কেমন ছিলো ম্যারাডোনার ক্যারিয়ার
খেলা

কেমন ছিলো ম্যারাডোনার ক্যারিয়ার

ক্রীড়া ডেস্ক : সর্বকালের সেরা ফুটবলার কে? খুব বেশি ফুটবলারের মধ্যে আলোচনাটা সীমাবদ্ধ নেই। ব্রাজিলের পেলে এবং আর্জেন্টিনার দিয়েগো ম্যারাডোনা। ১৯৮৬ সালের আগ পর্যন্ত আসনটা এককভাবে দখলে ছিল পেলের।

কিন্তু ১৯৮৬ মেক্সিকো বিশ্বকাপে যে জাদু দেখিয়েছিলেন ম্যারাডোনা, তাতে করে সেই আসন ভাগাভাগি হয়ে গেছে। ভবিষ্যতে আর কোনো দাবিদার আসবে কি না সন্দেহ। কিন্তু অবিসংবাদিতভাবে পেলে-ম্যারাডোনার মতো আর কোনো তারকার এখনও জন্ম হয়নি।

দিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনার জন্ম ১৯৬০ সালের ৩০ অক্টোবর। বুয়েন্স আয়ার্স রাজ্যের একটি শহর লেনাসের এভিটা হাসপাতালে। লাতিন আমেরিকার আর আট-দশটা ফুটবলারের গল্পের মতোই ম্যারাডোনার উঠে আসার গল্পটা।

খুবিই দরিদ্র পরিবারের সন্তান ছিলেন। জীবিকার সন্ধানে তার মা-বাবা কোরিয়েন্তেস রাজ্য থেকে পাড়ি জমিয়ে আসেন লেনাসে। তবে তিনি বেড়ে ওঠেন বুয়েন্স আয়ার্সের এক উপশহর ভিলা ফিওরিটোয়। মা-বাবার প্রথম চার কন্যার পর জন্ম হয় ম্যারাডোনার। তারপর আরও দুটি ভাই রয়েছে ম্যারাডোনার। একজনের নাম হুগো, অন্যজনের নাম রাউল। দুজনই ছিলেন পেশাদার ফুটবলার।

আট বছর বয়সেই ম্যারাডোনার ফুটবল প্রতিভা ফুটে ওঠে। বাড়ির পাশের ক্লাব এস্ট্রেলা রোজার হয়ে খেলতে গিয়ে নজরে পড়েন ট্যালেন্ট হান্টিং স্কাউটদের। বুয়েন্স আয়ার্সের দল আর্জেন্টিনো জুনিয়রের হয়ে ১২ বছর বয়সে প্রথম বিভাগের একটি ম্যাচের প্রথমার্ধের পর মাঠে নামেন ম্যারাডোনা। ওই অর্ধেকটা সময়ে যে ঝিলিক তিনি দেখিয়েছিলেন, সেটাই তাকে বিশ্বসেরার আসনে বসার প্রথম পথ দেখিয়ে দিয়েছিল।

ব্রাজিলিয়ান প্লে মেকার রিভেলিনো এবং ইংল্যান্ডের ক্লাব ম্যানইউ উইঙ্গার জর্জ বেস্ট ছিলেন তার আদর্শ। তাদের দেখেই খেলা শিখেছিলেন বলা যায় ম্যারাডোনা।


১৯৭৬ সালের ২০ অক্টোবর, ১৬তম জন্মদিনের ১০দিন আগে, পেশাদার ফুটবলার হিসেবে নাম লেখান ম্যারাডোনা। খেলেন আর্জেন্টিনো জুনিয়র্সের হয়েই। ১৬ নম্বর জার্সি পরে মাঠে নামেন তিনি। একইসঙ্গে আর্জেন্টিনা প্রিমিয়ার ডিভিশনে সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে নাম লেখান।

মাঠে নামার মাত্র কয়েক মিনিট পরই হুয়ান ডোমিঙ্গো ক্যাবরেরাসের পায়ে লাথি দিয়ে বসেন। এরপরই একটি নাটমেগে বোকা বানান প্রতিপক্ষ ফুটবলারকে। যা তাকে সঙ্গে সঙ্গে খ্যাতি এনে দেয়। সবার মুখে নাম ছড়িয়ে পড়ে তার।

১৪ নভেম্বর, ১৯৭৬ সালে প্রথম প্রিমিয়ার ডিভিশনে মারপ্লাটোন্সের বিপক্ষে গোল করেন ম্যারাডোনা। ১৯৭৬ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত আর্জেন্টিনো জুনিয়র্সে মোট পাঁচ বছর কাটান তিনি। এ সময় ১৬৭টি ম্যাচ খেলে গোল করেন ১১৬টি। ১৯৮১ সালে যোগ দেন আর্জেন্টিনার বিখ্যাত ক্লাব বোকা জুনিয়র্সে। এ সময় তাকে রিভারপ্লেট আমন্ত্রণ জানিয়েছিল, সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক দিয়ে নেয়ার জন্য। কিন্তু বোকা জুনিয়র্স ছিল তার স্বপ্নের ক্লাব। এ কারণে রিভারপ্লেটে আর যাননি।

