আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইরানের দক্ষিণপূর্বাঞ্চলীয় কেরমান শহরে এক মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ১০৩ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও শতাধিক মানুষ।
আরও পড়ুন: জাপানে ভূমিকম্পে নিহত বেড়ে ৬২
বুধবার (৪ জানুয়ারি) দেশটির ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) অভিজাত শাখা কুদস ফোর্সের সাবেক প্রধান কাশেম সোলাইমানির চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে জোড়া বিস্ফোরণের পর এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।
ইরানের সরকারি কর্মকর্তারা বলেন, কাশেম সোলাইমানির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে শত শত মানুষ তার সমাধিস্থলের দিকে যাওয়ার সময় জোড়া বিস্ফোরণ ঘটেছে।
দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনের খবরে বলা হয়, বিস্ফোরণে ১৭১ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। কেরমানের সাহেব আল-জামান মসজিদের কাছে সোলাইমানির কবর থেকে কয়েকশ মিটার দূরে এ বিস্ফোরণ ঘটে।
আরও পড়ুন: ভূমিকম্পে কাঁপল আফগানিস্তান
কেরমানের ডেপুটি গভর্নর বিস্ফোরণের এ ঘটনাকে সন্ত্রাসী হামলা বলে অভিহিত করে বলেছেন, সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিস্ফোরণের একাধিক ভিডিওতে বেশ কিছু মরদেহ রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা যায়।
ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন জানিয়েছে, প্রথম বিস্ফোরণের কয়েক মিনিটের মাথায় দ্বিতীয় বিস্ফোরণ ঘটেছে।
কেরমান প্রদেশের স্থানীয় এক কর্মকর্তা বলেন, সন্ত্রাসী হামলার কারণে বিস্ফোরণ ঘটেছে। ইরানের জরুরি পরিষেবা সংস্থার মুখপাত্র বাবাক ইয়েকতাপারাস্ত বলেন, বিস্ফোরণে ১০৩ জন নিহত ও ১৭১ জন আহত হয়েছেন। তবে আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় প্রাণহানি আরও বাড়তে পারে।
আরও পড়ুন: ভার্চ্যুয়াল গণধর্ষণের শিকার কিশোরী
দেশটির আধা-সরকারি সংবাদ মাধ্যম নুর নিউজ জানিয়েছে, সমাধিস্থলের দিকে যাওয়ার রাস্তায় বেশ কয়েকটি গ্যাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়েছে।
ইরানের বার্তা সংস্থা তাসনিম নিউজ এজেন্সি বলছে, জেনারেল কাশেম সোলাইমানির সমাধিস্থল থেকে ৭০০ মিটার দূরে প্রথম বিস্ফোরণ ঘটেছে। এরপর সমাধিস্থল থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার দূরে দ্বিতীয় বিস্ফোরণ ঘটে।
ভিডিও ফুটেজের সাথে তাসনিমের দেয়া তথ্যের মিল আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ বিস্ফোরণে কাশেম সোলাইমানির সমাধিস্থল ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।
আরও পড়ুন: গাজায় নিহত ২২ হাজার ছুঁই ছুঁই
এদিকে সামাজিক মাধ্যমে ইসরায়েল সংশ্লিষ্ট কিছু অ্যাকাউন্ট থেকে জেনারেল সোলাইমানির স্মরণসভায় বিস্ফোরণে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে। তবে তাসনিম নিউজ এজেন্সি এ দাবিকে ভিত্তিহীন বলে অভিহিত করেছে।
প্রসঙ্গত, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির পর সোলাইমানিকে সবচেয়ে শক্তিশালী হিসেবে মনে করা হতো। ২০২০ সালের ৩ জানুয়ারি ইরাকের রাজধানী বাগদাদের বিমানবন্দরের কাছে মার্কিন ড্রোন হামলায় কুদস ফোর্সের প্রধান সোলাইমানি নিহত হন।
জেনারেল সোলাইমানি ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর অভিজাত শাখা কুদস ফোর্সের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন। দেশের বাইরে- বিশেষ করে ইরাক, লেবানন ও সিরিয়ায় ইরানের সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন ধরনের অভিযান তার নেতৃত্বে পরিচালিত হতো।
আরও পড়ুন: ২১ ভূমিকম্পে জাপানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি
তাকে গুপ্তহত্যার ঘটনায় ঐ অঞ্চলে ইরানের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনা ব্যাপক আকার ধারণ করে। যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায় ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র। সে সময় সিরিয়া ও ইরাকে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে ঐ অঞ্চলের ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলো হামলা চালায়।
বাগদাদে ড্রোন হামলার পরপরই তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, কাশেম সোলাইমানিকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। সেই সাথে ইরানের শীর্ষ এ জেনারেলকে বিশ্বের ১ নাম্বার সন্ত্রাসী হিসেবে অভিহিত করেন তিনি। সূত্র: মেহের নিউজ, তাসনিম, বিবিসি, আল জাজিরা।
সান নিউজ/এনজে