নিজস্ব প্রতিবেদক : ‘নান্দনিক চলচ্চিত্র, মননশীল দর্শক, আলোকিত সমাজ’-এ প্রতিপাদ্যে আগামী শনিবার (১৬ জানুয়ারি) থেকে শুরু হতে যাচ্ছে উনবিংশ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। মুজিব শতবর্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি উৎসর্গ করে ১৯৯২ সালের ধারাবাহিকতায় ‘রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদ’ এই উৎসবের আয়োজন করেছে। ৯ দিনব্যাপী দেশের বৃহত্তম এ চলচ্চিত্র উৎসব শেষ হবে আগামী ২৪ জানুয়ারি।
শনিবার রাজধানীর শাহবাগে অবস্থিত জাতীয় জাদুঘরের মূল মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে এবারের এ উৎসবের উদ্বোধনী আয়োজন। এই আয়োজনে এ উৎসবের উদ্বোধন করবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। এছাড়াও এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. মুরাদ হোসেন ও ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কে দোরাইস্বমী। এবং অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পরেই শুরু হবে উৎসবের চলচ্চিত্র প্রদর্শনী। এবারের এ উৎসবের উদ্বোধনী চলচ্চিত্র হিসেবে দেখানো হবে ফ্রান্সের চলচ্চিত্র ‘স্প্রিং ব্লোসম’। একজন টিনএইজ তরুণীর সঙ্গে একজন পৌড় বা বয়স্ক মানুষের জাগতিক সম্পর্কের টানাপোড়ন নিয়ে নির্মিত হয়েছে এই চলচ্চিত্রটি। এটি পরিচালনা করেছেন-সুজান্না লিনডন।
উৎসবে বাংলাদেশসহ ৭৩টি দেশের ২২৭টি চলচ্চিত্র প্রদর্শনীতে পূর্ণদৈর্ঘ্য (৭০ মিনিটের বেশি) চলচ্চিত্রের সংখ্যা ১০৭টি, স্বল্পদৈর্ঘ্য ও স্বাধীন চলচ্চিত্রের সংখ্যা ১২০টি। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র আছে ৪১টি। যার মধ্যে ৩৩টি স্বল্পদৈর্ঘ্য ও স্বাধীন এবং ৮টি পূর্ণদৈর্ঘ্য।
বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) ঢাকা ক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান উৎসব পরিচালক আহমেদ মুজতবা জামাল। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন উৎসব কমিটির চেয়ারম্যান কিশোয়ার লায়লা, উৎসবের বিচারক শিল্পসমালোচক মঈনুদ্দীন খালেদ, অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী, নায়ক ফেরদৌস আহমেদ প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন উৎসব কমিটির নির্বাহী সদস্য ম. হামিদ।
সংবাদ সম্মেলনে আহমেদ মুজতবা জামাল বলেন, জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তন ও কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তন, কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তন, শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা ও নৃত্যশালা মিলনায়তন, শিল্পকলার নন্দন থিয়েটার (মুক্তমঞ্চ), বসুন্ধরা সিটির স্টার সিনেপ্লেক্স এবং সীমান্ত স্কয়ার সিনেপ্লেক্সে উৎসবের চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে।
তিনি বলেন, এবারের উৎসবে মিলনায়তনের পাশাপাশি অনলাইনেও চলচ্চিত্র দেখার সুযোগ রয়েছে। লাগভেলকি অনলাইন প্লাটফর্মেও উৎসব চলাকালীন নির্বাচিত চলচ্চিত্রগুলো দেখা যাবে।
বরাবরের মত এবারের উৎসবেও থাকছে এশিয়ান ফিল্ম প্রতিযোগিতা বিভাগ, রেট্রোস্পেকটিভ বিভাগ, বাংলাদেশ প্যানারোমা, সিনেমা অফ দ্য ওয়ার্ল্ড, চিল্ড্রেন ফিল্মস্, স্পিরিচুয়াল ফিল্মস, শর্ট অ্যান্ড ইন্ডিপেনডেন্ট ফিল্ম এবং উইমেন্স ফিল্ম মেকার বিভাগ। তবে উৎসবে এবারই প্রথম সংযুক্ত হচ্ছে 'লিজেন্ডারি লিডারস হু চেঞ্জ দি ওয়ার্ল্ড' এবং 'ট্রিবিউট' নামে আরও দু’টি নতুন বিভাগ।