তবে বোকা জুনিয়র্সে মাত্র একবছর খেলেন ম্যারাডোনা। পুরো এক মৌসুমে ৪০ ম্যাচে ২৮ গোল করেন তিনি। ১৯৮২ বিশ্বকাপে খেরার পর আমন্ত্রণ আসে বার্সেলোনা থেকে। ওই সময় বিশ্বরেকর্ড সৃষ্টি করা ফি ৭.৬ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে বার্সায় যোগ তিনি।

ন্যু ক্যাম্পেও বেশিদিন ছিলেন না। মাত্র দুই মৌসুম। এখানে এসে নিজের জাত চেনাতে শুরু করেন। তবে দুই মৌসুমে খেলেছেন কেবল ৩৬ ম্যাচ। গোল করেছেন ২২টি। তবে ম্যারাডোনাই প্রথম বার্সা ফুটবলার, যিনি এল ক্ল্যাসিকোয় গোল করার পর রিয়াল মাদ্রিদ সমর্থকদের কাছ থেকে হাততালি পেয়েছিলেন।

১৯৮৪ সালে আবারও বিশ্বরেকর্ড গড়েন ম্যারাডোনা। তিনি বার্সা থেকে নাপোলিতে যোগ দেন ১০.৪৮ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে। ম্যারাডোনার ক্যারিয়ারের সোনালী সময়টা পার করেন নাপোলিতেই। ১৯৮৪ থেকে খেলেন ১৯৯১ সাল পর্যন্ত। ১৮৮ ম্যাচ খেলে গোল করেছে ৮১টি।

তবে নাপোলির হয়ে তিনি জিতেছেন দুটি সিরি-আ শিরোপা। একটি কোপা ইতালিয়া। একটি উয়েফা কাপ (পরে যেটা উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ) এবং একটি সুপার কোপা ইতালিয়া শিরোপা। বার্সার হয়ে জিতেছিলেন একটি কোপা ডেল রে, একটি কোপা ডি লা লিগা এবং একটি সুপারকোপা এসপানা।

নাপোলি থেকে ১৯৯২ সালে যোগ দেন স্প্যানিশ ক্লাব সেভিয়ায়। এখানে এক মৌসুম খেলে ২৬ ম্যাচে মাত্র পাঁচ গোল করে চলে যান আর্জেন্টিনার নিওয়েল ওল্ড বয়েজে। সেখানে ক্যারিয়ারের ছন্দপতনই ঘটে তার। এক মৌসুমে মাত্র পাঁচ ম্যাচ খেলেছেন। গোল একটিও নেই। সর্বশেষ ১৯৯৫ সালে আবার ফিরে যান বোকা জুনিয়র্সে। ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত খেলেন এই ক্লাবে। ৩০ ম্যাচ খেলে করেন মাত্র সাত গোল। ১৯৯৭ সালে অবসর নেন তিনি ফুটবল থেকে।

১৯৭৭ সালে, ১৭ বছর বয়সে আর্জেন্টিনা অনূর্ধ্ব-২০ দলের হয়ে অভিষেক হয় ম্যারাডোনার। ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত এই দলের হয়ে খেলেন তিনি। ১৫ ম্যাচে গোল করেছেন আটটি। ১৯৭৮ সালে নিজ দেশে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে খেলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বয়স কম বলে কোচ লুই সিজার মেনোত্তি তাকে সুযোগ দেননি। যদিও মারিও কেম্পেসদের হাত ধরে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জিতেছিল আর্জেন্টিনা।

১৯৭৮ বিশ্বকাপের আগেই জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক ঘটেছিল ম্যারাডোনার। মাত্র ১৬ বছর বয়সে হাঙ্গেরির বিপক্ষে খেলতে নামেন তিনি। ১৯৭৯ ফিফা যুব বিশ্বকাপে খেলেন ম্যারাডোনা। ওই টুর্নামেন্টেই বুঝিয়ে দেন, তিনি কী ধরনের তারকা। ফাইনালে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপক্ষে তার অসাধারণ নৈপুণ্যে ৩-১ গোলে জয় লাভ করে আর্জেন্টিনা। ছয় ম্যাচে ছয় গোল করেন তিনি। হলেন সেরা গোলদাতা।

১৯৮২ বিশ্বকাপে আর তাকে বাদ দেয়া যায়নি। স্পেন বিশ্বকাপে খেলেন তিনি। প্রথম ম্যাচ খেলন বেলজিয়ামের বিপক্ষে। দ্বিতীয় রাউন্ডে গিয়ে ব্রাজিল এবং ইতালির কাছে হেরে বিদায় নিতে হয়েছিল ম্যারাডোনা এবং মারিও কেম্পেসদের। ১৯৮৬ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা মেক্সিকোয় খেলতে যায় ম্যারাডোনা জাদুকরি সম্ভাবনা নিয়েই।

পুরো বিশ্বকাপ মাতিয়েছিলেন তিনি। বিশেষ করে কোয়ার্টার ফাইনালে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে করেছিলেন দুই গোল। তার করা গোল দুটিই ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই করে নেয়। প্রথমটি করেছিলেন হাত দিয়ে। যে কারণে এটাকে বলা হয় ‘দ্য হ্যান্ড অব গড’। অন্যটি করেছিলেন মাঝ মাঠ থেকে এককভাবে টেনে নিয়ে গিয়ে। সেই গোলটারই নাম হয়ে যায় ‘গোল অব দ্য সেঞ্চুরি’।

১৯৯০ বিশ্বকাপে তার নেতৃত্বেই খেলতে যায় আর্জেন্টিনা। শিরোপা ধরে রাখার লক্ষ্যে দলকে নিয়ে গিয়েছিলেন ফাইনাল পর্যন্ত। কিন্তু সেবার পশ্চিম জার্মানির কাছে হেরে যেতে হয় তাদের। তার গোড়ালির ইনজুরি পুরো দলকেই ভুগিয়েছিল।

১৯৯৪ বিশ্বকাপ তার জন্য ট্র্যাজেডি। প্রথম দুটি ম্যাচ খেলার পর মাদকাসক্ত হওয়ার কারণে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকাপের বাকি অংশে তাকে খেলতেই দেয়া হয়নি। পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল আর্জেন্টিনায়। ফলে সেই বিশ্বকাপই ছিল তার শেষ বিশ্বকাপ। আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে সেই বিশ্বকাপে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটিই ছিল তার শেষ।

আর্জেন্টিনার হয়ে মোট ৯১টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। গোল করেছেন ৩১টি। ১৯৯৭ সালে ফুটবলকে বিদায় জানানোর আগেই উদ্দাম জীবনযাপন আর মাদকাসক্ত হওয়ার কারণে বারবার হাসপাতালে যেতে হয়েছে তাকে। অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন বারবার তার জীবনকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছিল।

১৯৯৪ সালেই কোচ হিসেবে অভিষেক হয় টেক্সটিল মান্দিউর হয়ে। ১৯৯৫ সালে কোচ ছিলেন রেসিং ক্লাবের। দীর্ঘ বিরতির পর ২০০৮ সালে তাকে নিয়োগ দেয়া হয় আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের কোচ হিসেবে। কিন্তু ২০১০ বিশ্বকাপে বাজে পারফরম্যান্স করায় তাকে বরখাস্ত করা হয়।

২০১১ সালে কোচ হন আল ওয়াসলের। ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ছিলেন দেপোর্তিভো রেইস্ট্রার সহকারী কোচ। ২০১৭ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ছিলেন ফুজাইরাহর কোচ। ২০১৮ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ছিলেন মেক্সিকান ক্লাব ডোরাডস ডি সিনালোয়ার কোচ। সর্বশেষ ২০১৯ থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ছিলেন আর্জেন্টাইন ক্লাব জিমন্যাসিয়া ডি লা প্লাতার কোচ।

সান নিউজ/এম | Sun News

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে স্বতন্ত্রসহ চারজনের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ

মুন্সীগঞ্জে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীসহ চারজন প্রা...

মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের ১১০ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন

মফস্বল ও প্রান্তিক পর্যায়ে কর্মরত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, হামলা, হ...

নাসার চাঁদে অভিযানের দায়িত্বে স্পেসএক্স না ব্লু অরিজিন?

পরবর্তী চাঁদ অভিযান কর্মসূচিতে কোন প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করা হবে নাসার নতুন প্রশ...

নোয়াখালীতে বিএনপির কার্যালয়ে আ. লীগের হামলা, আহত ৪

নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়াতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির কার্যাল...

গজারিয়াতে হোটেলে অনৈতিক কার্যক্রমের অভিযোগে নারীসহ তিনজন আটক

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়াতে একটি আবাসিক হোটেলে অনৈতিক কার্যক্রমের অভিযোগে ২ নারীসহ...

গুলিবিদ্ধ এনসিপি নেতা: কুষ্টিয়া সীমান্ত সিল, চেকপোস্ট ও টহল জোরদার

খুলনায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শ্রমিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা মো. মোতাল...

গজারিয়াতে হোটেলে অনৈতিক কার্যক্রমের অভিযোগে নারীসহ তিনজন আটক

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়াতে একটি আবাসিক হোটেলে অনৈতিক কার্যক্রমের অভিযোগে ২ নারীসহ...

ঢাকা-১০ আসনের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করলেন আসিফ মাহমুদ

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১০ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন ফর...

মুন্সীগঞ্জে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনা: শীতবস্ত্র বিতরণ

বিএনপির চেয়ারপার্সন, সাবেক তিন বারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্ত...

খালাস চেয়ে রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি মামুনের আপিল

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন জুলাই গণ-অভ্যুত্...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা