ছবি: সংগৃহীত
জাতীয়

মাকে বিয়ে দিয়ে মেয়ের আবেগঘন স্ট্যাটাস

সান নিউজ ডেস্ক: মায়ের বিয়ে দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস লিজা। ফেসবুক পোস্টে এত বেশি ইতিবাচক প্রচার দেখে নিজেরাই অবাক হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) দুপুর পর্যন্ত সাত হাজারের বেশি মানুষ বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। এছাড়া এক হাজারের বেশি শেয়ার হয়েছে।

আরও পড়ুন: আমরা ইভিএমের নির্বাচন করব

জানা গেছে, নাদিরা বেগমের বয়স ৫৩। পাঁচ বছর আগে স্বামী মো. রুহুল আমিন আত্মহত্যা করেন। এর পর থেকে দুই মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস ও মারিয়াম জ্বীমকে নিয়ে কোনোরকমে সংসার চলছিল। এর মধ্যে বড় মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌসের বিয়ে দেন তিনি। বড় মেয়ে জান্নাতুল নিরাপত্তার কথা ভেবে ছোট বোন মারিয়ামকে নিজের কাছে নিয়ে আসেন। এতে একা হয়ে পড়েন মা নাদিরা।

এর পর থেকেই দুই মেয়ে মাকে নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। অনেক ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেন, মাকে বিয়ে দেবেন। এতে মা একজন সঙ্গী পাবেন এবং নতুন সংসারে বাকি জীবনটা ব্যস্ততায় কাটাতে পারবেন। ব্যস, যেই ভাবনা, সেই কাজ। মাত্র দুই মাসের চেষ্টায় গত ৩০ সেপ্টেম্বর ৬২ বছর বয়সী মো. হান্নান খানের সঙ্গে নাদিরা বেগমের বিয়ে দিয়েছেন মেয়েরা। বিয়েতে সার্বিক সহযোগিতা করেছেন জান্নাতুল ফেরদৌসের স্বামী মাহমুদুল ইসলাম। কেবল তা–ই নয়, তিনি শাশুড়ির বিয়েতে উকিল বাবার ভূমিকায় ছিলেন।

আরও পড়ুন: ফের বেড়েছে মৃত্যু ও সংক্রমণ

ফেসবুক স্ট্যাটাসে জান্নাতুল ফেরদৌস লিজা লেখেন, আজ আমাদের মায়ের বিয়ে। আমরা ২ বোন, আমার হাজবেন্ড এবং পরিবারের কয়েকজন সদস্য মিলে হাসিমুখে আমার মায়ের বিয়ে দিয়েছি। কিছুদিন আগে আমার বিয়ের ১ বছর পূর্ণ হলো। আমার মা একা হাতে যতটুকু সম্ভব ছিল ততটুকু করেই আমাকে নতুন সংসারে পাঠিয়ে নিজে সম্পূর্ণ একা হয়ে পরেছিলেন কারণ তার স্বামীও নেই, ছেলেও নেই, বড় ভাই নেই, এবং বাবাও নেই। মোটকথা, তাকে নিরাপত্তা দেয়ার অথবা একান্তে কিছু কষ্ট ভাগ করে নেয়ার তেমন কোনো মানুষ ছিল না। তাই আজ আমরা আমার মাকে নতুন একটা সংসার দিলাম।

বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে কথাটা শুনতে খুবই খারাপ শোনায় তাইনা? বয়স হয়ে গেছে, এই বয়সে বিয়ে এটা কি ধরনের কথা, মহিলাটা মনে হয় ভালো না, স্বামীকে মনে হয় ভালোইবাসতো না তাই বিয়ে করলো ইত্যাদি ইত্যাদি! তাই আমাদের মনে হয়েছে একা থেকে লোকের আজেবাজে কথা শুনে কষ্ট পাওয়ার চেয়ে বিয়ের মত পবিত্র ব্যাপার আর কিছু হতেই পারেনা। কারন আমি দেখেছি আমার বিধবা অসহায় মাকে কত বিশ্রিভাবে অপদস্থ করেছে অনেকেই!!! কিছুক্ষেত্রে প্রতিবাদও করতে পারিনি! হয়তো অলরেডি আমার মা এবং আমাদের নিয়ে মনে মনে খারাপ মন্তব্য করা শুরু করে দিয়েছেন। সত্যি বলছি, তাতে আমার মোটেও দুঃখ, আফসোস বা হতাশা বোধ হচ্ছে না। কোনোদিন হবেও না ইনশাআল্লাহ।

