নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঢাকার মহাখালীতে অবস্থিত সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ইউনিটের জন্য জরুরি ভিত্তিতে কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসের আবেদন করেও গণপূর্ত বিভাগ থেকে সাড়া না পওয়ার অভিযোগ উঠেছে। একইসঙ্গে হাসপাতালে আইসোলেশন ইউনিটের ১০ বেডকে থাই গ্লাসের পার্টিশন দিয়ে পৃথক করার আবেদনও করা হয়।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৩ ফেব্রুয়ারি সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. ভোলানাথ বসাক মিরপুর-১ এ অবস্থিত গণপূর্ত ই-এম বিভাগ (৮)-এর নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর আবেদন করেন। এরপর ইমেইল এবং ফোনও করা হয়েছে। কিন্তু তারা বিষয়টি নিয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগই করেনি।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. সুলতান মাহমুদ বলেন, কোয়ারেন্টাইনের জন্য পাশাপাশি ১০ বেড একসঙ্গে রাখা যুক্তিসঙ্গত নয়। কারণ, কোয়ারেন্টাইনে কেউ যদি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয় তার থেকে অন্যদেরও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এজন্য আমরা প্রতিটি বেডকে আলাদা করার কথা ভেবেছি, গণপূর্তর কাছে আবেদন করেছি। কিন্তু তারা এখন পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।
তিনি আরো বলেন, হাসপাতালে সন্দেহভাজন রোগীরা যাতে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে ভালো থাকেন সেজন্য আইপিএস, এসি, টেলিভিশন, ওয়াইফাই কানেকশন ও সিসি টিভি ক্যামেরার জন্যও গণপূর্ত বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সেখানে কোনও জেনারেটর নেই বলেও জানান তিনি।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন অনুবিভাগ) ড. মো আফজাল হোসেন বলেন, দুই এলাকার দুই নির্বাহী প্রকৌশলীকে আবেদন দেওয়া হয়েছে, সচিবকে দেওয়া হয়নি, সেটা না হলে আমি বলতে পারবো না।
এদিকে চীনের উহানে শুরু হওয়া করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২,৮০১ জনে। নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন আরও ৪৩৩ জন। এ নিয়ে এ ভাইরাসে আক্রান্তের মোট সংখ্যা ৮২ হাজার ছাড়িয়েছে। আর সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন প্রায় ৩৩ হাজার। বৃহস্পতিবার চীনা সংবাদমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে।
প্রাণঘাতি ভাইরাসটি ইতিমধ্যে এশিয়া ছেড়ে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও আফ্রিকায় ছড়িয়েছে। যেখানে নতুন করে যুক্ত হয়েছে ব্রাজিল, সুইডেন, নরওয়ে, গ্রিস, রোমানিয়া, আলজেরিয়া ও পাকিস্তানের নাম।
এদিকে বিবিসি বলছে, পুরো ইউরোপে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ইতালি। এই দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ২৫% বৃদ্ধি পেয়েছে। ইতালিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে মিলানের আশেপাশের এলাকা। লম্বার্ডি, ভেনিস, ভেনেটোসহ মোট ১১টি শহর এখন সংক্রমিত। এসব শহরের ৫৫ হাজার মানুষকে কোয়ারেনটাইন করে রাখা হয়েছে। এ ভাইরাসে দেশটিতে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১২ জন। আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত ৪০০।
চীনের বাইরে সবচেয়ে বেশি নিহত হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরানে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনার প্রাদুর্ভাবে ১৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আক্রান্তের সংখ্যা দেড়শ’র কাছাকাছি।
এদিকে দক্ষিণ কোরিয়ায় এখন পর্যন্ত ১৩ জন মারা গেছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৩৩৪ জনের দেহে করোনা শনাক্ত করেছে দেশটির চিকিৎসা বিভাগ। এ নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৫৯৫ তে।
জাপানি প্রমোদতরী ডায়মন্ড প্রিন্সেসে এখন পর্যন্ত চারজন প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়া জাপানে-৩, হংকংয়ে-২, তাইওয়ানে-১, জার্মানিতে-২ ও ফিলিপাইনে একজন মারা গেছেন।
এদিকে ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি বিমান চিকিৎসা সামগ্রী পৌঁছে দিতে চীনের হুবেই প্রদেশে গিয়েছিল। ফিরতি যাত্রায় বিমানটি বিভিন্ন দেশের ১১২জনকে নিয়ে দিল্লি ফিরে । এদের মধ্যে ২৩ জন বাংলাদেশিও রয়েছেন। তারা ভারত সরকারের সহায়তায় দিল্লি পৌঁছেছেন। ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশন এক ফেইসবুক পোস্টে তথ্যটি নিশ্চিত করে।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এক টুইটে জানান, ওই ফ্লাইটে ৭৬ জন ভারতীয়র সঙ্গে বাংলাদেশ, মিয়ানমার, মালদ্বীপ, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও মাদাগাস্কারের ৩৬ জন উহান থেকে দিল্লি পৌঁছেছেন।
আতঙ্ক ছড়ানো করোনা ভাইরাসটি যাতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে না পড়ে সে ভয়ে ওমরাহ যাত্রী ও মসজিদে নববী ভ্রমণেও সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করে সৌদি আরব। বৃহস্পতিবার দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায়।
২৬ ফেব্রুয়ারি বুধবার বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বুকে ব্যথা, জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে গোলাম দস্তগীর গাজীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তার রোগের উপসর্গ কারণে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। কিছুদিন আগে তিনি চিকিৎসা শেষে সিঙ্গাপুর থেকে বাংলাদেশে আসেন।
তবে বিএসএসএমইউর (ভিসি) কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন একটি চক্র ছড়িয়েছিল তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। গুজবটি হাসপাতালে ছড়িয়ে পড়লে সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
কোভিড নাইনটি নিয়ে বুধবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, প্রথমবারের মতো ভাইরাসটি চীনের বাইরে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এই ভাইরাসের উদ্ভব হয়েছে চীন থেকেই। তবে চাইলে এখনো এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কেননা এই ভাইরাসের সংক্রমণ যে বিশ্বব্যাপী মহামারী আকার নেবে সেটাও অনিবার্য নয়।
সান নিউজ/সালি