ছবি: সংগৃহীত
সারাদেশ

২৪২ কোটি টাকার বাঁধ নির্মাণ অসমাপ্ত রেখেই হস্তান্তর  

এস. এম সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট: বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৫/১ পোল্ডারের মোরেলগঞ্জ-শরণখোলায় ৬২ কিলোমিটার টেকসই বেরিবাঁধ নির্মাণ কাজ অসমাপ্ত রেখেই হস্তান্তর করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবি, নিখোঁজ ৩৭

নির্মাণ কাজ পুরোপুরি শেষ হওয়ার আগেই হস্তান্তর এবং বাঁধের একাধিক স্থানে ভাঙন ও ব্লক ধসে যাওয়ায় অসন্তোষ বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে। বাঁধ রক্ষায় বর্ষার আগেই নদীশাসন করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

ভাঙন ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো রক্ষা এবং নদীর তীর প্রতিরক্ষা কাজ বাস্তবায়নে একটি প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ও প্রকল্প কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সুপার সাইক্লোন সিডরের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালে মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা এলাকায় বাঁধ নির্মাণের জন্য উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্প (সিইআইপি) নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার।

আরও পড়ুন: নারীকে নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল

বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে এ প্রকল্পের অধীনে ২৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৫/১ পোল্ডারের বলেশ্বর নদীর তীরে মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা উপজেলার বগী-গাবতলা পর্যন্ত ৬২ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ শুরু করে চায়না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান “দি ফার্স্ট ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যুরো হেনান ওয়াটার কনজারভেন্সি”।

প্রতিষ্ঠানটি একই প্রকল্পের অধীনে ৩৫/৩ বাগেরহাট সদর ও রামপাল অংশে ১০২ কিলোমিটার টেকসই বাঁধ নির্মাণ করেছে। ৩৫/১ পোল্ডারের শরণখোলা উপজেলার বগী, গাবতলা, মোরেলগঞ্জের আমতলা, ফাসিয়াতলাসহ সাতটি স্থানে ভাঙন ও বাঁধের ব্লক ধসে বিলীন হয়েছে।

এর মধ্যেই কাজ শেষ না হতেই ২০২৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর নির্মাণাধীন বাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেন সিইআইপি প্রকল্পের কর্তা ব্যক্তিরা

আরও পড়ুন: বাসের ধাক্কায় প্রাণ গেল আইনজীবীর

তবে ৭ টি স্থানের মধ্যে একটি স্থানে জরুরি ভিত্তিতে জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর কাজ শুরু করেছে বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড। বাঁধ হস্তান্তরের ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে দেখা দিয়েছে ভাঙন আতঙ্ক ও জমি-ঘর হারানোর ভয়।

তাদের অভিযোগ, বাঁধ নির্মাণের সময় মাটির বদলে বালু দেওয়ায় ঝুঁকিতে পড়েছেন তারা।

শরণখোলা উপজেলার উত্তর সাউথখালী গ্রামের হালিম শাহ বলেন, দুই পাশে মাটি দিয়ে মাঝখানে বালু দেওয়া হয়েছে, যার কারণে বাঁধে ফাটল ও ধস শুরু হয়েছে। শুনেছি কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু এখনো তিন কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন রয়েছে।

আরও পড়ুন: যাত্রীবাহী বাস ঢুকে পড়ল দোকানে

ইউনিয়নের গাবতলা এলাকার বাসিন্দা জাকির হোসেন বলেন, বলেশ্বর নদীতে ভাঙনে ভিটা-বাড়ি সব কিছু হারিয়েছি। ২০০৭ সালের সিডরে পরিবারের সদস্যদেরও হারিয়েছি। এরপরে আমাদের একমাত্র দাবি ছিল, টেকসই বেরিবাঁধ।

কিন্তু বাঁধের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই নিম্নমানের জিনিস এবং নদীশাসন না করার কারণে নতুন করে বাঁধের ব্লক ধসে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছি।

সাউথখালী ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রিয়াদুল পঞ্চায়েত বলেন, একটি টেকসই বেরিবাঁধের দাবি ছিল এলাকাবাসীর। বেরিবাঁধ হয়েছে ঠিকই।

তবে নদীশাসন না করার ফলে ভাঙন শুরু হওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। আগামী বৃষ্টি মৌসুমের আগে ভাঙন ঠেকানোর দাবি জানাচ্ছি।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক সাউথখালী এলাকার এক ব্যক্তি বলেন, কাজ নিয়ন্ত্রণ করেছেন চীনের লোকজন। যার কারণে আমরা কোনো খোঁজ-খবর নিতে পারিনি। যেভাবে ইচ্ছা, সেভাবে কাজ করে গেছেন। এছাড়া নদীর মধ্য থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ঝুঁকিতে পড়েছে বাঁধ।

আরও পড়ুন: ছয় বিভাগে বৃষ্টির আভাস

শরণখোলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রায়হান উদ্দিন শান্ত বলেন, বাঁধ নির্মাণ হওয়ায় মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছিল। কিন্তু নির্মাণ সম্পন্ন না করে কেন্দ্রীয়ভাবে হস্তান্তর ও বাঁধে ভাঙন শুরু হওয়ায় এলাকাবাসীর স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিআইপি প্রকল্পের দূরদর্শিতার অভাবে নদীশাসন না করেই বাঁধ নির্মাণের ফলে বাঁধটি হুমকির মধ্যে রয়েছে। খুব শিগগিরিই নদীশাসন করে বাঁধের অসম্পন্ন কাজ সম্পন্ন করার দাবি জানান এ জনপ্রতিনিধি।

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি সূত্র জানায়, প্রকল্পটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে হলেও এটি নিয়ন্ত্রণ করা হতো কেন্দ্রীয়ভাবে। প্রকল্পের বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্থানীয় কার্যালয় পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তরকে কিছুই জানানো হয়নি।

আরও পড়ুন: মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিসহ আটক ৫৯

স্থানীয় দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় না করে কাজ করায় তারাও কাজের বিষয়ে কোনো খোঁজ নিতে পারেননি। ফলে কাজে কিছুটা সমস্যা রয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড, বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান মোহাম্মদ আল বিরুনী বলেন, প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ায় ২০২৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর ঢাকায় প্রকল্পটি হস্তান্তর করা হয়। ৩৫/১ ও ৩৫/৩ পোল্ডারের ১০২ কিলোমিটার বাঁধ হস্তান্তর করা হয় এদিন।

পরে সরেজমিন পরিদর্শন করে ৩৫/১ পোল্ডারের সাতটি স্থানে ২.৬৮ কিলোমিটারে বাঁধ অতি ঝুঁকিপূর্ণ পাই। নদীর তীর প্রতিরক্ষামূলক কাজ বাস্তবায়নের জন্য ২১ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে প্রধান কার্যালয়ে একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবনাটি পাস হলে কাজ বাস্তবায়ন করা হবে।

সান নিউজ/এনজে

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

সাংবাদিকতায় সেরাদের অ্যাওয়ার্ড দিচ্ছে ডিএমএফ

নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামী জুন মাসে...

ভালুকায় কৃষকদের মাঝে উন্নয়ন সহায়তা প্রদান

ভালুকা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি: ময়মনসিংহের ভালুকায় ২০২৩-২৪ অ...

বিশ্বকাপের দল ঘোষণা মঙ্গলবার

স্পোর্টস ডেস্ক: সব জল্পনা-কল্পনার...

এসএসসি পরীক্ষায় ফেল করায় আত্মহত্যা

নোয়াখালীর প্রতিনিধি: নোয়াখালীর সদ...

গৃহকর্মী হত্যায় দম্পতির যাবজ্জীবন

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর মতিঝিলে শিল্পী বেগম (১১) নামে এক...

বিদ্যুৎস্পৃষ্টে কিশোরের মৃত্যু

জেলা প্রতিনিধি : শরীয়তপুরে টিনের একটি ঘর মেরামতের জন্য চালা...

বড়াইগ্রামে ধান, চাল ও গম সংগ্রহের উদ্বোধন

নাটোর প্রতিনিধি : নাটোরের বড়াইগ্রামে বোরো ধান, চাল ও গম সংগ্...

বিক্ষোভে উত্তাল কাশ্মির, নিহত ৪

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে নিত্যপণ্যে...

খাগড়াছড়িতে চোলাই মদসহ নারী আটক

আবু রাসেল সুমন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি : খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা