নিজস্ব প্রতিবেদক: অধিকাংশ সরকারি চাকরিতে আবেদনের ক্ষেত্রে ছবি, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদসহ বিভিন্ন কাগজপত্র প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তার মাধ্যমে সত্যায়ন করতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় চাকরিপ্রার্থীদের।
বর্তমানে সহজেই যে কারো তথ্য যাচাই-বাছাই করা যায় বলে সত্যায়ন প্রক্রিয়ার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন চাকরিপ্রার্থীরা। সেজন্য এই প্রক্রিয়া বাদ দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার।
এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা, অষ্টম গ্রেড থেকে তদূর্ধ্ব, বিশেষ ক্ষেত্রে সংসদ সদস্য, মেয়র বা স্থানীয় সরকারের চেয়ারম্যান বা ভাইস চেয়ারম্যান, সরকারি অধ্যক্ষ, গণমাধ্যমের সম্পাদকসহ কিছু গণ্যমান্য ব্যক্তিকে সত্যায়নের এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে।
তবে বর্তমানে এ প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিকসহ প্রায় সব বোর্ড বা বিশ্ববিদ্যালয়েরই নিজস্ব ওয়েবসাইটে উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীর নম্বরপত্রসহ হালনাগাদ তথ্য দেওয়া থাকে। নির্দিষ্ট ব্যক্তির রোল, রেজিস্ট্রেশন নম্বর ও পাসের সাল দিয়ে যে কেউ যে কারো শিক্ষাগত যোগ্যতা যাচাই করতে পারে।
এছাড়া জাতীয় পরিচয়পত্রে থাকা আইডি নম্বর দিয়েও সহজেই যেকোনো ব্যক্তিকে শনাক্ত করা যায়। একজন ব্যক্তিকে শনাক্ত করার এত আধুনিক উপায় থাকা সত্ত্বেও গেজেটেড কর্মকর্তার মাধ্যমে সত্যায়িত করার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
২০১৫ সালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সচিব পর্যায়ের একটি বৈঠকে সরকারি চাকরির আবেদনে সত্যায়িত করা লাগবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়। ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আবেদনকারীরা অনলাইনে যোগ্যতার ভিত্তিতে আবেদন করবেন এবং পরীক্ষায় বসার অনুমতি পাবেন। কেবল যারা পাশ করবেন, তাদের পরবর্তীতে মৌখিক পরীক্ষার সময় মূল সনদ দেখাতে হবে।
তবে এ সিদ্ধান্ত এখনো পুরোপুরিভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। অধিকাংশ সরকারি চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায়, প্রথম শ্রেণির সরকারি গেজেটেড কর্মকর্তার মাধ্যমে নাগরিকত্ব/চারিত্রিক সনদ, অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা সনদের সত্যায়িত ফটোকপি চাওয়া হয়।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, সরকারি চাকরিতে আবেদনের ক্ষেত্রে সত্যায়নি প্রক্রিয়াটি বাদ দিয়ে দেওয়া হবে। কারণ বর্তমানে সত্যায়ন প্রক্রিয়ার বিকল্প আছে।
তিনি বলেন, আমরা ডিজিটালাইজেশনের যুগে প্রবেশ করেছি। তাই এখন আর আমরা আগের ঝামেলাকর সার্ভিসের মধ্যে থাকতে চাই না।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, এক্ষেত্রে কিছু গোপন কোড আমরা দিতে পারি। তাহলে সেখানে এগুলো থাকবে না। এছাড়া যখন সে (চাকরিপ্রার্থী) কাগজপত্রের কপি জমা দেবে, এরপর ভেরিফিকেশন হবে। তখন তথ্য ভুল দিলে ধরা পড়বে। তবে অরিজিনাল কপিটাই আমরা রাখতে চাইব ভবিষ্যতে।
এদিকে, অনেকে সত্যায়িত করার ভুয়া সিল মোহর বানিয়ে জাল সই দিয়ে নিজের কাগজপত্র নিজেই সত্যায়িত করেন বলে জানা গেছে। এটি অপরাধ হলেও বিড়ম্বনা এড়াতেই তারা এই কাজ করেন।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীও বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ফেইক হওয়ার (সত্যায়ন প্রক্রিয়া) সম্ভাবনা থাকে। অনেকে দেখা যাচ্ছে, সিল বানিয়ে নিজেরাই কাগজপত্র সত্যায়িত করছে। বিষয়টির সমাধান ডিজিটালাইজেশনের মধ্যেই আছে। আমরা এগুলো নিয়ে কাজ করছি।
সান নিউজ/এফএইচপি