আরও পড়ুন: বন্দুক হামলায় মেয়রসহ নিহত ১৮

আমার আব্বু মারা যাওয়ার পর আম্মুর সহায় সম্বল বলতে ছিলাম আমরা ২টা বোন মাত্র। আর কিচ্ছু না। না ছিল অর্থনৈতিক জোর, না মানসিক জোর!

আম্মু প্রায়ই হাসতে হাসতে বলতো, "আমার তো ছেলে নাই। মেয়ে ২টা বিয়ে দিয়ে আমি বৃদ্ধাশ্রমে চলে যাব। ওখানে আরো যত আমার মত একা মায়েরা থাকবে তাদের সাথে আমি থাকবো, গল্প করবো" আমি রাগে কটমট করে বলতাম, "জ্বীমকে বিয়ে দিয়ে পাঠিয়ে দিব, আর তুমি আমার কাছে থাকবা যতদিন বাঁচবা। আমিই তোমার বৃদ্ধাশ্রম!" আম্মু হাসতো! হয়তো সে মনে মনে জানতো এটা সম্ভব হবেনা! আমি আমার কথা রাখতে পারিনাই। তার পাশে থাকার চেষ্টা করলেও কাছে রাখাটা হয়ে উঠেনাই বিভিন্ন কারণে! এবং আমার মায়ের ছোট মেয়েটাকেও আমার কোলের মধ্যেই রেখে দিছি। কারণ আম্মুকে ছাড়া থাকতে পারলেও আমার ছোটবোনটাকে ছেড়ে থাকা এই মুহুর্তে আমার পক্ষে অসম্ভব!

আরও পড়ুন: ফের উ.কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা

আমার সাহসী মা একা থাকার সিদ্ধান্ত নিলেন হাসিমুখেই! একবারো কোনো বিষয়ে না বলেনি! আমার আম্মু ভীষণ গল্পপ্রিয় মানুষ। সে আমার সাথে আড্ডা দিতে ভালবাসে, কথা বলতে ভালবাসে, রাজ্যের ঘটনা আমাকে না বলতে পারলে তার ভাল্লাগে না। যেহেতু আমিও প্রচুর টকেটিভ তাই আমাদের আড্ডা জমে ভালো। কিন্তু একটা সময় আসলো যখন আমার আর গল্প করার সময় নাই। খেয়েছো কিনা খোঁজ নিতেও কয়েকঘন্টা দেরি হয়ে যাচ্ছে। নিজের সংসার, পড়ালেখা, বিজনেস, টিউশনি নিয়ে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছি আমি। দিনদিন আমার মা আরো একা হয়ে গেলো! সব বুঝেও আমি একপ্রকার নিরুপায় দিন পার করেছি। একবার ব্যস্ততা বেড়ে গেলে বৃদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত আর সে ব্যস্ততা কমেনা! এদিকে আমার মায়ের অবসর সময় বাড়ার বয়স। একা একটা মানুষ কতদিন এভাবে সুস্থ থাকবে! আত্মীয় স্বজন, প্রতিবেশী, মেয়ে সবারই একটা আলাদা সংসার আছে। কেউই তাকে সার্বক্ষনিক যত্ন দিতে পারবেনা যেটা এই বয়সে এসে ভীষণ প্রয়োজন! আমি, রনি এবং জ্বীম এ ব্যাপারে প্রচুর ভেবেছি।

একা বেঁচে থাকাটা একপ্রকার শাস্তি। আর এমন শাস্তি পাওয়ার মত কোনো অন্যায় তো সে করেন নি! তাহলে কেনো শেষ সময়টা সে একা থাকবে? কেনো তার পাশে কথা বলার একটা মানুষ থাকবে না? তার স্বামী মারা গেছেন বলে? তার প্রচুর অর্থ নেই বলে? তার বয়স হয়েছে বলে? আমাদের এই মুখপোড়া সমাজের জন্য? নাকি তার ছেলে সন্তান নাই এটাই তার সবচেয়ে বড় অপরাধ? আমরা হয়তো অর্থনৈতিক সাপোর্ট তাকে দিতে পেরেছি, কিন্তু মানুষের অভাব কখনও টাকা দিয়ে মেটানো সম্ভব না। আর্থিক সচ্ছলতা অবশ্যই জরুরি, এবং একসাথে বাস করার জন্য একটা নিজের মানুষও খুব জরুরি।

আরও পড়ুন: রাজধানীতে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত

আসলে, পাছে লোকে কিছু বলবে এই ভয়গুলা আমার সবসময়ই একটু কম ছিল! কারণ ভালো অথবা খারাপ কোনোটাতেই পাছে কথা বলা লোকের অভাব হয়না। এই দেশ হিপোক্রেটের দেশ! আমার ঘোর বিপদের সময়ও সাহায্য করার চেয়ে পাছে কথা বলার লোকের সংখ্যা দিগুণ দেখেছি আমি! এখনও আমার পাছে আমাকে নিয়ে কথা বন্ধ হয়নি। তাই এদের ভয়ে আমার কোনোকিছুই কখনও আটকে থাকেনি, থাকবেও না। নিন্ম মানসিকতার সমাজ এবং মানুষদের বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আজ আমরা আমার মায়ের বিয়ে দিয়েছি। এবং প্রাউডলি সেটা সবাইকে এই পোস্টের মাধ্যমে একযোগে জানিয়ে দিলাম। আলহামদুলিল্লাহ!

একজন পরিশ্রমী, সচ্চরিত্রের অধিকারী এবং দুঃখিনী এই ভদ্রমহিলাকে আমি সম্মান করি এবং ভালোবাসি। আমি সম্মান করি সেই ভদ্রলোককেও যিনি বিয়ে করার মাধ্যমে বাকী জীবনটা আমার আম্মুর পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আল্লাহ তাদের সহায় হোন। আমিন।

আরও পড়ুন: স্ত্রীকে তালাক দিলেন আল-আমিন

(বিশেষ দ্রষ্টব্য: পরিচিত অনেকের এ ব্যাপারে নেগেটিভ মন্তব্য থাকতে পারে। দয়া করে সেগুলো আপনাদের কাছেই রাখুন এবং নিজেদের মধ্যে গসিপ চালিয়ে যান। কারণ গসিপ করার জন্য আপনাদের নতুন টপিক দরকার। পুরোনোগুলো আর কতদিন ঘাটাঘাটি করবেন!!!

আমাদের অথবা আমার আম্মুর মাথা খাওয়ার চেষ্টা না করলে খুশি হবো। আর যদি খোঁচা মারতে ইচ্ছে করে তবে আমার সাথে যোগাযোগ করুন। আমার আম্মুকে বিব্রত না করতে অনুরোধ করা হলো। ধন্যবাদ।)

জান্নাতুল ফেরদৌস লিজার মূল পোস্টটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন

সান নিউজ/কেএমএল

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

আজ বিশ্ব বই ও কপিরাইট দিবস

সান নিউজ ডেস্ক: আজ ২৩ এপ্রিল, বিশ...

কাতারের সঙ্গে ১০ চুক্তি-সমঝোতা সই 

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ ও কাতা...

খাগড়াছড়িতে গৃহকর্মীকে জিম্মির অভিযোগ 

আবু রাসেল সুমন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধিঃ

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি দিবস

সান নিউজ ডেস্ক: আজকের ঘটনা কাল অতীত। প্রত্যেকটি অতীত সময়ের স...

চরাঞ্চলে তরমুজের বাম্পার ফলন

গাইবান্ধা প্রতিনিধি: গাইবান্ধার চ...

কার্বণ মিল ও সীসা কারখানা বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন

কামরুল সিকদার, বোয়ালমারী প্রতিনিধি:

কক্সবাজারে দুই জেলের লাশ উদ্ধার 

জেলা প্রতিনিধি: কক্সবাজার জেলার চ...

আড়িয়ল ইউপিতে উপ-নির্বাচন

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি:

খাগড়াছড়িতে গৃহকর্মীকে জিম্মির অভিযোগ 

আবু রাসেল সুমন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধিঃ

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা