পরিবেশ
বিশ্ব খরা ও মরুকরণ প্রতিরোধ দিবস

বৃক্ষ রোপনে ফিরবে প্রকৃতি

সান নিউজ ডেস্ক: প্রতিনিয়ত বিশ্ব পরিস্থিতি ও ব্যবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। এ পরিবর্তনের ধারায় কখনও ঘূর্ণিঝড়, কখনও ভূমিকম্প আবার কখনও অতিবৃষ্টি-অনাবৃষ্টি, কখনও বা বন্যা, রোগ-বালাই দুর্যোগ আকারে দেখা দিচ্ছে। মারা যাচ্ছে মানুষ, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মাঠ ও মাঠের ফসল। বাড়ছে খাদ্য সংকট।

ঘরবাড়ি মিশে যাচ্ছে মাটির সঙ্গে। মানুষ হারাচ্ছে তার মাথা গোঁজার ঠাঁই। নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে জলবায়ুর কু-প্রভাব বিশ্বে মরুকরণের একটি অন্যতম সমস্যা।

পৃথিবীর মোট জলাভূমির ৭০ শতাংশ ইতোমধ্যে মরুকবলিত হয়ে পড়েছে। যার পরিমাণ পৃথিবীর মোট ভূমির চার ভাগের এক ভাগ। নিষ্কাশনে অব্যবস্থাপনা ও লবণাক্ততার কারণে সেচের আওতাধীন আবাদি জমির বিশাল অংশ অবক্ষয়ের মুখে। মরুকরণ আগামীর পৃথিবীর জন্য এক বিশাল হুমকি হওয়ায় মরুকরণ বিস্তার রোধে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। আজ ১৭ জুন বিশ্ব খরা ও মরুকরণ প্রতিরোধ দিবস। বাংলাদেশে প্রথম ১৯৯৫ সালে বিশ্ব মরুকরণ প্রতিরোধ দিবস পালিত হয়।

উত্তরাঞ্চলের রাজশাহীকে কেন্দ্রবিন্দু ধরে নগর থেকে ৪০ কিলোমিটার পশ্চিমে কাঁকনহাটে জাতীয়ভাবে প্রথমবারের মতো এই দিবস পালিত হয়। বিশেষত রাজশাহী অঞ্চল এ সমস্যাকবলিত অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত। তবে মরুকরণ রোধে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় সরকারের পরিবেশ বান্ধব বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম বিশেষভাবে গৃহীত হয়েছে। যা প্রশংসারও দাবিদার। মরুকরণ বিস্তার রোধে অধিক বৃক্ষরোপণই হচ্ছে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

জাতিসংঘের পক্ষ থেকে ১৯৭৫ সালে প্রথমবারের মতো খরা ও মরুকরণের প্রতি সোচ্চার হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়। ১৯৭৭ সালে নাইরোবিতে বিশ্ব মরুকরণবিরোধী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৯২ সালে রিও ডি জেনিরোয় অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের পরিবেশ ও উন্নয়ন-বিষয়ক সম্মেলনের পরপরই মরুকরণ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক কনভেনশন গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়।পরে ১৯৯৪ সালের জুন মাসে কনভেনশনের দলিল চূড়ান্ত হয়। এ কনভেনশনে ৫০টি দেশ কর্তৃক অনুমোদিত হওয়ার পর ১৯৯৬ সালের ২৬ ডিসেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয় দলিলটি।

বাংলাদেশও এ কনভেনশন অনুমোদন করে। পরবর্তী সময়ে খরা ও মরুকরণ সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে সচেতন করে তুলতে ১৭ জুন পালন করা হয় বিশ্ব খরা ও মরুকরণ প্রতিরোধ দিবস।

জাতিসংঘ বলেছে, পৃথিবীর প্রায় দেড়শ’ কোটি মানুষ বেঁচে থাকার জন্য ক্ষয়িষ্ণু ভূমির ওপর নির্ভরশীল। আর পৃথিবীর অতি দরিদ্রদের ৪২ ভাগই বাস করে ক্ষয়ে যাওয়া এলাকায়, যারা মারাত্মক নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে বাস করছে। এ ভূমিক্ষয় জলবায়ু পরিবর্তনকে আরও ত্বরান্বিত করেছে, যা শুধু আমাদের বেঁচে থাকার জন্যই বিপদের কারণ নয় বরং এটি আমাদের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্যও হুমকিস্বরূপ।

মরুকরণ বিশ্বব্যাপী মাথাব্যথার বড় কারণ। তেমনি আমাদেরও উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ রয়েছে। দিনে দিনে কমছে গাছপালা, বন-জঙ্গল। শুকিয়ে যাচ্ছে নদীগুলো। অন্যান্য জলাধারের অবস্থাও সঙ্গিন। দিন দিন যেমন আমাদের ফসলি জমি কমছে, একই সঙ্গে খরায় উর্বরতা হারাচ্ছে জমি। সাম্প্রতিক সময়ে এক গবেষণায় দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকিপূর্ণ তিনটি দেশের একটি বাংলাদেশ। এ অবস্থায় পরিবেশের প্রতি আমাদের মনোযোগী হতেই হবে।

বাংলাদেশের সামগ্রিক অবস্থা বিশ্লেষণ করে বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, আমাদের দেশও মরুকরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তারা বলেছেন, মরুকরণের প্রধান দুটি বিষয় হচ্ছে-

একটি বিস্তৃত এলাকা ছেড়ে যদি সেখানকার মাটি অনুর্বর হতে থাকে এবং যদি নদী-নালা, খাল-বিল শুকিয়ে যেতে থাকে ও বৃষ্টির অভাব ঘটে। বিগত কয়েক দশক ধরে এ লক্ষণগুলো বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে বাংলাদেশে। এ পরিস্থিতিতে কৃষিজমি সংরক্ষণ, কৃষিকাজে জৈব সার ব্যবহারে কৃষকদের উৎসাহিতকরণে দেশব্যাপী ব্যাপক প্রচারণা, অপরিকল্পিত নগরায়ণ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা, নদীর পানিপ্রবাহে যথাযথ উদ্যোগ, খাল-বিল ও জলাভূমিগুলো সংরক্ষণে গুরুত্ব দেয়ার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন তারা।

অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে দেশের কৃষি জমির উর্বরতা শক্তি হ্রাস পাচ্ছে। সাধারণ হিসাবে মাটির জৈব পদার্থের পরিমাণ যদি পাঁচ ভাগ থাকে, তাহলে তা উর্বর মাটি। দেশের কৃষিজমিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ বর্তমানে এক শতাংশ। রাসায়নিক সার ব্যবহার ও শাকসবজির বদলে ধান চাষ বেশি হওয়ায় মাটি গুণাগুণ হারিয়ে অনুর্বর হয়ে পড়ছে। বর্ষা বা শীত মৌসুমে ধঞ্চে, কলাই প্রভৃতি চাষ করলে কৃষি জমির উর্বরতা বাড়ত।

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় পরিচালিত এক জরিপ অনুযায়ী, দেশে মোট নদীর সংখ্যা ৩১০টি। এর মধ্যে মৃত ও মৃতপ্রায় নদীর সংখ্যা ১১৭টি। এদিকে সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিইউএস) থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, সাধারণ হিসাবে গত ৪০ বছরে শুধু তিনটি প্রধান নদী- পদ্মা, মেঘনা, যমুনাতেই এ পর্যন্ত বিলীন হয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার হেক্টর জমি। আর তার বিপরীতে নতুন ভূমি জেগেছে মাত্র ৩০ হাজার হেক্টর। প্রতিবছর কোনো-না-কোনো নদীর শাখা ধীরে ধীরে পলি পড়ে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কোনো কোনো নদী দখল হয়ে যাচ্ছে দখলকারীদের হাতে। পরিকল্পনার অভাবেই নদীমাতৃক বাংলাদেশ থেকে এভাবে নদী হারিয়ে যাচ্ছে।

বিশ্ব খরা ও মরুকরণ প্রতিরোধ দিবস বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করুক। খরা ও মরুময়তা প্রতিরোধসহ কৃষিজমি রক্ষায় ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র যার যার অবস্থান থেকে সক্রিয় হোক- এ প্রত্যাশা।

সান নিউজ/এমএম

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ডাকাতির প্রস্তুতিকালে শ্রমিক লীগ নেতাসহ ৩ জন গ্রেপ্তার

মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলায় ডাকাতির প্রস্তুতিকালে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ শ্রমিক লী...

নেত্রকোনা–৩ আসনে মনোনয়ন পেলেন মাওলানা শেখ শামছুদ্দোহা

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নেত্রকোনা–৩ (কেন্দুয়া–আটপাড়া)...

রেমিট্যান্স অ্যাওয়ার্ডে প্রথম হলো ইসলামী ব্যাংক

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়...

কুষ্টিয়ায় শীতার্তদের মাঝে বিজিবির শীতবস্ত্র বিতরণ

কুষ্টিয়ার মিরপুরে শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ...

নোয়াখালীতে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিল

মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) রাতে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় সাবেক প্রধানমন্ত্র...

খেলতে গিয়ে সৌরবিদ্যুতের তারে গলায় ফাঁস, শিশুর মৃত্যু

ঝালকাঠির রাজাপুরে সৌরবিদ্যুতের তারে গলায় ফাঁস লেগে সাফওয়ান নামে ৪ বছরের এক শি...

কভার্ড ভ্যান–বাসের মাঝে পিষে মোটরসাইকেল চালক নিহত

ঝালকাঠি বরিশাল–খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়কের কৃষ্ণকাঠি এলাকায় বাস ও কভার্ড ভ্য...

সাংবাদিকসহ ৪ পরিবারকে অবরুদ্ধ রাখার অভিযোগ

মাদারীপুরে মাহবুবুর রহমান বাদল নামের এক সিনিয়র সাংবাদিককে ১৫ দিন ধরে অবরুদ্ধ...

জনগণ নির্বাচনমুখী হলে কেউ বাধা দিতে পারবে না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

দেশের জনগণ যখন নির্বাচনমুখী হবে, তখন কোনো শক্তিই নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে প...

ভারতের জার্সি গায়ে পাকিস্তানি খেলোয়াড়, ফেডারেশনের জরুরি সভা

পাকিস্তানের একজন কাবাডি খেলোয়াড় বাহরাইনের একটি টুর্নামেন্টে ভারতের জার্সি গায়...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা