জাতীয়

জনকের জন্মদিন, শুরু হল মুজিববর্ষের যাত্রা

বিশেষ প্রতিনিধি:
১৭ মার্চ। আজ থেকে ঠিক একশো বছর আগে একটি নক্ষত্রের জন্ম হয়েছিল মধুমতি নদীর তীরে। ক্ষণজন্মা সেই নক্ষত্রটিই স্বাধীন বাংলাদেশের স্রষ্টা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের জন্মশত বার্ষিকীতে শ্রদ্ধায় অবনত জাতি। তাঁর এবারের জন্মদিন থেকে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত ঘোষণা করা হয়েছে ‘মুজিববর্ষ’। জাতীয়ভাবে গ্রহন করা হয় ব্যপক কর্মসূচির পরিকল্পপনা এবং প্রস্তুতি। কিন্তু শেষ মুহুর্তে এসে তার অনেক কিছুই স্থগিত করা হয় বৈশ্বিক দুযোর্গ করোনা ভাইরাসের কারণে।

মুজিব বর্ষের মূল অনুষ্ঠান ছিলো জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে ১৭ মার্চ। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে লক্ষাধিক মানুষের সেই অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার কথা ছিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদসহ অনেক বিদেশি অতিথির। কিন্তু লোকসমাগমের বিষয়টি মাথায় নিয়ে করোনাভাইরাসের কারণে তা বাতিলসহ অনেক আয়োজন স্থগিত করা হয়। পরিবর্তিত মুজিববর্ষের আয়োজনগুলো মুলত গণমাধ্যমকেন্দ্রীক।

আর রাত আটটায় ইতিহাসের মহানায়কের জন্মক্ষণে একযোগে সারাদেশে ফোঁটানো হবে আতশবাজি। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে মানুষের আবেগ এবার অন্যরকম এক শিহরণে দুললেও অনেক আগে থেকেই দিনটিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘শিশু দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। ১৯৯৬ সালে সালে ২১ বছর পর আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর ১৯৯৭ সাল থেকে ১৭ মার্চ জাতীয় পর্যায়ে শিশু দিবস পালন শুরু হয়। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এলে ‘জাতীয় শিশু দিবস’ পালনের রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতা বন্ধ করে দেয়া হয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ আবার সরকার গঠন করলে জাতির পিতা জন্মদিনটি জাতীয়ভাবে পালিত হয়ে আসছে শিশু দিবস হিসেবে। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহর লাল নেহরুর জন্মদিনটি শিশু দিবস হিসেবে পালিত হয় দল-মত নির্বিশেষে। কিন্তু এদেশে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতির জন্মদিনকে অনন্য মর্যাদা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করা হয় কেবল রাজনৈতিক দৈন্যতার কারণেই।

অথচ ১৯২০ সালের এই দিনটিতেই দুঃখীনী বাংলার হাজার বছরের শোষিত মানুষের মুক্তির বার্তা নিয়ে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া নামের গ্রামটিকে দেবদূত হয়ে এসেছিল এক শিশু। তারপর সময়ের বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে হয়ে উঠলেন বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক নেতা, যিনি পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব। তিনি বাংলার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত ছুটে বেড়িয়েছেন পরাধীনতার শিকল ভাঙার মন্ত্রে। সাধারণের মধ্য থেকে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক নেতৃত্বের উদ্ভব।

গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র থাকাকালেই তৎকালীন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যেুক্ত থাকার কারণে তিনি জীবনে প্রথম গ্রেফতার হন। ১৯৪২ সালে তিনি ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে উচ্চ শিক্ষার্থে ভর্তি হন কলকাতার বিখ্যাত ইসলামিয়া কলেজে । জড়িয়ে পড়েন সরাসরি রাজনীতিতে। বিখ্যাত এই কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন শেখ মুজিব। এ সময়ে তিনি হোসেন সোহরাওয়ার্দী, আবুল হাশিমের মতো নেতাদের সান্নিধ্যে আসেন এবং ছাত্র-যুবনেতা হিসেবে রাজনীতির অঙ্গনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।

ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের পরপরই ঢাকায় ফিরে নতুন রাজনৈতিক চেতনায় ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ছাত্রলীগ।। ৪৮ থেকে ৫২-এর মহান ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৮-এর আইয়ুব খানের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ১৯৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন এবং পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ প্রধান হিসেবে ’৬৬-এর ঐতিহাসিক ৬ দফাভিত্তিক স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালির কাছে বঙ্গবন্ধু ততোদিনে হয়ে উঠেছেন অবিসংবাদিত নেতা। তিনি বুঝতে পারছিলেন- স্বাধীন বাংলাদেশ ছাড়া বাঙালীর আর্থ-সামাজিক মুক্তির বিকল্প কোন পন্থা নেই।

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় আটক হলেন তিনি। ৫ জানুয়ারি, ১৯৬৯ গঠিত কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ উত্থাপিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার ও বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ গণআন্দোলনে রূপ নেয়। ফলস্বরূপ বঙ্গবন্ধুর মুক্তি এবং ২৩ ফেব্রুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে প্রায় দশ লাখ ছাত্র-জনতা তাদের মুক্তির দূত শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করে।

৫ ডিসেম্বর ১৯৬৯ শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকীর আলোচনা সভাতেই পূর্ব বাংলাকে ‘বাংলাদেশ’ হিসেবে নামকরণ করেন বঙ্গবন্ধু । ’৭০-এর নির্বাচনে বাঙালি বঙ্গবন্ধুর ৬ দফার পক্ষে জানায় অকুণ্ঠ সমর্থন। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালির এ নির্বাচনী বিজয়কে মেনে নেয়নি। শুরু হল বহুমুখী ষড়যন্ত্র। অতপর ৭ মার্চের ভাষণে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইঙ্গিত এবং ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা আর সশস্ত্র সংগ্রামের নির্দেশ। সাত কোটি বাঙালি তখন মন্ত্রমুগ্ধ। শুরু হল মরণপণ যুদ্ধ। অতপর হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ অর্জন ‘স্বাধীনতা’।

যুদ্ধবিধ্বস্ত একটা দেশ পুনর্গঠনে মাত্র সাড়ে তিন বছরের রাষ্ট্র পরিচালনার সময়টিতে সাত কোটি মানুষের খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থান, এক কোটি শরণার্থীর পুনর্বাসন, পরিপূর্ণ বিপর্যস্ত যোগাযোগ ও উৎপাদন ইত্যাদি চরম সঙ্কটের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বঙ্গবন্ধু দূরদর্শী পরিকল্পনা ও নিরলস পরিশ্রম সফলতার দ্বারে পৌছাতে থাকে। জনগণের সাহস ও শক্তিকে কাজে লাগিয়ে চারটি বাজেট প্রণয়নের মাধ্যমে টেকসই দীর্ঘমেয়াদী সমৃদ্ধ অর্থনৈতিক ভিত নির্মাণের লক্ষে এগিয়ে যেতে থাকে যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বাধীন বাংলাদেশ।

বঙ্গবন্ধুর অসাধারণ দূরদর্শীতায় দারিদ্র্য দূরীকরণকে মূল লক্ষ্য ধরে ১৯৭৩-১৯৭৮ সালের প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়। ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও প্রতি বৈরী মনোভাব নয়’ ছিল বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্রনীতির মৌলিক বার্তা। অতি অল্প সময়ের মধ্যে ‘বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী চুক্তি’, ‘কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন’ আর তৎকালীন মোট জনগোষ্ঠির প্রায় এক তৃতীয়াংশ বেকার সমস্যার সমাধানে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে মনোনিবেশ করেন অনন্য সাধারন এই রাষ্ট্রনায়ক। শোষণ ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক-রাষ্ট্রীয়-ধর্মীয় নিরাপত্তা বিধান, রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুণ্ঠন-মজুদদারী-মুনাফাখোরী-দুর্বৃত্তদের হাত থেকে সাধারন মানুষের জীবনমান সুরক্ষা আর উন্নয়নের ধারা এগিয়ে নিতেই ১৯৭৪ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি প্রণীত হয় বিশেষ ক্ষমতা আইন। কিন্তু দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে স্বাধীনতাবিরোধীদের সহযোগিতায় পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট নিভিয়ে দেয়া হয় সেই ক্ষণজন্মা নক্ষত্রটিকে।

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ভোলায় ছাত্রলীগের বৃক্ষরোপন কর্মসূচি পালিত 

ভোলা প্রতিনিধি: তীব্র তাপদাহ থেকে...

আড়িয়ল ইউপিতে উপ-নির্বাচন

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি:

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি দিবস

সান নিউজ ডেস্ক: আজকের ঘটনা কাল অতীত। প্রত্যেকটি অতীত সময়ের স...

খাগড়াছড়িতে গৃহকর্মীকে জিম্মির অভিযোগ 

আবু রাসেল সুমন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধিঃ

কার্বণ মিল ও সীসা কারখানা বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন

কামরুল সিকদার, বোয়ালমারী প্রতিনিধি:

অনির্দিষ্টকালের জন্য চুয়েট বন্ধ ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাস চাপায় চুয়েট...

রাজধানীতে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর শাঁখা...

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাড়ছে না ছুটি

নিজস্ব প্রতিবেদক : আবহাওয়া অধিদপ্...

আবারও কমলো স্বর্ণের দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক : চলতি মাসে তিন...

রংপুরে বৃষ্টির জন্য ইস্তিসকার নামাজ আদায়

রংপুর প্রতিনিধি : সারাদেশের মতো র...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা