ছবি: সংগৃহীত
সারাদেশ

ইটভাটায় ফসলী জমির মাটি বিক্রির মহোৎসব

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ: মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখান উপজেলায় ধলেশ্বরী নদীসহ ৩ ফসলি জমির মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রির মহোৎসব চলছে। এসব মাটি পরিবহন করতে গিয়ে ধুলোবালিতে আচ্ছন্ন হয়ে থাকছে উপজেলার বেশ কিছু এলাকা।

আরও পড়ুন: ভালুকায় বসতঘরে আগুন, থানায় অভিযোগ

প্রতিদিন প্রায় শতাধিক অবৈধ মাহেন্দ্রা দিয়ে এ সমস্ত মাটি ইটভাটায় পরিবহন করায় একদিকে মাহেন্দ্রার বিকট শব্দ, অপরদিকে ধুলোবালিতে বিপর্যস্ত হচ্ছে পরিবেশ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সিরাজদীখান উপজেলার লতব্দি ইউনিয়নের খিদিরপুর, রামকৃষ্ণদি ও নয়াগাঁও এলাকার ৪টি কৃষি জমিতে মাটি কাটার মহোৎসব চলছে। অর্ধশতাধিক মাহেন্দ্রা এ সমস্ত মাটি ইটভাটায় পরিবহন করছে। এতে ধুলোবালিতে আচ্ছন্ন হয়ে রয়েছে পুরো এলাকা।

খিদিরপুর এলাকায় ৩ ফসলি জমির মাটি কেটে পাশের এবিসি ইট ভাটায় বিক্রি চলছে। ওই মাটি কাটার দেখভালের দায়িত্বে থাকা আবুল কাশেম বলেন, নদীর পাড়ের সব ইটভাটায় আমরা মাটি দেই। যে জমি থেকে মাটি কাটা হচ্ছে, এটার মাটি আমরা মাসুম মাস্টারের কাছ থেকে কিনছি। আমরা পতিত জমির মাটি কাটি, ফসলি জমির না।

আরও পড়ুন: চাষাঢ়ায় ভুল চিকিৎসায় কিশোরীর মৃত্যু

স্থানীয়ভাবে জানা গেছে, সিরাজদীখান উপজেলার লতব্দী, বাসাইল, কেয়াইন, রাজানগর, চিত্রকোট ও শেখেরনগর ইউনিয়নের ৩ ফসলি জমিসহ ধলেশ্বরী নদীর মাটি দীর্ঘদিন যাবৎ লুটপাট চলছে।

এর মধ্যে কেয়াইন ইউনিয়নের ধলেশ্বরী নদীর প্রথম ব্রীজ সংলগ্ন স্থান থেকে মাটি কাটছেন ওমর ও মিন্টু গংরা। তারা ধলেশ্বরী নদীর মাটি কেটে বিক্রি করছেন বিভিন্ন ইটভাটায়।

এ ব্যাপারে ওমরের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্রীজের পাশের নদীর মাটি কাটার বিষয়ে অস্বীকার করে বলেন, আমি ব্রীজের পাশের কোন মাটি কাটি নাই। ব্রীজের নিচের মাটি মন্টু ও ইমরান কাটতেছে। আমি মাটি কিনে তারপরে বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি করে থাকি।

আরও পড়ুন: গাইবান্ধায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে সূর্যমুখী

এদিকে রামকৃষ্ণদি এলাকায় মাটি কাটছেন বাসাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামের ছেলে রুবেল, জামাতা জহিরুল, মিজান ও শান্ত আসাদ গংরা।

এ ব্যাপারে ঐ এলাকায় কৃষি জমির মাটি খননকারী আসাদের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি কোন মাটি কাটি না। মাটি মাসুদ রানা কাটতেছে।

পরে মসুদ রানার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি কোন মাটি কাটি না। আমার একটি ইটভাটা আছে। আমি শুধু ইটভাটা চালাই, কোন মাটি কাটার সাথে আমি জড়িত না।

আরও পড়ুন: বরগুনায় কার্গোর ধাক্কায় ভেঙে গেল ব্রিজ

এছাড়া অভিযুক্ত মিজান বলেন, আমরা জমির মালিক থেকে মাটি কিনে তারপর কেটে ইটভাটা ও মানুষের বাড়িতে দিচ্ছি। আমরা কারো মাটি জোর করে কাটি না।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভূমি দস্যুরা যখন কোন জমির মাটি কেনেন তখন ভেকু মেশিন (মাটি খনন যন্ত্র) দিয়ে ১৫/২০ ফুট গভীর করে খাড়াভাবে মাটি কাটার কারণে অল্প কয়েক দিনের মধ্যে পার্শ্ববতী জমির মাটি ভেঙে পরে।

তখন পার্শ্ববর্তী ওই জমির আর ফসল ফলানোর উপযোগী থাকে না। তখন বাধ্য হয়ে জমির মালিককে দালালের মাধ্যমে তাদের কাছে মাটি বিক্রি করতে হয়।

আরও পড়ুন: আগুনে পুড়ে ছাই ২০০ দোকান

ট্রাক বা ট্রলিতে ভর্তি করে জোর করে অন্যের জমির উপর দিয়ে এবং স্থানীয় ইউনিয়ন ও গ্রামীণ সড়ক দিয়ে এ সমস্ত মাটি নিয়ে যাওয়া হয় ইটভাটায়। মাটি ভর্তি ট্রাক কিংবা ট্রলিগুলো সড়ক দিয়ে নেয়ার সময় রাস্তাগুলো ভেঙে যায়।

আবার ধুলোবালিতে এলাকা অন্ধকার হয়ে যায়। বাড়িঘরে ধুলোবালির কারণে খাওয়া-দাওয়া ও কাপড় শুকানোয় অসুবিধাসহ নানা রোগ-বালাই দেখা দেয়। এতে এলাকাবাসীর স্বাভাবিক জীবনযাপন করা কঠিন হয়ে পরেছে।

লতব্দী নয়াগাঁও এলাকার কৃষক জবান আলী বলেন, প্রতিদিন আমাদের এলাকার ফসলি জমির মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি চলছে। পাশের জামি থেকে মাটি কাটার কারণে ধুলোবালি এসে আমাদের জমিতে পরছে। এতে আমাদের ফসল নষ্ট হচ্ছে।

আরও পড়ুন: বোয়ালমারীতে কাটাগড় মেলার মাঠ পরিদর্শন

নয়াগাঁও গ্রামের অপর কৃষক সুমন বলেন, আমাদের বাড়ির পাশ দিয়ে প্রতিদিন শত শত মাহেন্দ্রা চলছে। মাহেন্দ্রার শব্দে রাতে আমরা ঘুমাইতে পারি না।

এদিকে ভূমির শ্রেণী পরিবর্তন করতে হলে সরকারি আইন অনুযায়ী ভূমির মালিককে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এস এ শাখায় আবেদন করতে হয়। পরেসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা পরিদর্শনের পর প্রয়োজনীয় সুপারিশ করলে এর পরিপ্রেক্ষিতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) অনুমোদন দেবেন।

কোনো কোনো ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকও এ অনুমতি সরাসরি দেন। তবে এই নিয়মের তোয়াক্কা করছে না ভূমিদস্যুরা। এমনকি তারা বিক্রি করছে নদীর মাটিও।

এ ব্যাপারে উপজেলার লতব্দী ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা আবু সালেক জানান, ফসলি জমির মাটি কাটার বিষয়টি উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) অবহিত করেছি।

আরও পড়ুন: ভোলায় সাড়ে ৩ হাজার কেজি মাছ জব্দ

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু সাঈদ শুভ্র জানান, কৃষি জমির মাটি কাটার ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি ফসলি জমির উর্বরা শক্তি আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পায়। দেশে কৃষি জমির পরিমাণ কমে বেকার হচ্ছে কৃষক। মাটি কাটার বিষয়ে আমি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করব।

সিরাজদীখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মুজাহিদুল ইসলাম জানান, বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের নির্দেশ পেলে ব্যবস্থা নেব।

এ ব্যাপারে সিরাজদীখান উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি উন্মে হাবিবা ফারজানা বলেন, আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

সান নিউজ/এনজে

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

সকালে রাজধানীতে মুষলধারে বৃষ্টি

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীতে তীব্র তাপপ্রবাহের পর স্বস্তির বা...

২১ বছর পর পৃথিবীতে সৌরঝড়ের আঘাত 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ২১ বছর পর পৃথিবীতে শক্তিশালী সৌরঝড় আঘাত...

ইউপি চেয়ারম্যানকে গ্রেফতারের দাবি

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ : উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রথম ধ...

টিভিতে আজকের খেলা

স্পোর্টস ডেস্ক: প্রতিদিনের মতো আজ...

ভোলায় লাজ ফার্ম মডেল ফার্মেসির উদ্বোধন 

ভোলা প্রতিনিধি: দ্বীপ জেলা ভোলায়...

বিশ্বকাপের দল ঘোষণা কাল

স্পোর্টস ডেস্ক : আসন্ন যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে...

আবারও বাড়ল সোনার দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক : আবারও দেশের বাজারে সোনার দাম বেড়েছে। শনিব...

এসএসসির ফল কাল, জানা যাবে যেভাবে

নিজস্ব প্রতিবেদক : সারাদেশে এসএসসি পরীক্ষার ফল আগামীকাল রোবব...

বজ্রপাতে দুই শ্রমিকের মৃত্যুৃ

জেলা প্রতিনিধি : বাগেরহাটের শরণখোলায় বজ্রপাতে ২ নির্মাণশ্রমি...

রাজনীতিতে পরিত্যক্তদের আওয়াজই বড়

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজনীতিতে কিছু পরিত্যক্ত মানুষ আছে, যারা...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা