নিনা আফরিন, পটুয়াখালী : ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-এর প্রভাবে পটুয়াখালীর উপকুল জুড়ে বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে। রোববার (২৩ অক্টোবর) রাত থেকে উপকূলের বেশিরভাগ এলাকায় মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। রাস্তাঘাট অনেকটাই ফাঁকা রয়েছে। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হচ্ছে না।
আরও পড়ুন : সাবেক চেয়ারম্যানসহ ২৩ জন কারাগারে
টানা বর্ষনে বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবীরা। গত ২৪ ঘন্টায় কলাপাড়ায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া বিভাগ। বৃষ্টির পানি জমে বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর উত্তাল রয়েছে।
মাছ ধরার উপর ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা থাকায় সমুদ্রগামী সকল ট্রলার নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন এলাকায় সচেতনতামূলক মাইকিং করছে কোষ্টগার্ড, রেড ক্রিসেন্ট ও সিপিপি ভলান্টিয়াররা। দূর্যোগ কবলিত এলাকার মানুষদের নিরাপদ আশ্রয় দিতে জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় ইতিমধ্যে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৭০৩ টি আশ্রয় কেন্দ্রসহ ২৬ টি মুজিব কিল্লা।
আরও পড়ুন : উলপুরে আ’লীগ সভাপতি রানা, সম্পাদক মন্টু
জেলা দূর্যোগ ও ত্রাণ অধিদপ্তর জানায় জেলায় নির্মিত ৫১ টি মুজিব কিল্লার কাজ চলমান রয়েছে। এর মধ্যে দশমিনার ৪টা, রাঙ্গাবালী ৩টি এবং কলাপাড়া উপজেলার ১৯টি মুজিব কিল্লার কাজ শেষ হওয়ায় এগুলো ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এ আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব মুজিব কিল্লাগুলো প্রায় ১৫ হাজার মানুষ এবং সাড়ে সাত হাজার গবাদি প্রাণী আশ্রয় নিতে পাবরে।
পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ হোসেন জানান, জেলার প্রায় ১৬১ টি পয়েন্টে ১৫ কিলোমিটারের অধিক বেরীবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। এর মধ্যে অর্ধশতাধী পয়েন্ট অধিক ঝুঁকিপূর্ন ।
আরও পড়ুন : নোয়াখালীতে সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেফতার
ইতিমধ্যে অধিক ঝুকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে ১০ হাজার জিও ব্যাগসহ লোকবল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বিভিন্ন নদ-নদীর পানি স্বাভাবিক রয়েছে। তবে রাতের জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেতে পাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে বলে আশংকা প্রকাশ করেন তিনি।
জেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাঙ্গাবালী উপজেলার চর মোন্তাজ ইউনিয়নের চর আন্ডা এলাকার তুহিন হাওলাদার(২৮) জানান, তাদের এলাকায় বেড়িবাঁধের ভাঙ্গা অংশ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল। পূবের বাতাসের সাথে প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে। রাতে অবস্থা ভয়াবহ হবার আশংকা ব্যাক্ত করেন তিনি।
আরও পড়ুন : ইউএনও’র যৌন হয়রানি, শাস্তি তিরস্কার!
পটুয়াখালী বিআইডব্লিউটিএ উপ পরিচালক মামুন অর রশীদ জানান গতকাল থেকে ৬৫ ফুটের চেয়ে কম দৈর্ঘ্যের নৌযান চলাচল বন্ধ রাখতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আজ সোমবার (২৪ অক্টোবর) পটুয়াখালী থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ডাবল ডেকার কোন লঞ্চ ছাড়তে দেয়া হবে না বলেও জানান তিনি।
জেলা দূর্যোগ ও ত্রাণ কর্মকর্তা সুমন দেবনাথ জানান,জেলায় প্রায় সাড়ে সাত হাজার স্বেচ্ছাসেবক মাইকিং করে সাধারন মানুষকে আশ্রয়ন কেন্দ্রে নিতে কাজ করছে। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা,জনপ্রতিনিধিরা তাদের স্ব স্ব এলাকায় মানুষকে আশ্রয়ন কেন্দ্রে পৌছতে কাজ করছে।
আরও পড়ুন : নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, আশ্রয়ণ কেন্দ্রে মানুষ
পুলিশ সুপার মো.সাইদুল ইসলাম জানান, পটুয়াখালী জেলা পুলিশের ৯টি থানা,একাধীক তদন্ত কেন্দ্র ও ফাড়ির পুলিশ সদস্যরা তাদেও নিজ নিজ কর্ম এলাকায় প্রশাসনের সাথে কাজ করছে। যে কোন পরিস্থিতিতে পুলিশ সদস্যরা তৎপর রয়েছে বলে জানান তিনি।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন জানান, মানুষকে মাইকিং করে আশ্রয়ন কেন্দ্রে নিতে সবাই কাজ করছে। ইতিমধ্যে ৭০৩টি আশ্রয়ন কেন্দ্রসহ ২৬টি মুজিব কিল্লা বিদ্যুত,সুপেয় পানি,পর্যাপ্ত শুকনা খাবার ও প্রাথমিক চিকিৎসা সরঞ্জামসহ প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুন : লুডু খেলাকে কেন্দ্র করে হতাহত ৫
আশ্রয় কেন্দ্রে আসা মানুষদের যাতে কোন রকম কষ্ট না হয় সে বিষয়ে প্রশাসন অত্যন্ত তৎপর রয়েছে। তিনি জানান,যেহেতু স্বাভাবিকের চেয়ে পানি ৩ থেকে ৫ ফুট বাড়ার সম্ভবনা রয়েছে তাই সবাইকে তাদের গবাদি পশু আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
সান নিউজ/এইচএন