নাফ নদীর ১০ হাজার জেলের জীবন দুর্বিষহ
জাতীয়
নিষেধের বেড়াজাল

নাফ নদীর ১০ হাজার জেলের জীবন দুর্বিষহ

রহমত উল্লাহ, টেকনাফ : টেকনাফের কালা মিয়া ( ৬৫)। শৈশব থেকে তার পেশা নাফ নদীতে মাছ ধরা। নাফ নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতেন তিনি। পঁয়ষট্টি বছর বয়সে মাছ শিকার করা ছাড়া কিছুই জানেন না নাফ নদীর জেলে কালা। এ পেশাকে পুঁজি করে তিন মেয়ে বিয়ে দেন জেলে কালা মিয়া।

আরও পড়ুন : সশরীরে একনেক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী

কালা মিয়ার বাড়ি টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ জালিয়া পাড়া নাফ নদীর পারে ত্রিপল মোড়ানো তার বাড়ি। বৃষ্টি আসলেই ও জোয়ারে পানি ঢুকে বাড়িতে।তার আর্তনাদ নোনা পানির জলে বেড়ে ওঠে। এতে তার জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে।

পাঁচ বছরের বেশী সময় ধরে জেলে পরিবারে দুর্দিন চললেও নাফনদীতে মাছ ধরার অনুমতি মিলছেনা। তখন থেকে টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অর্ধ শতাধিক নৌকা ঘাটে নোঙর করে আছে। কিছু কিছু নৌকা অকেজো হয়ে পড়ে ব্যবহার অনুপযোগি হয়ে পড়েছে তীরে।

শতাধিক জেলে বলেন, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কারণে এমনিতেই নাফ নদীতে নানা সময়েই মাছ ধরার উপর বিজিবির বিধি নিষেধ থাকে।

আরও পড়ুন : ফের স্কুলে গোলাগুলি, নারী নিহত

২০১৭ সালের আগস্টের দিকে হঠাৎ করে নাফ নদীতে মাছ শিকার বন্ধ হওয়ায় অভাব অনটে দিন পার করছেন কালা মিয়ার মতো নাফ নদীর ১০ হাজার জেলে। বর্তমানে শোকে দুঃখে তাদের জীবন যাপন চলছে। একবেলা খেতে পারলেও অপর বেলায় উপোস থাকতে হচ্ছে তাদের।

ইয়াবা ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের অজুহাতে টেকনাফের নাফ নদীতে মাছ শিকার বন্ধ থাকায় অর্ধাহারে অনাহারে জীবন কাটাচ্ছেন প্রায় ১০ হাজার জেলে পরিবার। এ জন্য অঘোষিত ভাবে পাঁচ বছর ধরে বন্ধ রাখা হয়েছে জেলেদের মাছ শিকার।কিন্তু ইয়াবা বন্ধ হচ্ছে না। এসব রোধকল্পের দোহাই দিয়ে চলছে।

আরও পড়ুন : রাজবাড়ীতে ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত বেড়ে ৭

টেকনাফের নাফ নদীর ১০ হাজার জেলে দীর্ঘ পাঁচ বছর পর্যন্ত অনুমতির অপেক্ষায় তবে তারা এ পেশা ছাড়তে পারবেন না বলে জানিয়ে বলেন, আমরা প্রয়োজনে বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দিব।

শাহপরীরদ্বীপ বেড়িবাঁধ সংলগ্ন যার বসবাস তার নাম জাইল্যা কবির(৪৫) তিনি বলেন,প্রায় পাঁচ বছর সময় ধরে নাফ নদীতে মাছ শিকার করতে পারছিনা। এতে হাজার টাকা লোন নিয়ে নৌকা ও জাল তৈরীতে ব্যয় হয়েছিল এই টাকাও শোধ করা কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়েছে।কিছুটা বউয়ের স্বর্ণ বিক্রি করে শোধ করছি।

আরও পড়ুন : অশ্লীল ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি

এমন অবস্থায় পড়ে গেছি আমরা ছেলে মেয়েদের দু’মুঠো বাদ পেট ভরে খাওয়া দূরহ হয়ে উঠেছে। ছেলে মেয়েদের লেখা পড়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। পাশাপাশি নৌকা ও জাল নষ্ট হয়ে গেছে অর্ধেক। রুজি রুজগারের উপকরণ নষ্ট হলে আত্মহত্যা ছাড়া কোনো পথ থাকবেনা।

এক বোট মালিকের স্ত্রী জুহুরা খাতুন (৪০) বলেন, রোহিঙ্গা ও ইয়াবার কারনে আমাদের মৌলিক অধিকার হরণ ও ক্ষুন্ন হচ্ছে। এটাতো পারেনা। আমরা এর সুষ্ঠু প্রতিকার চাই বলে জানান তিনি। ওই তিনজনই নয়, নাফ নদীর উপর নির্ভর হাজারো জেলে দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছর ধরে প্রশাসন নাফ নদীতে মাছ শিকার বন্ধ রেখেছে।

আরও পড়ুন : নোয়াখালীতে ঝোপে মিলল আগ্নেয়াস্ত্র

টেকনাফ পৌরসভার জালিয়া পাড়ার দুজন জেলে বলেন, ১০ কেজি চাল নিয়ে কদিন চলব আমরা নাফ নদীতে মাছ শিকার করে বাঁচতে চাই। নিষেধাজ্ঞার আগে বছরের পর বছর ধরে টেকনাফের নাফ নদীতে বিহিঙ্গি জাল পেতে জিবীকা নির্বাহ করে আসছি। কোন কালই এভাবে দীর্ঘদিন মাছ শিকার বন্ধ থাকেনি।

বিগত পাঁচ বছর ধরে নাফ নদে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। ফলে হাজার হাজার জেলে পরিবারে চলছে দুর্বিষহ যন্ত্রনা।

আরও পড়ুন : ময়লার গাড়ির ধাক্কায় নারীর মৃত্যু

প্রতিদিন লাখ লাখ ইয়াবা ঢুকছে সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে। মানবিক বিবেচনায় করে অন্তত দিনের বেলায় হলে ও নাফ নদে মাছ শিকারের অনুমতি দেওয়া হউক। তবে দু’মুঠো ভাত সুখে শান্তিতে খেতে পারব।

টেকনাফের নাফ নদীর জেলে পাড়া গুলো হচ্ছে,, টেকনাফ পৌরসভার জালিয়া পাড়া,কায়ুকখালী পাড়া, সদরের নাজির পাড়া, শাহপরীরদ্বীপের জালিয়া পাড়া, সাবরাংয়ের নয়া পাড়া, হ্নীলা ইউনিয়নের হোয়াব্রাং, নাটমুড়া পাড়াস্থ জেলে পাড়া,হোয়াইক্যংয়ের খারাইংগ্যাঘোনাসহ আরো কয়েকটি জেলে গ্রাম রয়েছে।

আরও পড়ুন : কেকে-র মৃত্যু অস্বাভাবিক, থানায় মামলা

টেকনাফ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর বলেন,টেকনাফের ৮০% মানুষের প্রধান জীবিকা আসে মাছ শিকার করে। দীর্ঘ ৫ বছর যাবত নাফ নদীতে মাছ শিকার বন্ধ করে দিয়ে অনাহারে জীবন চালাতে হচ্ছে জেলেদের।

এগুলো কারো চোখে পড়তেছেনা।ইয়াবার কারবারীর দোহাই দিয়ে গরিব জেলেরা না খেয়ে মারা যাবে, তাদের জীবিকা বন্ধ করে দিবে এইটা মেনে নেওয়া সম্ভব না।ইয়াবা কারবারীরা ঠিকই টাকা পয়সা দিয়ে মামলা থেকে মুক্তি পেয়ে ব্যবসা চলমান রাখছে কিন্তু গরিব জেলেদের কোন ঠাই হচ্ছে না।এই ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে অনুরোধ থাকবে কোন একটা ব্যবস্থা জন্য।

আরও পড়ুন : নৌকা মার্কার শোডাউন

২ ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার বলেন, সরকারের নির্দেশ আগের মতোই বলবৎ থাকায় এখন পর্যন্ত নাফ নদীতে মাছ শিকারের কোনো সুযোগ নেই। তবে অনুমতি দিলে মাছ শিকার করতে পারবে নাফ নদীর জেলেরা।

মাদক এবং মানবপাচার পাচার প্রতিরোধে বিজিবি সর্বদা জিরো টলারেন্স নীতিতে রয়েছে।

আরও পড়ুন : বেড়েই চলেছে মৃত্যু ও শনাক্ত রোগী

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কায়সার খসরু জানান, আমি এখানে নতুন কখন থেকেই নাফ নদীতে জাল না ফেলার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে আমার জানা নেই।

তবে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে চিঠি পাঠানো হবে।পাশাপাশি সেসব জেলেদের উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে থেকে সহযোগিতা করা হবে।

সান নিউজ/এইচএন

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়নে হাতিয়াতে উঠান বৈঠক

নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়াতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষ...

ইসলামী ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিশেষ যোগ্যতা মূল্যায়ন পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ

ইসলামী ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিশেষ যোগ্যতা মূল্যায়ন পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ ইসলাম...

বাগেরহাটের কলার বাম্পার ফলন

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে কলার বাম্পার ফলন হয়েছে। জমিতে বসেই কলার দাম ভালো পাওয়ায়...

ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে শাপলা চত্বরের ঘটনা

ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে শাপলা চত্বরের গণহত্যার ঘটনা এমন মন্তব্য কর...

একীভূত হচ্ছে না গণঅধিকার পরিষদ ও এনসিপি

সম্প্রতি গুঞ্জন উঠে দেশের তরুণদের নিয়ে গঠিত দল দুইটি একীভূত হওয়ার বিষয়ে। তবে...

শাপলা নয় এনসিপিকে বালতি-বেগুনসহ ৫০ প্রতীকের অপশন

শাপলা প্রতীক নয় বরং বেগুন, বালতিসহ ৫০টি প্রতীক থেকে জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এন...

২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আরও ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৩৯৬

ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ২৪ ঘণ্টায় আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর এইডস ম...

আ. লীগের ঘাপটি মেরে থাকা অনুচরেরা এখনো তৎপর

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজ...

লুটপাটের ভিডিও করায় সাংবাদিককে হেনস্তা 

লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য নুর উদ্দিন চৌধ...

গাজাগামী ত্রাণবাহী জাহাজ আটক, নিরাপত্তার দাবি জামায়াতের

গাজামুখী ত্রাণবাহী জাহাজ আটক করার ঘটনায় ইসরায়েলের ন্যাক্কারজনক ভূমিকার তীব্র...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা