মতামত

আমাদের আমলাতন্ত্র ও সাংবাদিকতা

রাশেদ চৌধুরী:

আদালতে জামিন পেল আরিফ। এক বছরের কারাদন্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছিল কথিত ভ্রাম্যমান আদালত। অভিযোগ- মাদক, মানে আধা বোতল মদ আর দেড়শো গ্রাম গাঁজা পাওয়া গেছে আরিফের বাসায়।

১৫/১৬ জন আনসার সদস্যের এটা দল নিয়ে ২/৩ জন ম্যাজিস্ট্রেট মধ্যরাতে বাসায় হানা্ দিয়ে টেনে হিচড়ে পেটাতে পেটাতে নিয়ে যায় আরিফকে। আরিফের দোষ- কুড়িগ্রামের এক দোর্দন্ড প্রতাপশালী জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে একাধিক রিপোর্ট। অভিযোগ রয়েছে, আলোচিত জেলা প্রশাসক নিজে রাজাকার পরিবারের সদস্য হয়েও নিজের প্রশাসনিক ক্ষমতা আর ক্ষমতাসীন দলের কোন এক নেতার ভ্রাতৃবধূ হওয়ায় নিজেকে বেপরোয়া ভাবতে শুরু করেন।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের সাফাই- তারা সমাজকে মাদকমুক্ত করতে বদ্ধপরিকর। আর তাই বুঝি সাংবাদিক আরিফের বাসায় উদ্ধার করা হল আধা বোতল মদ আর গাঁজা। তবে মানুষের যা বোঝার ঠিকই বুঝল। এই নাটকের সবটুকুই দুর্বল স্ক্রিপ্টের আনকোরা গোছের অভিনয়। সামান্য ওটুকু মাদক উদ্ধারে মধ্যরাতে একজন সাংবাদিকের ঘরের দরজা ভেঙে এমন মহা আয়োজনে নির্যাতন! তবু ইচ্ছে হলেই আমলাতন্ত্রের প্রাথমিক স্তরেরও যে কেউই যে ক্ষমতা কিংবা আইনের অপব্যবহার করতে পারে তারই নজির সৃষ্টি হল। দেখানোর চেষ্টা চললো, আরিফ মাদকসেবী। আর যায় কোথায়? আইন বলে কথা! উলঙ্গ করে, চোখ বেঁধে অমানুষিক নির্যাতন করে তার মুখ থেকে আদায় করে নেয়া হল- এই মাদক তার কাছে ছিল। হাত-পা-মাথাসহ শরীরে তার অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেল।

ফুসে উঠলেন সাংবাদিক সমাজ থেকে সাধারন মানুষ। আমলাতন্ত্রের উচ্চ পদস্থ কর্তাব্যক্তিরা দেখলেন- বিপদ। তাই ডিসির বিরুদ্ধে সঙ্গে সঙ্গে এক হাত নেয়া। একদিনের তদন্তেই বেরিয়ে এল সেই ডিসির অপরাধ আর অপকর্মের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার সব প্রমান। প্রত্যাহার করা হল নিজেকে অসীম ক্ষমতার অধিকারী মনে করা সেই ডিসিকে। কিন্তু এখানেই থেমে গেলে কি সব অপরাধের শাস্তি হয়ে যাবে? শুধু সেই বেপরোয়া জেলা প্রশাসকই বা কেন? তার ভয়ঙ্কর অন্যায় আদেশ-নির্দেশ যেসব ম্যজিস্ট্রেট সুবোধ বালকের মতো পালন করেছেন অক্ষরে অক্ষরে, তারাও কি ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়ে যাবেন?

জামিনে বেরিয়ে এসে আরিফ জানিয়েছে, তাকে নাকি এনকাউন্টারে দেয়ারও আয়োজন চলেছে সেই মধ্যরাতে। তার আগে তাকে কালেমাও পড়তে বলা হয়েছে। সমাজে এ ধরণের ভয়াবহ ঘটনার সবটা হয়তো মিডিয়ায় আসে না। এর অভিঘাত সমাজকে কোন্ পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে তা বুঝতে কারোরই কষ্ট হয় না।

একজন জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে কুড়িগ্রামে যা ঘটে গেল, তাতে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন খোদ উচ্চ আদালত। আদালতের মন্তব্য, ‘একজন সাংবাদিককে ধরতে মধ্যরাতে তার বাসায় ৪০ জনের বিশাল বাহিনী গেলো, এ তো বিশাল ব্যাপার! তিনি কি দেশের সেরা সন্ত্রাসী?’

ওই ঘটনায় এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে রবিবার (১৫ মার্চ) বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এমন বিস্ময় প্রকাশ করেন।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, “মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর নিজের হাতে। ফলে দোষীদের বিরুদ্ধে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সেটি এখনই বলা ঠিক হবে না।“

প্রধানমন্ত্রীর ওপর দায় চাপিয়ে আমরা যেন সবকিছু ভুলে না যাই। সবকিছুতেই আমরা যেন প্রধানমন্ত্রীকে বিতর্কিত না করি। সবকিছুতেই আইনের দোহাই দিয়ে আমরা যেন সেই আইনকেই পায়ে না দলি।

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ইসলামী ব্যাংকের বার্ষিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা সম্মেলন অনুষ্ঠিত

নিজস্ব প্রতিবেদক : ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির উদ্যোগে বা...

চিকিৎসকের অবহেলায় প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ : মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলায় ম...

সাত পাকে বাঁধা পড়ছেন সন্দীপ্তা

বিনোদন ডেস্ক: টলিউডের জনপ্রিয় টিভি অভিনেত্রী সন্দীপ্তা সেন।...

গাজায় ইসরায়েলি অভিযানে নিহত ‍১৭৮

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : গাজায় শেষ হয়ে...

শনিবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রতি সপ্তাহের...

দিনাজপুরে ট্রাকে আগুন

জেলা প্রতিনিধি: দিনাজপুরের কাহারো...

শোল মাছের দোপেঁয়াজার রেসিপি

লাইফস্টাইল ডেস্ক: দেশি মাছগুলোর ম...

ঠাকুরগাঁওয়ে ২ জনের মনোনয়ন বাতিল

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঠাকুর...

নোয়াখালীতে ২ ভবনে ফাটল

নোয়াখালী প্রতিনিধি: ৫.৬ মাত্রার...

ইছামতী নদীর তীরে সাধুসঙ্গ উৎসব 

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ: মুন্...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা