আদিল সরকার, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়: আবারও নবীন শিক্ষার্থীকে নগ্ন করে রাতভর নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের একাধিক কর্মীর বিরুদ্ধে। নির্যাতনের একপর্যায়ে উলঙ্গ করে বোতলের সঙ্গে সঙ্গম করানো হয় ভুক্তভোগীকে।
আরও পড়ুন: ২ সিটিতে ভোটগ্রহণ শুরু
এদিকে র্যাগিংয়ের স্বীকার হয়ে পরদিন হল ছেড়ে মেসে চলে যান ভুক্তভোগী ওই ছাত্র ৷ পরে বিষয়টি নিয়ে বিচারের দাবি জানিয়ে কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন তিনি।
জানা যায়, বাবার সাথে কথা বলতে রাতে (১৮ জুন) নিজ হলের (লালন শাহ) ছাঁদে উঠেন উন্নয়ন অধ্যায়ন বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ইয়াস রোহান। এসময় তাকে ছাঁদে দেখে পরিচয় জানতে চান চারুকলা বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের আফিফ হাসান, তন্ময় বিশ্বাসসহ আরো কয়েকজন। জুনিয়র পরিচয় পেয়ে হলের ১৩৬ নং রুমে (গণরুম) তাকে দেখা করতে বলেন তারা। পরে ওই ছাত্রকে ব্যবহার শিখানোর কথা বলে ঘন্টাখানেক র্যাগিং করেন৷ একপর্যায়ে তার বান্ধবী আছে কিনা জানতে চায় তারা। এসময় সম্মতি প্রকাশ করলে একটি বোতল কেটে তার সাথে সহবাস করতে বলেন।
এসময় তারা বলেন, বোতলটা তোর বান্ধবী, ওর সাথে তুই সেক্স কর এসময় রোহান তা করতে মানা করলে তাকে জোর করে উলঙ্গ করায় অভিযুক্তরা।
আরও পড়ুন: হন্ডুরাসে কারাগারে সহিংসতা, নিহত ৪১
পরে সেই বোতলের সাথে সঙ্গম করতে বাধ্য করা হয় ৷ শেষে হাতে একটি লোহার পাইপ দিয়ে এক সিনিয়রকে মারতে বলেন অভিযুক্তরা। এসময় বিষয়টিতে রাজি না হয়ে রুম থেকে দৌড়ে পালিয়ে যায় রোহান।
পরে বিভাগের বড় ভাই ও একই হল শাখা ছাত্রলীগের কর্মী ফাহিম ফয়সালকে বিষয়টি জানায় সে। এসময় ফাহিম তাকে নিয়ে হল গেটে গেলে অভিযুক্ত আফিফ ও তন্ময় নির্যাতনের বিষয়টি অস্বীকার করে তাকে মারধর করেন। এসময় সে দৌড়ে জিয়া হলের সামনে আসলে তাকে আবারো বেধড়ক মারধর করে তারা ৷ এসময় তাকে ভাঙ্গা চশমা ও ছেড়া জামা পরিহিত অবস্থায় উদ্ধার করে তার বন্ধুরা।
পরে রাত ৩টার দিকে বিষয়টি মিমাংসা করতে ভুক্তভোগী ও অভিযুক্তদের হলের তিন তলায় ডাকেন ছাত্রলীগ কর্মী ফাহিম। এসময় কথা বলার একপর্যায়ে অভিযুক্ত আফিফ আবারো তার উপর চড়াও হয়৷ পরে দৌড়ে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের রুমে ঢুকে পড়েন ভুক্তভোগী। এসময় সম্পাদকের রুমে ঢুকায় তাকে আবারো জেরা করতে থাকে কর্মীরা ৷ একপর্যায়ে সম্পাদকের সামনেই আবারো তাকে মারধর করেন অভিযুক্তরা। এসময় প্রাথমিকভাবে বিষয়টি মীমাংসা করে দেন সম্পাদক। অভিযুক্ত আফিফ ও তন্ময় সম্পাদকের অনুসারী বলে জানা গেছে ৷
আরও পড়ুন: খাদ্যের অভাব হবে না
এদিকে মারধর ও নির্যাতনের বিষয়টি অস্বীকার করে অভিযুক্ত তন্ময় বিশ্বাস সাংবাদিকদের বলেন, তার সাথে একটু মনোমালিন্য হয়েছিলো। তবে নাসিম আহমেদ জয় ভাই বিষয়টি মীমাংসা করে দিয়েছেন। তাকে কোন মারধর করা হয়নি। বিষয়টি জানতে আরেক অভিযুক্ত আফিফকে ফোন করলে সে কল রিসিভ করেন নি।
এদিকে নির্যাতনের পরদিন আতঙ্কে হল ছেড়ে ক্যাম্পাস পার্শবর্তী মেসে আশ্রয় নিয়েছেন ভুক্তভোগী ওই ছাত্র। পরে দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টা বরাবর নির্যাতনের ঘটনা বর্ণনা করে বিচার চেয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। সেখানে শারীরিক নির্যাতনের সাথে যৌন হয়রানির কথাও উল্লেখ করেন তিনি। তবে অভিযোগ দেয়ার আড়াই ঘন্টা পরেই ভুক্তভোগী ওই ছাত্র মৌখিকভাবে অভিযোগটি উইথড্র করে নেন বলে জানান শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। কি কারণে উইথড্র করেছের সে বিষয়ে জানতে তাকে একাধিকবার ফোন করলেও যোগাযোগ করা যায় নি ৷ তবে বিকেলে ছাত্রলীগের কার্যালয়ের সামনে ভুক্তভোগী ওই ছাত্রের সাথে কথা বলতে দেখা যায় সাধারণ সম্পাদককে।
বিষয়টি নিয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয় বলেন, সেদিন রাতে তাদের ঝামেলার বিষয়টি শুনে মীমাংসা করে দিয়েছিলাম। আজকে আবার শুনলাম অভিযোগপত্র দিয়েছে। পরে বিকেলে ওর সাথে কথা বলে জানকে পারি সে অভিযোগটি উইথড্র করে নিয়েছে।
তাকে করা যৌন হয়রানির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই রুমে সেদিন কি হয়েছিলো তা আমার জানা নেই। শুধু হল গেটে ধাক্কাধাক্কি হয়েছিল এতটুকুই জানি।
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরিন সময়ের আলোকে বলেন, অভিযোগ পত্রটি আমি হাতে পেয়েছি। বিষয়টি আমলেও নেয়া হয়েছে। আমরা আগামীকাল তাদেরকে অবশ্যই ডেকে কথা বলবো।
এদিকে এর আগেও দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে এক নবীন ছাত্রীকে রাতভর নির্যাতন ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণের অভিযোগ উঠে শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরাসহ আর ৪ কর্মীর বিরুদ্ধে। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়৷ একই সাথে তাদের সকলকে ছাত্রলীগ থেকে বহিস্কার করেন কেন্দ্রীয় কমিটি৷
আগামী ১৯ জুলাইয়ের মধ্যে তাদের চুড়ান্ত বিচারিক কার্যক্রম শেষ করতে বিশ্ববিদ্যালয়কে নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত। আলোচিত সেই ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনার বিচার শেষ না হতেই আবারো উলঙ্গ করে ছাত্র নির্যাতনের ঘটনায় ক্যাম্পাসে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে ৷ আতঙ্কে সময় কাটাচ্ছে নবীন শিক্ষার্থীরা ৷
সান নিউজ/এনকে