যে সব দেশের চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে তার মধ্যে রয়েছে-আফগানিস্তান, আলবেনিয়া, আর্মেনিয়া, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, আজারবাইজান, বাহরাইন, বেলজিয়াম, ভুটান, ব্রাজিল, কানাডা, চিন, কিউবা, সাইপ্রাস, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, প্যালেস্টাইন, জার্মানি, গ্রিস, হংকং, হাঙ্গেরি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, ইতালি, জাপান, কাজাকস্তান, কসোভো, কিরগিস্তান, লাটভিয়া, লেবানন, লুক্সেমবার্গ, মালয়েশিয়া, মেক্সিয়া, নেপাল, নরওয়ে, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, কাতার, রাশিয়া, স্টোভেনিয়া, স্পেন, দক্ষিণ কোরিয়া, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, সিরিয়া, তাইওয়ান, তাজিকিস্তান, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ভেনিজুয়েলা, সাইপ্রাস এবং বাংলাদেশ।
এবারের উৎসবের চলচ্চিত্রগুলো কোথায় এবং কিভাবে দেখবেন:
১. জাতীয় জাদুঘরের মূল মিলনায়তন: সকাল ১০টা, দুপুর ১টা ও বিকাল ৩টার প্রদর্শনী শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যে দেখতে পারবেন। সেক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র প্রদর্শন করতে হবে। এর বাইরে, সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য টিকেটমূল্য ৫০ টাকা।
২. কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তন: এখানে সকাল ১০টা থেকে শিশুতোষ চলচ্চিত্র প্রদর্শীত হবে। যেখানে অভিভাবকরাও শিশুদের সঙ্গে এই চলচ্চিত্রগুলো বিনামূল্যে উপভোগ করতে পারবেন। এছাড়া, সকাল ১০টা, দুপুর ১টা ও বিকাল ৩টার প্রদর্শনী শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যে দেখতে পারবেন। সেক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র প্রদর্শন করতে হবে। এর বাইরে, সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য টিকেটমূল্য ৫০ টাকা।
৩. জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তন: এই মিলনায়তনের সব প্রদর্শনী সবাই বিনামূল্যে উপভোগ করতে পারবেন। আসন সংখ্যা সীমিত থাকায় আগে আসলে দেখবেন ভিত্তিতে আসন বণ্টন করা হবে।
৪. শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা ও নৃত্যশালা: এখানকার প্রদর্শনীগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত। আসন সংখ্যা সীমিত থাকায় আগে আসলে দেখবেন ভিত্তিতে আসন বণ্টন করা হবে।
৫. শিল্পকলার নন্দনমঞ্চ: এখানকার প্রদর্শনীগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত।
উৎসবের অংশ হিসেবে আগামী ১৭-১৮ জানুয়ারি চলচ্চিত্রে নারীর ভূমিকা বিষয়ক ‘সপ্তম আন্তর্জাতিক উইমেন ফিল্ম মেকারস্ কনফারেন্স’; সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ ১৭ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৯টায় কনফারেন্স উদ্বোধন করবেন। ১৯ জানুয়ারি তৃতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হবে ‘ওয়েস্ট মিটস ইস্ট’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে।
এছাড়াও উৎসবে সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে আগামী ২০ জানুয়ারি বিকেল ৪টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে একটি বিশেষ সেমিনার। এতে ‘সত্যজিৎ রায়: জাতীয় ও বৈশ্বিক’ শিরোনামের মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন মফিদুল হক। এই সেমিনারে আসাদুজ্জামান নূরের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর, ধৃতমান চ্যাটার্জী, বিচারপতি রিফাত আহমেদ এবং চলচ্চিত্র সমালোচক মঈনুদ্দীন খালেদ।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগার চত্বরে থাকবে উৎসবের মূল অফিস। এখানে উৎসবের সব ধরনের তথ্য পাওয়া যাবে। চলচ্চিত্রের যাবতীয় তথ্য সমৃদ্ধ স্মরণিকা প্রকাশিত হবার পাশাপাশি উৎসব চলাকালীন প্রতিদিনকার সংবাদসহ একটি বুলেটিন এখান থেকেই প্রকাশ করা হবে। এছাড়াও, এখানেই দেশি চলচ্চিত্রকার, প্রযোজক, অভিনয় শিল্পীসহ সাংবাদিকদের সিমীত পর্যায়ে সমাবেশের সুযোগ থাকবে।
সান নিউজ/এইচএস/এস
