সম্মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নির্বাচন সম্পন্ন

কামরুল সিকদার, বোয়ালমারী (ফরিদপুর) : ফরিদপুর জেলার সদর ইউনিয়...

ভোলায় অনুষ্ঠিত হলো প্রাণী প্রদর্শনী মেলা

ভোলা প্রতিনিধি: ‘প্রাণিসম্পদে ভরবো দেশ, গড়বো স্মার্ট ব...

সম্মিলনী বিদ্যালয়ের সভাপতি ফিরোজ আহমেদ

কামরুল সিকদার, বোয়ালমারী (ফরিদপুর) : ফরিদপুর জেলার সদর ইউনিয়...

বাংলাদেশ স্কাউট দিবস ২০২৪ পালিত

নিজস্ব প্রতিবেদক : আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটে অনুষ্...

ভাসানচরে এক রোহিঙ্গাকে গলা কেটে হত্যা

নোয়াখালী প্রতিনিধি : নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যা...

ভাসানচরে এক রোহিঙ্গাকে গলা কেটে হত্যা

নোয়াখালী প্রতিনিধি : নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যা...

আলিয়ঁসে সুরঞ্জনার ‘সিবীত কোলাজ’ প্রদর্শনী

সাজু আহমেদ: রাজধানী ঢাকায় চিত্র প...

গরমে ত্বক সতেজ রাখুন

লাইফস্টাইল ডেস্ক : গরমে মধ্যে ত্বক হয়ে পড়ে নিষ্প্রাণ। তাই এই...

চিয়া সিডের পুষ্টি গুন

লাইফস্টাইল ডেস্ক : চিয়া বীজ হল সালভিয়া হিসপানিকা ভোজ্য বীজ...

সোনার দামে নতুন রেকর্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক: সোনার দাম আবারও বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে বাং...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা