ছবি: সংগৃহীত
ঐতিহ্য ও কৃষ্টি

মমি তৈরি শেষ হলেই মৃত্যু!

সান নিউজ ডেস্ক: মিশরের নাম শুনলেই প্রথমেই যে কথাটা সবার মাথায় আসে, তা হচ্ছে মমি। শুধু প্রাচীন মিশরেই নয়; চীন, ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের প্রাচীন মানুষ, গুয়াঞ্চস এবং ইনকাসহ দক্ষিণ আমেরিকার অনেক প্রাক-কলম্বিয়ান সমাজেও মমিকরণের প্রচলন ছিল। মিশরীয় সভ্যতারও এক হাজার বছর আগে উত্তর চিলি এবং দক্ষিণ পেরুর চিনচেরাতে মমির সংস্কৃতি চালু হয়।

আরও পড়ুন: চিত্রনায়ক জাফর ইকবাল'র জন্ম

অন্যদিকে মমি মানেই হচ্ছে মিশরের পিরামিডের কোনো গুপ্তঘর। যেখানে গেলেই পাওয়া যাবে শত শত কফিনবন্দি মমি। মিশরের পিরামিডের ভেতরে এ পর্যন্ত অনেক ফারাও রাজাসহ বিভিন্ন মানুষ, পশু-পাখির মমির সন্ধান পাওয়া গেছে। সেকালে মানুষের ধারণা ছিল মৃত্যুর পর আবারও ফিরে আসা যায়। সেখানেও আছে আরেক জীবন। এজন্য শরীর নষ্ট হতে দিতেন না তারা। সংরক্ষণ করে রাখতেন। সঙ্গে খাবার, পোশাক, গয়না, টাকা-পয়সাসহ পোষা কুকুর-বিড়ালকেও দিয়ে দিতেন।

ওয়ার্ল্ড হিস্টোরি থেকে জানা যায়, মমিকরণের প্রথার সঙ্গে মিশরীয়দের আরও একটি অদ্ভুত প্রথা ছিল মমি কর্মীদের হত্যা করা। হায়ারোগ্লিফ লিপির পাঠোদ্ধারের পর প্রকাশ্যে আসে এমনই ভয়ংকর ইতিহাস। খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম শতকের সিসিলিয়ান ঐতিহাসিক ডায়োডোরাস সিকুলাসের গ্রন্থ বিবলিওটেকা হিস্টোরিয়াতেও পাওয়া যায় এমন তথ্য। ওই সময়ের ধারাবাহিক ইতিহাসকে এ গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেছিলেন ডায়োডোরাস। এই গ্রন্থে মিশরীয়দের জীবনযাপন ও রীতি-রেওয়াজ, নীল নদ, মমির কথা বলেছেন তিনি।

আরও পড়ুন: হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী বাঁশ শিল্প

ডায়োডোরাসের কথায়, মমি তৈরির মধ্যে যেমন মিশরীয়দের ধর্মীয় আচার লুকিয়ে আছে; তেমনই আছে বিজ্ঞানের ব্যবহারও। সমাজের কোনো বিশিষ্ট ব্যক্তি মারা গেলে প্রাথমিকভাবে তার দেহ নিয়ে যাওয়া হতো ‘ইবু’ নামের একটি ঘরে। মিশরীয় ভাষায় ‘ইবু’ কথার অর্থ ‘বিশুদ্ধকরণের মন্দির’।

একেকটি মমি তৈরি করতে লাগত ৪০ থেকে ৭০ দিন। মমি করার কাজে একইসঙ্গে চিকিৎসাবিজ্ঞান এবং রসায়নে পারদর্শী হতে হতো কর্মীদের। মমি তৈরি করতে মৃতদেহ ইবুতে আনার পর তালের তৈরি মদ ও নীল নদের পানি দিয়ে পরিষ্কার করা হতো মৃতদেহ। এই কাজ করতেন, তাদের বলা হতো ‘স্ক্রাইব’। তাদের কাজ ছিল শুধু মৃতদেহ পরিষ্কার করা। অর্থাৎ আচার মেনে মৃতদেহের শুদ্ধিকরণ করতেন স্ক্রাইবরা।

এরপর শুরু হতো অস্ত্রোপচার। শরীর থেকে বের করা হতো হৃৎপিণ্ড ছাড়া বাকি সব পচনশীল অঙ্গ। হৃৎপিণ্ড তারা বের করতেন না। কারণ মিশরীয়দের ধারণা ছিল, মৃত্যুর পরে হৃৎপিণ্ডের ওজন করেই মানুষের আত্মার বিচার করেন আনুবিস। দেহের উপরিভাগের অঙ্গগুলো বড়শির সাহায্যে মুখ দিয়ে বের করে ফেলা হতো। তবে পাকস্থলি ও নিম্নাঙ্গগুলো বের করতে শরীরের বাঁ দিকে সামান্য গর্ত করে নিতেন।

মৃতদেহের শরীরে গর্ত করার এই কাজ করতেন ‘স্লিটার’ নামের একদল কর্মী। বলতে গেলে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ ছিল তাদেরই। মমিকরণের জন্য এ পদ্ধতি একদিকে যেমন অত্যন্ত জরুরি ছিল; তেমনই মিশরীয়দের বিশ্বাস ছিল মৃতদেহে আঘাত বা ক্ষত তৈরি করা ভয়াবহ পাপ এবং তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এজন্য মিশরীয়রা যে কাজটি করতেন, তা শুনলে যে কারো চক্ষু চড়কগাছ হতে বাধ্য।

স্ক্রাইবদের চিহ্ন করে দেওয়া অংশের মাংস কেটেই দৌড়াতে শুরু করতেন স্লিটাররা। অন্যদিকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত স্থানীয়রা তাদের মাথা লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়তে থাকতেন। পাথরের আঘাতে অনেকে গুরুতর আহত হতেন। কেউবা ঘটনাস্থলেই মারা যেতেন।

এই পেশাকে মিশরীয়রা বলতেন অকৃতজ্ঞ কাজ। অকৃতজ্ঞ বলতে যেহেতু মৃতদেহে আঘাত করা ভয়াবহ পাপ, তাই স্লিটাররা ছিলেন পাপী আবার অকৃতজ্ঞ প্রজা। এমনকি তারা মারা গেলে তাদের মৃতদেহের কাছে ঘেঁষতেন না সাধারণ মানুষ।

অন্যদিকে মমিকরণের জগতে সবচেয়ে সম্মানজনক কাজ ছিল স্ক্রাইবদের। তবে ঝুঁকিপূর্ণ কাজের জন্য সবচেয়ে বেশি অর্থ পেতেন স্লিটাররা। কারণ তাদের কাজ ছিল ছুরি দিয়ে মাংস কাটা এবং দৌড়ানো। তাই স্লিটারদের শরীরবিদ্যা সম্পর্কে শুধু জ্ঞান থাকলেই চলত না। জানতে হতো দ্রুত দৌড়ানোর কৌশলও।

সান নিউজ/এনকে

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ভূমি অফিসে ঘুষ নেওয়ার ভিডিও ভাইরাল, নীরব প্রশাসন; ফুঁসছে জনগন!

মুন্সীগঞ্জ শহরের উপকণ্ঠ পঞ্চসার ইউনিয়ন ভূমি অফিসের জারিকারক লুৎফা আক্তার (৪৫)...

প্রাকৃতিক উদ্ভিদে নিরাপদ খাদ্যের উৎস !

পার্বত্য চট্টগ্রামের উঁচু–নিচু পাহাড়ে বা সাধারণত জমির আশেপাশে সবজি ক্ষে...

ছাত্রলীগ সভাপতির বসতঘরে আগুন

ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার গালুয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি মাছুম বিল্লাহ বাপ্পির...

রামগড়ে অবৈধ ইন্টারনেট সরঞ্জামসহ তিনজন আটক

খাগড়াছড়ির রামগড়ে খান কমপ্লেক্সের চতুর্থ তলার একটি কক্ষ থেকে অবৈধ ইন্টারনেট...

আজ সেই ভয়াল ১৫ নভেম্বর, ১৮ বছরেও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি উপকূলবাসী

২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর—দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জীবনে এক বিভীষিকাময় রাত। ভয়...

মধুখালীতে ৬৫ পিস ইয়াবাসহ আটক যুবক

ফরিদপুরের মধুখালীর কুখ্যাত ডাকাত ও একাধিক মামলার পলাতক আসামি মোঃ রানা (২৬) কে...

হাতের অপারেশন করাতে গিয়ে প্রাণ গেল নারীর

নোয়াখালীর জেলা শহর মাইজদীর প্রাইম হসপিটালে ভুল চিকিৎসায় রাবেয়া বেগম (৪৮) নামে...

মাদারীপুরে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সদস্য আটক

মাদারীপুর সরকারি কলেজের নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুস সো...

প্রাকৃতিক উদ্ভিদে নিরাপদ খাদ্যের উৎস !

পার্বত্য চট্টগ্রামের উঁচু–নিচু পাহাড়ে বা সাধারণত জমির আশেপাশে সবজি ক্ষে...

লকডাউনের আজাহার দিনে বিএনপি, রাতে আ. লীগ

মাদারীপুরে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে আওয়ামী লীগের ডাকা ১৩ নভেম্বরের লকডাউন স...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা