নিজস্ব প্রতিবেদক: আজ ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দূর্গাপূজা শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন: দূর্গাপূজা উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা
মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে ৫ দিনব্যাপি এ উৎসব শেষ হবে।
দূর্গা শব্দের অর্থ হলো ব্যূহ বা আবদ্ধ স্থান। যা কিছু দুঃখ-কষ্ট মানুষকে আবদ্ধ করে, যেমন- বাধা-বিঘ্ন, ভয়, দুঃখ, শোক, জ্বালা, যন্ত্রনা থেকে দেবী দূর্গা ভক্তকে রক্ষা করেন।
আরও পড়ুন: মতিঝিল অংশের উদ্বোধনের তারিখ পেছাল
তবে শাস্ত্রকাররা দূর্গার নামে অন্য একটি অর্থ করেছেন। তারা বলেন, দুঃখের দ্বারা যাকে লাভ করা যায়, তিনিই দূর্গা। তিনি দুঃখ দিয়ে মানুষের সহ্যক্ষমতা পরীক্ষা করেন। তখন মানুষ অস্থির না হয়ে তাকে ডাকলেই তার কষ্ট দূর করেন দেবী।
হিন্দু পূরাণ অনুযায়ী, দূর্গাপূজার সঠিক সময় হলো বসন্তকাল। কিন্তু বিপাকে পড়ে রামচন্দ্র, রাজা সুরথ ও বৈশ্য সমাধি বসন্ত পর্যন্ত অপেক্ষা না করে শরতেই দেবীকে অসময়ে জাগ্রত করে পূজা করেন। তখন থেকে অকাল বোধন হওয়া সত্ত্বেও শরৎকালেই দূর্গাপূজা প্রচলিত হয়ে যায়।
বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকামতে, জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী এবার ঘোড়ায় চড়ে কৈলাশ থেকে মর্ত্যালোকে আসবেন। এতে প্রাকৃতিক বিপর্যয়, রোগ-শোক ও হানাহানি-মারামারি বাড়বে।
আরও পড়ুন: দুর্গাপূজা ঐক্য সৃষ্টিতে ভূমিকা পালন করে
তিনি বিদায়ও নেবেন ঘোড়ায় চড়ে। ফলে জগতে মরণব্যাধি ও প্রাণহানির মতো ঘটনা বাড়বে।
ইতিমধ্যে দেশজুড়ে পূজাকে আনন্দমুখর করে তুলতে বর্ণাঢ্য প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। সারা দেশে এখন উৎসবের আমেজ বইছে। ঢাকঢোল, কাঁসা ও শঙ্খের আওয়াজে মুখরিত হয়ে উঠেছে বিভিন্ন মণ্ডপ।
রামকৃষ্ণ মিশনের পূজার নিঘন্টে বলা হয়, আজ সকাল ৬ টা ১০ মিনিটে কল্পারম্ভ, বোধন আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে উৎসবের প্রথম দিন ষষ্ঠী পূজা সম্পন্ন হবে। এ দিন সকাল থেকে চন্ডিপাঠে মুখরিত থাকবে সকল মণ্ডপ এলাকা।
আরও পড়ুন: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা
শনিবার (২১ অক্টোবর) উৎসবের দ্বিতীয় দিন সকাল ৬ টা ১০ মিনিটে মহাসপ্তমীর পূজা অনুষ্ঠিত হবে। রোববার (২২ অক্টোবর) অষ্টমীর পূজা অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৬ টা ১০ মিনিটে। এ দিন বেলা ১১ টায় অনুষ্ঠিত হবে কুমারী পূজা এবং রাত ৮ টা ৬ মিনিটে সন্ধিপূজা শুরু হবে।
সোমবার (২৩ অক্টোবর) সকাল ৬ টা ১০ মিনিটে নবমীর পূজা শুরু হবে। মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) দশমী পুজা শুরু সকাল ৬ টা ৩০ মিনিট।
এ দিন সকাল ৯ টা ৪৯ মিনিটের মধ্যে পূজা সমাপন ও দর্পণ বিসর্জন হবে এবং সন্ধ্যায় আরাত্রিকের পর প্রতিমা বিসর্জন ও শান্তিজল গ্রহণের মধ্য দিয়ে এ উৎসব শেষ হবে।
আরও পড়ুন: আজ ঢাকার বায়ু অস্বাস্থ্যকর
দশমীর দিন বিকেলে প্রতিবছরের ন্যায় রাজধানীতে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির নেতৃত্বে পলাশীর মোড় থেকে বিজয়া শোভাযাত্রা শ্রীশ্রী ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির হয়ে পলাশী বাজার, জগন্নাথ হল, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, দোয়েল চত্বর, হাইকোর্ট, বঙ্গবাজার, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ভবন, গোলাপ শাহ্ মাজার, গুলিস্থান মোড়, নবাবপুর রোড, রায় সাহেব বাজার, বাহাদুর শাহ পার্ক হয়ে বুড়িগঙ্গা নদীর ওয়াইজ ঘাটে বিভিন্ন পূজা মণ্ডপে প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হবে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রনাথ পোদ্দার জানান, এবার সারা দেশে ৩২ হাজার ৪০৮ টি মণ্ডপে দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকায় পূজা অনুষ্ঠিত হবে ২৪৬ টি মণ্ডপে।
আরও পড়ুন: কাল রাষ্ট্রীয় শোক পালন করবে বাংলাদেশ
গত বছর দেশের ৩২ হাজার ১৬৮ টি মন্দিরে এবং রাজধানীতে ২৪১ টি মন্দিরে পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
দূর্গাপূজা উপলক্ষে ঢাকাসহ দেশের প্রতিটি পূজা মণ্ডপের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ, আনসার, বিজিবি, র্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া প্রায় প্রতিটি মণ্ডপে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে।
আরও পড়ুন: দেশজুড়ে ফের বৃষ্টির আভাস
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ইতিমধ্যে শারদীয় দূর্গাপূজা যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়, এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ সদর দফতর, ধর্ম মন্ত্রণালয়, মহানগর পুলিশ কমিশনার ও নৌ-পুলিশের সাথে নেতৃবৃন্দের বৈঠক হয়েছে।
ঢাকায় কেন্দ্রীয় পূজা উৎসব হিসেবে পরিচিত ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মণ্ডপে পূজার পাশাপাশি ভক্তিমূলক সঙ্গীতানুষ্ঠান, বস্ত্র বিতরণ, মহাপ্রসাদ বিতরণ, আরতি প্রতিযোগিতা, স্বেচ্ছা রক্তদান ও বিজয়া শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।
আরও পড়ুন: দেশজুড়ে ফের বৃষ্টির আভাস
এছাড়া রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ পূজা মণ্ডপ, গুলশান-বনানী সার্বজনীন পূজা পরিষদ মণ্ডপ, রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ী আশ্রম, বরোদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির ও শ্মশান, সিদ্ধেশ্বরী কালিমাতা, ভোলানাথ মন্দির আশ্রম, জগন্নাথ হল, ঋষিপাড়া গৌতম মন্দির, শাখারী বাজারের পানিটোলা মন্দিরসহ অন্যান্য মণ্ডপে দুর্গোৎসবের ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
সান নিউজ/এনজে