একনজরে  ‘অমর একুশে বইমেলা’র ইতিহাস
শিল্প ও সাহিত্য

একনজরে ‘অমর একুশে বইমেলা’র ইতিহাস

হাসনাত শাহীন : আর কিছুক্ষণ পরেই শুরু হচ্ছে বাঙালির প্রাণের মেলা, জ্ঞানের মেলা ‘অমর একুশে বইমেলা’। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে প্রায় দেড় মাস পিছিয়ে আজ বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) বিকেল তিনটায় উদ্বোধন হতে যাচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় সাংস্কৃতিক এই আয়োজন।

বিগত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও এই মেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে, সরাসরি উপস্থিত থেকে নয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা ১৩বারের মতো এবারের বইমেলার উদ্বোধন করবেন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে। যা, বইমেলার ইতিহাসের এক অনন্য রেকর্ড।

‘অমর একুশে বইমেলা’- আমাদের প্রানের মেলা। যা সর্বসাধারণের কাছে একুশে বইমেলা নামেই পরিচিত। স্বাধীন বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী মেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম এই মেলার ইতিহাস স্বাধীন বাংলাদেশের মতোই প্রাচীন। যে মেলা বইপ্রেমী আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার প্রাণে দোলা দেয়। ভিড় ঠেলে প্রয়োজনীয় বইটি হাতে পাওয়ার পর আনন্দে চিক চিক করে ওঠে মুখ। এসবই আমাদের কাছে খুব চেনা এবং জানা একটি বিষয়। কিন্তু আমরা অনেকেই এই মেলার ইতিহাস জানি না। চলুন, জেনে নেই অমর একুশে বইমেলা কেন এবং কিভাবে শুরু হয়েছিলো তার ইতিহাস।

ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমির আয়োজনে মহান ভাষা আন্দোলনের বীর শহীদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রতিবছর ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি জুড়ে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিলো ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’; হ্যা গ্রন্থমেলাই বলছি। কেননা, এবারের বইমেলার আগে অর্থ্যাৎ ২০২০ সালের বইমেলা পর্যন্ত সার্বজনিন বাঙালির অন্যতম প্রধান এই সাংস্কৃতিক আয়োজনটির দাপ্তরিক বা অফিসিয়াল নাম লেখা হতো ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’। এবারই প্রথম এই মেলার দাপ্তরিক নাম লেখা হচ্ছে ‘অমর একুশে বইমেলা’।

একুশে বইমেলা- শুধু বইয়ের মেলা নয়, এ মেলা ভাষা আন্দোলনের বীর শহীদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানোরও এক উপলক্ষ। যে কারণে, বাংলাদেশে হাজারো মেলার মাঝে প্রায় চার দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলা একাডেমির আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই বইমেলার গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। দীর্ঘ সময় ধরে আমাদের সাহিত্য ও বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ ঘটছে মূলত এ মেলাকে কেন্দ্র করে। বাঙালীর ভাষা, সংস্কৃতি বোধ ও ঐতিহ্য হলো অমর একুশে গ্রন্থমেলার ভিত্তি। লেখক, পাঠক এবং প্রকাশকদের কাছে অমর একুশে বইমেলা এক সেরা উৎসব। আর এ কারণেই আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সবারই মিলন মেলা এই গ্রন্থমেলা সকলের কাছে পরিচিত একুশে বইমেলা নামে। এদেশের সকল শ্রেনীর পাঠক এই ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’র জন্য সারা বছর অপেক্ষা করে থাকে।

১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি শ্রী চিত্তরঞ্জন সাহা বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউসের সামনের বটতলায় এক টুকরো চটের ওপর কলকাতা থেকে আনা ৩২টি বই সাজিয়ে বইমেলার শুরু করেন। এই ৩২টি বই ছিল চিত্তরঞ্জন সাহা প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন বাংলা সাহিত্য পরিষদ (বর্তমানে মুক্তধারা প্রকাশনী) থেকে প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে অবস্থানকারী বাংলাদেশী শরণার্থী লেখকদের লেখা বই। ১৯৭৩ সালে বাংলা একাডেমী মহান একুশে মেলা উপলক্ষে ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিশেষ ছাড়ে বা হ্রাসকৃত মূল্যে একাডেমি প্রকাশিত বই বিক্রির ব্যবস্থা করে। এর পাশাপাশি মুক্তধারা, স্টান্ডার্ড পাবলিশার্স এবং এদের দেখাদেখি আরও অনেকে বাংলা একাডেমীর মাঠে নিজেদের বই বিক্রির ব্যবস্থা করে।

১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমি ১৪ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সাহিত্য সম্মেলনের আয়োজন করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। এ উপলক্ষে বাংলা একাডেমি তার নিজস্ব প্রকাশিত বই প্রদর্শন ও ম্যুরাল প্রদর্শনীর আয়োজন করে। বই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন প্রফেসর আবু মহাম্মেদ হবীবুল্লাহ। ঐ গণজমায়েতকে সামনে রেখে ঢাকার বিভিন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান একাডেমির পূর্বদিকের দেয়াল বরাবর নিজেদের পছন্দমতো জায়গায় যে যার মতো কিছু স্টল নির্মাণ করে বই বিক্রির ব্যবস্থা করে। এতে বাংলা একাডেমি তার প্রাঙ্গণের খোলা জায়গা ব্যবহার করতে দিয়ে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

১৯৭৫ সালে বাংলা একাডেমি মাঠের কিছু জায়গা চুনের দাগ দিয়ে প্রকাশকদের জন্য নির্দিষ্ট করে দেয়। সেই চিহ্নিত স্থানে প্রকাশকরা যে যার মতো স্টল তৈরি করে বই বিক্রির ব্যবস্থা করে। এ অবস্থা চলতে থাকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত। এ সময় পর্যন্ত এই আয়োজনের কোন স্বীকৃতি ছিল না। কোন নামও দেয়া হয়নি। ১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমির তৎকালীন মহাপরিচালক আশরাফ সিদ্দিকী একাডেমিকে মেলার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত করেন। ১৯৭৯ সালে মেলার সঙ্গে যুক্ত হয় বাংলাদেশ পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশক সমিতি। এই সংস্থাটিও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন চিত্তরঞ্জন সাহা। ঐ সময় অমর একুশে উপলক্ষে ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বইমেলা অনুষ্ঠিত হতো। মেলার তখন নাম ছিল ‘একুশে গ্রন্থমেলা’।

১৯৮১ সালের একুশে বইমেলার মেয়াদ কমিয়ে ২১ দিনের পরিবর্তে ১৪ দিন করা হয়। কিন্তু প্রকাশকদের দাবির মুখে ১৯৮২ সালে মেলার মেয়াদ পুনরায় বৃদ্ধি করে করা হয় ২১ দিন। এ মেলার উদ্যোক্তা ছিল বাংলা একাডেমি। সহযোগিতায় ছিল জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র এবং বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি। ১৯৮৩ সালে মেলার সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রকে বাদ দেয়া হয়। পরের বছর অর্থাৎ ১৯৮৪ সাল থেকে বাংলা একাডেমির সরাসরি তত্বাবধানে এই মেলা মেলার নতুন নামকরণ করা হয় ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’। এবং, লেখক-প্রকাশক ও পাঠকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ বছর থেকেই শুরু হয় ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম ২১ দিনের পরিবর্তে পুরো ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। যা ২০১৪ সাল পর্যন্ত নিয়মিতভাবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিলো।

২০১৪ সালে থেকে নতুন রূপ পায় ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’। লেখক-প্রকাশকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে এ বছর থেকে বাংলা একাডেমির বৃত্ত ভেঙে অমর একুশে গ্রন্থমেলাকে সম্প্রসারিত করা হয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। ফলে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’র ‘অমর একুশে চেতনা’র সঙ্গে যুক্ত হয় ‘মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনা’। তখন থেকেই পুরো ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে অমর একুশে স্মৃতিধন্য প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি ও স্বাধীনতার স্মৃতিধন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে এই মেলা নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

সেই ধারাবাহিকতায়, গত বছর পর্যন্ত দাপ্তরিকভাবে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ নামে একুশে স্মৃতিধন্য প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি ও স্বাধীনতার স্মৃতিধন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিলো। এবারও এই ঐতিহাসিক দুই প্রাঙ্গণেই বইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে, তবে ভাষা চেতনার মাসে নয়; করোনা মহামারির কারণে দেড়মাস পিছিয়ে বাঙালির মুক্তিচেতনায় জাগ্রত হবার মাস ‘মার্চ’ মাসে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যা বইমেলার ইতিহাসে প্রথম। এছাড়াও এবারই প্রথম বইমেলার দাপ্তরিক নাম করা হয়েছে ‘অমর একুশে বইমেলা’। প্রথমবারের মতো এই ‘অমর একুশে বইমেলা’র উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যার মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালের ধারাবাহিকতায় এবার টানা ১৩ বারের মতো বাঙালির প্রাণের বইমেলার উদ্বোধন করবেন। যা, বইমেলার ইতিহাসের অন্যতম এক রেকর্ড। উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এর আগেও ১৯৯৭ সালে থেকে ২০০১ (সম্ভবত) পর্যন্ত টানা বইমেলার উদ্বোধন করেছিলেন।

সান নিউজ/বিএস

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

জনকল্যাণমুখী কার্যক্রমে দেশ আজ এগিয়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, প্রধানম...

আবেদনময়ী লুকে নুসরাত

বিনোদন ডেস্ক: ঢাকাই চলচ্চিত্র চিত্রনায়িকা নুসরাত...

খাগড়াছড়িতে শাশুড়ি হত্যায় জামাতা আটক

আবু রাসেল সুমন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি : খাগড়াছড়িতে জুয়া খেলতে...

৬ তারিখে বাজেট প্রস্তাবন

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্তব্য করেছেন, ৬...

গণতন্ত্র শেখ হাসিনার হাতেই সুরক্ষিত

নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণতন্ত্রকামী মান...

বাক-বিতণ্ডার জেরে নিহত ১

উপজেলা প্রতিনিধি: সাভার জেলার আশু...

হিমাগারে মজুত ১ লাখ ডিম

জেলা প্রতিনিধি: বগুড়া সদরে &lsquo...

নিখোঁজ ছাত্রের লাশ উদ্ধার

জেলা প্রতিনিধি : চাঁদপুরে নিখোঁজ হওয়ার পর ডাকাতিয়া নদী থেকে...

কিরিগিজস্তানে শিক্ষার্থীদের বাইরে যাওয়া নিষেধ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: কিরগিজস্তানের রাজধানী বিশকেকে বাংলাদেশি,...

ঘূর্ণিঝড়ের সবশেষ তথ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক: সারাদেশে চলমান...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা