সোলাইমান ইসলাম নিশান: ক্ষুদ্র খামারি মোকলেস ব্যাপারি দীর্ঘদিন ধরে দেশি জাতের গরু পালন করেছেন। তিনি ভেবেছিলেন এবার কোরবানির হাটে গরু বিক্রি করে লাভের মুখ দেখবেন। কিন্তু বাজারে দাম যা উঠছে, তা শুনে হতাশ তিনি।
আরও পড়ুন: ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসানুল আলম
প্রতিটি গরুর দাম এক লাখ টাকার ওপরে উঠবে ভেবেছিলেন কিন্তু লক্ষ্মীপুর পৌর গরুর বাজারে প্রতিটা গরুর দাম উঠেছে খুবই কম এদিকে ক্রেতা নাই, বাজার শূন্য আজকে এক মাস ধরে এই বাজারে বসে আছে কিন্তু গরুর দাম কেউ ঠিক দামে বলছে না, আগের বার এই দিনে তার গরু ভালো লাভে বিক্রি হয়ে ছিল কিন্তু এইবার গরুর বাজারে কোন ক্রেতা নেই।
তাঁর দাবি, যেই দামে গরুগুলোর মূল্য নির্ধারণ করে ওই দামে বিক্রি করলে তাঁকে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা লোকসান দিতে হবে।
সোমবার (১৯ জুন) লক্ষ্মীপুর জেলার সবথেকে বড় গরুর হাট লক্ষ্মীপুর পৌর গরুর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, হাটে প্রচুর গরু উঠেছে। সেখানেই কথা হয় গরু বিক্রি করতে আসা খামারি মোকলেস ব্যাপারির সঙ্গে।
আরও পড়ুন: চিনির দাম বাড়াতে চায় মিলমালিকরা
মোকলেস ব্যাপারির বাড়ি লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডে। ওই হাটে গরু বিক্রি করতে আসা ১০-১২ জন বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁদের প্রত্যাশার চেয়ে ক্রেতারা অনেক কম দাম বলছেন।
গবাদিপশুর খাবার ও চিকিৎসা খরচ বেড়ে যাওয়ায় গতবারের তুলনায় এবার গরুর দাম বেশি রাখছেন তাঁরা। কিন্তু ক্রেতারা আগের দামেই কিনতে চান। এ জন্য গরু বিক্রি হচ্ছে কম।
হাটে আসা ক্রেতা-বিক্রেতাসহ স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাধারণত কোরবানির ঈদের তিন সপ্তাহ আগে থেকেই লক্ষ্মীপুরে পশুর হাটগুলোতে বেচাকেনা জমে ওঠে। কিন্তু এইবার কোরবানির ঈদের আর ১০ দিন বাকি থাকলেও লক্ষ্মীপুর পৌর গরু বাজারে বেচাবিক্রি তেমন জমে ওঠেনি। হাটগুলোতে প্রচুর গরুর সরবরাহ হলেও বিক্রি হচ্ছে কম।
আরও পড়ুন: আমদানি বাড়াতে চুক্তি স্বাক্ষর
খামারিরা জানান, গবাদিপশুর খাবারের দাম আগের তুলনায় অনেক বেশি বেড়েছে। আগে একেকটি দেশি গরু সারা বছর ধরে খাওয়া-চিকিৎসা ও লালন-পালন করতে খরচ পড়ত ১৮-২০ হাজার টাকা করে। কিন্তু গত এক বছরে লাফিয়ে লাফিয়ে গবাদিপশুর খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় একেকটি লালন-পালন করতে খরচ পড়েছে ৩০ হাজার টাকার ওপরে। এ জন্য তাঁরা গরুর দাম বেশি চাচ্ছেন।
হাটে গরু বিক্রি করতে আসা খামারি শহীদ রহমান বলেন, ‘৫০ টাকা কেজির খৈল হইচে ৬৫ টাকা, ৪০ টাকা গমের ভুসি ৪৮ টাকা, এক কাওন খড়ের দাম আগে ছিল ৩৫০ টাকা এখন কিনতে হচ্ছে ৫০০ টাকায়। এগুলা খরচ হিসাব করলেই বোঝা যাবে গরুর দাম এত বেশি কেন।'
অন্যদিকে ক্রেতারা বলছেন, গতবারের চেয়ে এবার প্রতিটি গরুর দাম ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা বেশি। বাজেট অনুযায়ী প্রত্যাশার গরু তাঁরা পাচ্ছেন না।
আরও পড়ুন: ছয় মাসের মুদ্রানীতি ঘোষণা
হাসিল আদায়ের ব্যাপারে ইজারাদার শাহাদাত হোসেন এর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, হাসিল আদায় নিয়ে ক্রেতা বিক্রেতাদের কোনরকম যাতে সমস্যা সৃষ্টি না হয় এজন্য লক্ষ্মীপুর পৌর মেয়র নির্দিষ্ট একটি কর ধার্য করে গেছেন।‘ক্রেতার কাছ থেকে ৫০০ টাকা এবং বিক্রেতার কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে ১০০ টাকা করে। অর্থাৎ প্রতিটি গরুর জন্য হাসিল আদায় করা হচ্ছে ৬০০ টাকা করে।’
লক্ষ্মীপুর পৌর মেয়র মোজাম্মেল হায়দার মাসুম ভূঁইয়া বলেন, গরু বিক্রেতাদের কোনরকম অসুবিধা যাতে না হয় এজন্য আমরা পাহারাদারের ব্যবস্থা করেছি, গরু চিকিৎসকের ব্যবস্থা করেছি এবং জাল টাকা চেনার জন্য টাকার মেশিন এনে দিয়েছি।
সান নিউজ/এইচএন