মতামত

জ্ঞানের কথায় খুন করতে চায়

মুজিব রহমান

পৃথিবীতে যারাই নতুন কথা বলেছেন, সবাই বিপদে পড়েছেন। দেবতা ও স্রস্টার ভক্তরা তাদের বিপদে ফেলেছেন। কখনো হত্যা করেছেন, কখনো হামলা করেছেন, কখনো জেলে পুরেছেন।বাংলাদেশের জন্য মুক্তচিন্তাই ছিলো নতুন কথা। আরজ আলী মাতব্বর ও আহমদ শরীফের বিরুদ্ধেও লাগাতার লেগে ছিলো। হুমায়ুন আজাদ ও অভিজিৎ রায়সহ বহুজনকে হত্যা করেছে।

দক্ষিণ এশিয়ায় পাকিস্তান ও ভারতেও এমন হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। মকবুল ফিদা হুসেনের মতো বিশ্বখ্যাত শিল্পীকে ভারত ছাড়তে হয়েছে। এটি নতুন নয়। আমরা যত অতীতে যাব, ততই ভয়ঙ্করসব কাণ্ড দেখবো মূর্খ মৌলবাদীদের।

গ্যালিলিওকে ওরা ক্ষমা চাইতে বাধ্য করেছিলো। তিনি বলেছিল পৃথিবী গোলাকার ও সূর্যের চারদিকে ঘোরে। তাঁর এই বক্তব্য সব ধর্মের সাথেই সাংঘর্ষিক। যদি এটা সত্য হয় তবে ধর্মকে টিকিয়ে রাখা যায় না। তবে পৃথিবীতে অজ্ঞ ও মূর্খ লোকের সংখ্যা এখনও প্রচুর বিশেষ করে দরিদ্র ও মানহীন শিক্ষার দেশগুলোতে। গ্যালিলিওর আগে এমন কথা বলেছিলেন ব্রুনো। তাকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছিলো। কোপার্নিকাস যদি বেঁচে থাকতেন তবে ব্রুনোর আগে তাকেই হত্যা করা হতো।

এর আগে বছরের পর বছর ছিলো ইউরোপের অন্ধকার যুগ। সেখানে জ্ঞানচর্চা নিষিদ্ধ হয়ে ছিলো। এরমধ্যেই আলো ছড়াতে চেয়েছিলেন আরব/পারস্য অঞ্চলের বেশ কয়েকজন দার্শনিক। তারাও রাষ্ট্র ও মৌলবাদীদের নিপীড়নের মুখে পড়ে এবং একসময় বাগদাদ কেন্দ্রিক সকল জ্ঞানচর্চাও বন্ধ হয়ে যায়।

ইউরোপের মতো আরব/পারস্য অঞ্চলও ঢুকে যায় অন্ধকারে। এসবের আগে আমরা দেখেছি হাইপেশিয়াকে যিনি আলেকজান্দ্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। তাকেও মূর্খ খৃস্টান মৌলবাদীরা হত্যা করে নির্মমভাবে।

তাদের আগে যেমন জ্ঞানচর্চার বিকাশ ঘটেছিলো নগররাষ্ট্র এথেন্সে আবার মৌলবাদীদের হাতে প্রচুর নিপীড়নের ঘটনাও ঘটে সেখানে। সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা সক্রেটিসকে হেমলক পান করিয়ে হত্যা করা। তার বিরুদ্ধেও অভিযোগ আনা হয়েছিল—প্রচলিত ধর্ম অবমাননার, নতুন ধর্ম সৃস্টি ও যুবকদের বিপথগামী করার। এক এথেন্সেই ঘটেছে বহু ঘটনা। দার্শনিক এনাক্সগোরাস বলেছিলেন, সূর্য হলো একটি লাল ধাতুর গোলক।

সূর্যের চলাচলে দেবতাদের হাত নেই। তখন এথেন্সের মানুষের ধর্ম বিশ্বাস ছিলো—দেবতা অ্যাপোলো প্রতিদিন চারঘোড়ার রথ টেনে সূর্যকে পূর্ব থেকে পশ্চিমে নিয়ে যায়। হিন্দু পুরাণে ৭ ঘোড়ার কথা বলা আছে। ইসলামে আছে ৭০ হাজার ফেরেশতার কথা। তারাও সূর্যকে পূর্বাকাশ থেকে পশ্চিমে টেনে নিয়ে যেতো। এনাক্সগোরাসের বিরুদ্ধে ধর্মদ্রোহিতার অভিযোগ আনা হয়। তিনি পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। এথেন্সকে একসময় সাজিয়েছিলেন মহান শিল্পী ফিডিয়াস।

মন্দিরের কোথাও তাঁর মুখাবয়ব রয়েছে দাবি করে তাঁর বিরুদ্ধেও উঠে নিজেকে দেবতা ঘোষণার অভিযোগ। তাঁকে অন্ধকার জেলে ঢুকানো হয় এবং বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়। দার্শনিক প্রোটাগোরাস বলেছিলেন দেবতারা কিছুই নিয়ন্ত্রণ করে না, মানুষই সবকিছুর পরিমাপক। প্রোটাগোরাসের বিরুদ্ধেও ধর্মবিরোধীতার মামলা হয়েছিলো। তিনিও পালিয়ে যান। তবে তিনি বেশিদিন বাঁচতে পারেন নি। শিল্পী ডেমনই প্রথমে দেবতার পরিবর্তে মানুষের গান গাওয়া শুরু করেছিলেন।

তার বিরুদ্ধে দেবতাদের অবমাননার অভিযোগ আনা হলে তিনিও পালিয়ে যান। নারী দার্শনিক আসপাশিয়ার বিরুদ্ধেও অভিযোগ আনা হয় যে, তিনি নারীদের কুপথে নিয়ে যাচ্ছেন। এ মামলায় ধর্মান্ধ মৌলবাদীরা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হলেও নতুন অভিযোগ আনে- সে দেবতা মানে না, দেবতাদের নিয়ে বাজে কথা বলে।

ভারতে বৈদিক সংস্কৃতিতে আমরা আরো ভয়াবহতা দেখেছি। কোন শুদ্র ধর্মচর্চা করছেন—এমনটা শুনে পৌরাণিক দেবতা রাম তাকে হত্যা করে। নিম্নবর্ণের মানুষ গীতা, বেদ বা কোনো ধর্মীয় শ্লোক উচ্চারণ করলেই তার জিহ্বা কেটে ফেলা হতো, গ্রন্থ পড়তে শিখলে তার চোখ উপড়ে ফেলা হতো এবং গোপনে কান পেতে ধর্মেরবাণী শুনলে তার কানে শিসা ঢেলে দেয়া হতো। ব্রাহ্মণরা ধর্মের দোহাই দিয়ে শয়ে শয়ে শিশু-কিশোরীদের বিয়ে করতো।

সমাজে ভয়ঙ্কর মনুসংহিতার আইন প্রচলিত ছিলো। ভারতে ধর্মীয় উগ্রতার ধরন বদলেছে মাত্র। এখনো গোমাংশ খাওয়ার জন্য মুসলিমদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। গরুর বর্জ্য-মূত্র-গোবর সেবন করে ধর্মের দোহাই দিয়ে, লাখ লাখ মানুষ নগ্ন হয়ে কুম্ভমেলা করে। সাম্প্রতিক সময়েও ঘটছে হিন্দুত্ববাদী চেতনার বিরুদ্ধে কথা বলার শাস্তি হিসেবে হত্যার ঘটনা। ভারতের বেঙ্গালুরুর প্রখ্যাত কবি ও সম্পাদক পি লঙ্কেশের কন্যা সম্পাদক গৌরী লঙ্কেশকে শুধু সংঘ পরিবার ও হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধে লেখার জন্য ২০১৭ সালে গুলি করে হত্যা করে হিন্দু জঙ্গিরা।

মৌলবাদীদের উন্নত বিশ্ব কোনঠাসা করেই এগিয়ে যাচ্ছে। এখন সময় আসছে এশিয়ারও। জাপান, সিংগাপুর, হংকং, তাইওয়ান, চীন এগিয়ে যাচ্ছে মৌলবাদকে কবর দিয়েই। দক্ষিণ এশিয়া, আরব, ইরান, আফ্রিকাকেও ভাবতে হবে- জ্ঞানের কথা। অজ্ঞতা ও মূর্খতা নিয়ে পড়ে থাকলে কেবলই পিছিয়ে পড়ে থাকতে হবে।

লেখক: সাধারণ সম্পাদক, অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন, শ্রীনগর শাখা

সান নিউজ/এমএম

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

নোয়াখালীতে ভূমি দুস্যুর বিরুদ্ধে মানববন্ধন 

নোয়াখালী প্রতিনিধি: নোয়াখালীর কোম...

ফসলের ক্ষতি করে চলছে অবৈধ ব্যাটারি ইন্ডাস্ট্রি

কামরুল সিকদার, বোয়ালমারী (ফরিদপুর):

কেশবপুরে নির্বাচনী কার্যালয়ের শুভ উদ্বোধন

আব্দুর রাজ্জাক সরদার, কেশবপুরঃ আগামী ০৮ ই মে ২০২৪, রোজ বুধবা...

আজ শেরে বাংলার ৬২তম মৃত্যুবার্ষিকী

নিজস্ব প্রতিবেদক: আজ অবিভক্ত বাংল...

আফ্রিকায় ভারী বৃষ্টি, নিহত ১৫৫

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আফ্রিকায় গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ভারী বৃষ্টি হ...

খাগড়াছড়িতে ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত

আবু রাসেল সুমন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি:

বরিশালে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ৩ জনের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক: বরিশালের বাকেরগ...

সেরা সুন্দরী হলেন ৬০ বছরের আলেজান্দ্রা 

বিনোদন ডেস্ক: সম্প্রতি ৬০ বছর বয়স...

সোনার দাম ফের কমলো 

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের বাজারে সো...

গরমে বারবার গোসল করা কি ক্ষতিকর?

লাইফস্টাইল ডেস্ক: বৈশাখের শুরু থে...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা