সকালে ঢিলেঢালা আর  বিকেলে উৎসবমুখর
শিল্প ও সাহিত্য
 বইমেলা 

সকালে ঢিলেঢালা আর বিকেলে উৎসবমুখর

হাসনাত শাহীন, বইমেলা থেকে : প্রকৃতিতে দিনভর বসন্তের বাতাস। সঙ্গে ছিলো চৈত্রের রোদের ঝলকানী। সন্ধ্যায় সেই রোদের ঝলকানির পরিবর্তে অমর একুশে বইমেলা প্রাঙ্গণ উজ্জ্বল থেকে আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে কৃত্রিম আলোর নানাবর্ণের আলোক ঝলকানিতে! আর তাতে অতীতের সকল বইমেলার চেয়ে সবচেয়ে বেশি পরিসরের এবারের বইমেলায় সৃষ্টি হয় অন্যরকম এক ভালো লাগার আবহ। যাতে মেতে ওঠে হাজার হাজার বইপ্রেমী আর দর্শনার্থী।

স্বাধীনতা স্তম্ভ সন্নিবেষ্টিত কৃত্রিম লেকের তিন পাড়ে ধরে একদিকে যেমন চলে ছবি তোলার হিড়িক অন্যদিকে বইমেলার প্রাণ বইয়ের স্টল-প্যাভিলিয়ন গুলোতে বাড়তে থাকে বেচা-বিক্রি; আর নতুনের সঙ্গে পুরোনো কি বই কিনবে তার দেখার ধুম। শুক্রবার (১৯ মার্চ) বিকেল থেকে মেলা শেষ হবার পূর্বমূহুর্ত পর্যন্ত মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেলা মেলার এমনই চিত্র।

অথচ মেলার এ দ্বিতীয় দিনের মেলার শুরু সময় (সকাল ১১টা) থেকে বিকেল পর্যন্ত মেলার চিত্র ছিলো একেবারেই ভিন্ন। কর্মব্যস্ত দিনের চেয়ে এমন ছুটির দিনের সকাল থেকেই মেলা জমে উঠার কথা থাকলেও
একেবারেই তা হয়নি। বিকেল পর্যন্ত দেখা মেলেনি তেমন লোক সমাগমের। বলতে গেলে সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত মেলা প্রাঙ্গণ এক প্রকার ফাকাই ছিলো। সে সময়ে অলস সময় কাটিয়েছেন বিভিন্ন প্রকাশনায় সংস্থার স্টল-প্যাভিলিয়নে নিয়োজিত বিপণন কর্মী ও অন্যান্যরা।

দ্বার উন্মোচনের পর থেকেই ঢিলেঢালা ভাব ছিল মেলার দুই প্রাঙ্গণ বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। করোনার কারণে এখনও শিশুপ্রহর চালু না হওয়াতে এদিনের সকালে তেমন দেখা যায়নি খুদে পাঠকদের। তবে, বিকেলের দিকে এই চিত্র কিছুটা পাল্টাতে থাকে। বাড়তে থাকে বইপ্রেমী আর দর্শনার্থীদের ভিড়। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকা লোকসমাগম সন্ধ্যার পরে হয়ে যায় জমজমাট।

এসময় মেলার বিভিন্ন স্টল-প্যাভিলিয়নের মালিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে মেলার আবহ নিয়ে কথা বললে, তারাও জানালেন- মেলার পরিবেশ দারুণ। আগের যেকোন বারের তুলনায় মেলার লাইটিং ভালো হয়েছে। কিন্তু আজ মেলার দ্বিতীয় দিন, বেচা-বিক্রি তেমন না হলেও সামনে ভালো হবে। মেলা জমে উঠবে।

মেলা ঘুরে দেখো গেছে সারাদিনের তুলনায় বিকেলে দিকে থেকে ভিড় বাড়লেও বইয়ের বিক্রি বাড়েনি বলে প্রকাশকদের হতাশাও কাটেনি। তবে, প্রথম দিকে বইয়ের বিক্রি কম এমনটি বলছেন অনেক প্রকাশক। এরই মধ্যে কথা হয় দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রকাশনা সংস্থা ঐতিহ্য প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন কাজলের সঙ্গে। তিনি সান নিউজকে বলেন, মেলা শুরুর আগে যে রকম শঙ্কায় ছিলাম, সেই শঙ্কা কিছুটা হলেও কেটে গেছে। ভাবছি লোকজন আসবেনা। সকাল থেকেই হতাশ ছিলাম। কিন্তু বিকেলের লোকসমাগম আমাকে আশাবাদি করে তুলেছে। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমাদের বিক্রি আশাব্যঞ্জক। চলমান করোনা পরিস্থিতিতে যতটা প্রত্যাশা করেছি তার চেয়ে বেশি বিক্রি করেছি। আশা করছি সামনের দিনগুলোতে আরো ভালো বিক্রি হবে।

একসময় আদর্শ প্রকাশনী এবং বর্তমানে বর্ণমালা প্রকাশনীর স্বত্তাধিকারী মামুন অর রশিদ বলেন, স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকাতে এবারের মেলায় অন্যান্যবারের তুলনায় লোক সমাগম কম হবে। আর লোক কম হলে বিক্রি কম হবে এটাই স্বাভাবিক। এদিকে বাংলা একাডেমি বারবার তাগাদা দেওয়া স্বত্বেও এখনও অনেক প্যাভিলিয়ন ও স্টলের নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। বইমেলার নীতিমালাতেও রয়েছে মেলা শুরুর আগেই নির্মাণ কাজ শেষ করতে হবে। কিন্তু বেশিরভাগ প্রকাশকই নীতিমালা মানছেন না।

তার এ কথার সূত্রধরে মেলা প্রাঙ্গণে খোঁজ নিলে দেখা মেলে- কথা প্রকাশনী, পুঁথি নিলয়, স্টুডেন্ট ওয়েজ, নালন্দা, অন্যপ্রকাশ, পার্ল পাবলিকেশন্সসহ অনেকগুলো প্রকাশনী এখনও স্টল ও প্যাভিলিয়নের নির্মাণ কাজ শেষ করতে পারেনি। নির্মাণকাজের বালুর স্তুপসহ নির্মাণ দ্রব্যসামগ্রী যত্রতত্র ছড়িয়ে থাকাতে মেলার পরিবেশের সৌন্দর্য্যরে হানি ঘটছে। আর হাতুড়ি বাটালের টুংটাং শব্দ মেলায় আগতদের বিরক্তির কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। জরুরি প্রয়োজনীয় টয়লেট ব্যবস্থা এখনও চালু করতে পারেনি মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট এলাকার প্রবেশ পথের পার্কিং ব্যবস্থাও এখন পর্যন্ত চালু হয়নি। এছাড়া আশ্রয় কেন্দ্র এবং বসার স্থানের নির্মাণ কাজ মেলার দ্বিতীয় দিনেও শেষ করতে পারেনি একাডেমি কর্তৃপক্ষ। বিগত বছরগুলোর মতো এবারের মেলায়ও বাংলা একাডেমি কথা রাখতে পারেনি। দ্বিতীয় দিন বিকেলে প্রকাশনা সংস্থা টাঙ্গণের সামনে কথা হয় রাজধানীর উত্তরা থেকে আগত ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের শিক্ষিকা কাজী সানজিদার সাথে। তিনি বলেন, ভেবেছিলাম করোনার কারণে লোকজন আসবেনা। কিন্তু মেলায় এসে আমার ধারণাই পাল্টে গেল। লোকসমাগম বাড়লেও বিক্রিও ধীরে ধীরে বাড়বে।


এদিকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মেলায় প্রবেশের নির্দেশনা থাকলেও অনেকেই তা মানছেন না। এছাড়া মেলার অভ্যন্তরে অনেকেই মাস্ক না পরে দিব্যি ঘুরে বেড়ালেও সেদিকে কারো কোন খেয়ালই ছিল না। খোদ পুলিশের ঊর্ধবতন কর্মকর্তা লেখক মোশতাক আহমেদই স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা করেননি। মাস্ক না পরা অবস্থাতেই অনিন্দ্য প্রকাশনীর সামনে বসে পাঠকদের অটোগ্রাফ দিচ্ছিলেন এই লেখক ও পুলিশের ঊর্ধবতন কর্মকর্তা।

মেলার নতুন বই : বাংলা একাডেমির জনসংযোগ উপ-বিভাগের তথ্য মতে, মেলার দ্বিতীয় দিনে বই প্রকাশিত হয়েছে ৫৫টি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বইগুলো হলো- গ্রন্থকুটির প্রকাশিত হাবীবুল্লাহ সিরাজীর কাব্যগ্রন্থ ‘বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত কবিতা’, আগামী প্রকাশনী এনেছে মোনায়েম সরকারের ‘স্বাধীন স্বদেশে জনকের প্রতিধ্বনি’ ও হুমায়ুন মালিকের উপন্যাস ‘মুজিব’, আসাদ মান্নানের কাব্যগ্রন্থ ‘এলিজি মুজিব নামে’, আবদুল গাফ্্ফার চৌধুরীর ‘শেখ কামাল যদি আজ বেঁচে থাকতেন’, অনন্যা প্রকাশ করেছে মুহম্মদ জাফর ইকবালের প্রবন্ধগ্রন্থ ‘মানুষ মানুষের জন্য এবং অন্যান্য’ এবং হরিশংকর জলদাশের ‘পৌরাণিক গল্প’, অনিন্দ্য এনেছে মোশতাক আহমেদের সায়েন্স ফিকশন ‘দ্য নিউ ওয়ার্ল্ড’।

মেলার মূল মঞ্চের আয়োজন : বিকেল ৪টায় মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী : বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ’ শীর্ষক আলোচনা। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুভাষ সিংহ রায়। আলোচনায় অংশ নেন সংসদ সদস্য আরমা দত্ত এবং নাসির উদ্দীন ইউসুফ। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন।

বক্তারা বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চ ১৯৭১Ñএ প্রদত্ত ১৮ মিনিটের ভাষণটি তার স্বভাবসুলভ তাৎক্ষণিক বক্তব্য ছিল, পূর্বে তৈরি করা বক্তৃতা নয়। এটি মূলত রাজনীতির কবিতা। এর মহত্ত্ব ও বিরাটত্বের কারণে ২০১৭ সনের অক্টোবরে ইউনেস্কো বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের অসাধারণ ভাষণটিকে পৃথিবীর অন্যতম ‘ওয়ার্ল্ড ডকুমেন্টারি হেরিটেজ’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে স্বাধীনতাকামী বাঙালি জাতিকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। ভাষণটির অসাধারণত্ব, এর স্বতঃস্ফূর্ততা, নির্ভীকতা, সম্যক উপলব্ধি ও তেজস্বী উচ্চারণ প্রকৃতপক্ষে বাঙালি জনগণের প্রথমবারের মতো স্বাধীনতার চরম ও পরম আকাক্সক্ষাকে বাক্সময় করে তোলে। সামগ্রিক বিচারে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণটি স্বাধীনতাকে সংজ্ঞায়িত করেছে, চূড়ান্তভাবে স্বাধীনতা অর্জনের দিকনির্দেশনা দিয়েছে, প্রকাশ করেছে স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানের রূপরেখা। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর বলিষ্ঠ প্রত্যয় আছে এ ভাষণের বাক্যগুলোর অন্তরে অন্তরে।

এদিকে, মেলার এ দ্বিতীয় দিন থেকে শুরু হয়ে মেলার ‘লেখক বলছি’ মঞ্চে লেখদের সঙ্গে আলোচনা অনুষ্ঠান। এ অনুষ্ঠানে নিজেদের বই নিয়ে আলোচনা করেন- রঞ্জনা বিশ^াস, আশরাফ জুয়েল এবং মঈনুল হাসান।

আগামীকাল শনিবারের মেলার অনুষ্ঠানসূচি : আগামীকাল শনিবার অমর একুশে বইমেলার তৃতীয় দিন। এদিনের মেলার প্রবেশ পথ খুলবে সকাল ১১টায় এবং বন্ধ হবে রাত ৯টায়। আর, এদিন বিকেল ৪ টা বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী : স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন আবুল মোমেন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন আবুল কাশেম এবং আবদুল মান্নান চৌধুরী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন ব্যারিস্টার এম. আমীর-উল ইসলাম।

সান নিউজ/ এইচ এস/বিএস

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী পান্নার গণসংযোগ

রাজীব চৌধুরী, কেশবপুর : আসন্ন কেশবপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে...

বোয়ালমারীতে স্বর্ণের কারিগরকে কুপিয়ে জখম

কামরুল সিকদার, বোয়ালমারী (ফরিদপুর) : ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে...

বজ্রপাতের সময় করণীয়

লাইফস্টাইল ডেস্ক: চলমান তাপপ্রবাহ...

নিজ্জর হত্যায় সন্দেহভাজন ৩ জন গ্রেফতার 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: কানাডায় বসবাসর...

ভালুকায় পানি ও স্যালাইন বিতরণ

ভালুকা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি : ময়মনসিংহের ভালুকায় প্রচন্ড...

কেমব্রিজ পরীক্ষায় ডিপিএস শিক্ষার্থীদের সাফল্য

নিজস্ব প্রতিবেদক: সম্প্রতি প্রকাশ...

ফরিদপুরে স্টপেজের দাবিতে মানববন্ধন 

বিভাষ দত্ত, ফরিদপুর: ফরিদপুরে রেল...

পাবনায় আন্তর্জাতিক মিডওয়াইফ দিবস পালিত

পাবনা প্রতিনিধি: ‘জলবায়ু স...

অস্ট্রেলিয়া গেলেন বিমানবাহিনী প্রধান

নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকারি সফরে অস্...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা